Berger Paint

ঢাকা, সোমবার   ২০ মার্চ ২০২৩,   চৈত্র ৬ ১৪২৯

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
মাদারীপুরে ১৯ যাত্রী নিহতের ঘটনায় বাস মালিকের বিরুদ্ধে মামলা পশ্চিমবঙ্গে অ্যাডিনোভাইরাসের থাবা, ১৯ শিশুর মৃত্যু আর্জেন্টিনাকে ১৩ গোল দিয়ে কোপার শিরোপা জিতল ব্রাজিল দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটির কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ শেরপুরে ব্রীজের অভাবে দূর্ভোগে ১০ গ্রামের অর্ধলাখ মানুষ বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য পদক পাচ্ছে র‍্যাবের কুকুর ‘চিতা’ আজিমপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় যুবক নিহত

ডায়াবেটিসে ভয় নয়, প্রয়োজন সচেতনতা

হাসান মাহমুদ শুভ

প্রকাশিত: ৬ মার্চ ২০২৩  

হাসান মাহমুদ শুভ। ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি

হাসান মাহমুদ শুভ। ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি

 

'ডায়াবেটিস' শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। মূলত এটি একটি মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এক্ষেত্রে শরীর পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদন ও তা ব্যবহার করতে পারে না। মোটকথা, আমরা যখন খাবার খাই, তখন আমাদের প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন নিঃসৃত হয়। ইনসুলিনের কাজ হলো, যে খাবার খাচ্ছি, সেটার অতিরিক্ত গ্লুকোজ কমিয়ে দেওয়া। যখন ইনসুলিনের উৎপাদন কমে যায় বা ইনসুলিন উৎপাদন হওয়ার পরও যখন কাজ করতে পারে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত গ্লুকোজ থাকে। সেই অবস্থাকে আমরা ডায়াবেটিস বলে থাকি।

 

ডায়াবেটিস মূলত দুই প্রকার যথা-
টাইপ-১ ডায়াবেটিস, টাইপ-২ ডায়াবেটিস।

 

টাইপ-১ ডায়াবেটিস এ  আক্রান্ত রোগীদের শরীরে জন্মগত কারণেই  ইনসুলিন যথেষ্ট পরিমাণে তৈরি হয় না। অপরদিকে জন্ম পরবর্তী কোনো স্বাস্থ্যগত অবস্থা, জীবনধারা অথবা খাদ্যাভ্যাসের কারণে দেহে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি না হলে অথবা পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হলেও সেটি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে সেটিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলে থাকি।

 

উভয় ধরণের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেই যদি শরীরে ইনসুলিনের অভাব হয়, তাহলে শরীরে বাহির থেকে ইনসুলিন যোগান দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাই টাইপ ১ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে ইনসুলিন নেওয়া আবশ্যক। এক্ষেত্রে নিয়মিত ইনসুলিন না নিলে জীবন ঝুঁকির মুখে পরবে। তারপর একটা পর্যায়ে গিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা অনেক বেড়ে গিয়ে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হতে পারে। কিটোঅ্যাসিডোসিস ডায়াবেটিস এর একটি জটিলতা। সময়মতো চিকিৎসা না নিলে মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন নিতে হবে । এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত কিছু সংখ্যক রোগীর চিকিৎসায় ইনসুলিন নিতে হয়। শরীরে ইনসুলিনের ভারসাম্য ফিরে আসলে রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

কারো কাছে ডায়াবেটিস একটি অতি সাধারণ রোগ আবার কারো কাছে জটিল। বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিনদিন ভয়াবহ রুপ নিচ্ছে।

 

ডায়াবেটিসকে অবহেলার চোখে দেখার কোন সুযোগ নাই। বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর এক জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। সময়ের কালক্রমে এ পরিসংখ্যান দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে।

 

আইডিএফ ডায়াবেটিস এটলাস-২০২১ এর তথ্যানুযায়ী— ২০২১ সালে ৫৩ দশমিক ৭ কোটি মানুষ (প্রতি ১০ জনে ১ জন) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন। ২০৩০ সালের মধ্যে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৬৪ দশমিক ৩ কোটিতে এবং ২০৪৫ সালে ৭৮ দশমিক ৩ কোটিতে পৌঁছাতে পারে। আমরা কতটা ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে যাচ্ছি বলা অপেক্ষা রাখে না।

 

তাছাড়া, ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যার কারণে দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়ে হার্ট অ্যাটাক, কিডনি ফেইলিউর, অন্ধ হয়ে যাওয়া, পায়ে পচন, এমনকি পা কেটে ফেলা পর্যন্ত লাগতে পারে। এত বড় বৈশ্বিক এই স্বাস্থ্য সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধে দরকার জনসচেতনতা এবং জনসম্পৃক্ততা বিকল্প নেই। পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, শহরের তুলনায় গ্রাম অঞ্চলের দিকে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার মাত্রা বেশি। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।

 

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সুশৃঙ্খল নিয়মমাফিক জীবনযাপন করতে হবে। নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সচেতনতার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জীবনযাত্রার মান ও খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রমও করতে হবে। নিয়মিত হাঁটাচলা ও ব্যায়াম করতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া ও কোমল পানীয় বর্জন করতে হবে। মিষ্টি জাতীয় খাবার যথাসম্ভব পরিহার করতে হবে। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছুদিন পরপর রক্তের শর্করা নির্ণয় করতে হবে। পাশাপাশি, অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ধূমপান ও তামাক বর্জন করতে হবে।

 

নিয়মমাফিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার মানের পরিবর্তনের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। ডায়াবেটিসকে ভয় নয়, সচেতনতার মাধ্যমে জয় করা সম্ভব।


লেখকঃ
হাসান মাহমুদ শুভ
শিক্ষার্থী,এমবিবিএস ৩য় বর্ষ
ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, গাজীপুর।

এই বিভাগের আরো খবর