Berger Paint

ঢাকা, সোমবার   ০৫ জুন ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ২২ ১৪৩০

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
গরমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ৪ দিন বন্ধ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে এরদোয়ানের কুশল বিনিময় ইউক্রেনের আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার বিমান হামলা শীতলক্ষ্যায় জাহাজের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে দগ্ধ ৮

থাই জাতের তরমুজ চাষে সফল নড়াইলের চাষিরা

নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২  

ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি।

ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি।

ড়াইলে বর্ষাকালীন হাইব্রিড থাই জাতের তরমুজ চাষে সফল চাষিরা। নড়াইল কালিয়া উপজেলার চাষিরা তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন। কম খরচে বেশি ফলন এবং দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান চাষি। তাদের সফলতা দেখে  তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেকেই। কৃষি বিভাগ হাইব্রিড থাই জাতের তরমুজ আবাদে কৃষকদের পরামর্শ, বিনামূল্যে সার, বীজ, নগদ অর্থ সহায়তাসহ সার্বিক সহযোগিতা করে আসছেন ।

 


কৃষি অফিস ও চাষিদের সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর কালিয়া উপজেলায় সাত হেক্টর জমিতে বর্ষাকালীন তরমুজের চাষ হয়েছে। ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি ১৫ টন। কালিয়া পৌরসভার ছোট কালিয়ার গোবিন্দ নগর এলাকার বিলে, সালামাবাদ ইউনিয়নের ভাউরীর চরে আর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ‘ভক্তডাঙ্গা’ বিলের অসংখ্য মৎস্য ঘেরের পাড়ে মাচায় মাচায় বিশেষ জাতের বারোমাসি তরমুজ আবাদ করা হয়েছে। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে এশিয়ান-২, কানিয়া, মধু মেলা ও ব্ল্যাক বেরি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এসবের মধ্যে এশিয়ান-২ বাংলাদেশি জাত। যা ওজনে প্রায় ৮-৯ কেজি হয়। এছাড়া মধু মেলা জাতের তরমুজের বাইরের অংশ হলুদ আর ভেতরের অংশের রঙ লাল, কানিয়া জাতের তরমুজের বাইরের অংশ ডোরাকাটা সবুজ আর ভেতরের অংশের রঙ হলুদ। এসব জাতের তরমুজ দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। বিশেষ করে কানিয়া জাতের তরমুজ বেশি সুস্বাদু। এই তরমুজ চাষে খরচ কম, একর প্রতি মাত্র ১৫-২০ হাজার টাকা, কিন্তু বিক্রি হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বাজার দরও বেশ চড়া থাকায় কৃষকও খুশি।

 


অসময়ের তরমুজ চাষে কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। তরমুজ চাষে সফল জেলার নবগঙ্গা ডিগ্রি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কালিয়া উপজেলার ভাউরীর চরের বাসিন্দা শেখ কামাল হোসেন। বর্ষাকালে এই তরমুজ চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে খুলনার ডুমুরিয়া থেকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নেন। এরপর সে অনুযায়ী গত বছর গাছবাড়িয়া বিলের ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ২০০টি গাছ রোপণ করে মাত্র ১৫ হাজার খরচ করে ১ লাখ টাকা বিক্রি করেন। এবার তিনি ৭ একর মৎস্য ঘেরের পাড়ে এক বিঘার মতো জমিতে তরমুজ আবাদ করেছেন। বৈরি আবওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি ১০০০টি চারা রোপণ করেছেন। এরপর সঠিক সময়ে সার ব্যবস্থাপনা, মাচা তৈরি, ডগা কর্তন, ডগা মাচায় উঠিয়ে দেওয়া ও তরমুজের গায়ে জাল পরিয়ে টানিয়ে দেওয়াসহ যাবতীয় কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে শেষ করেন তিনি এরপর ৩৫ দিনের মাথায় ফুল ও ফল আসে এবং ৭০দিনের মাথায় প্রথম বার ফল সংগ্রহ শুরু করেন তিনি। এরপর প্রতি সপ্তাহে ফল সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন তিনি। তার মোট খরচ হয়েছে ৪০-৫০ হাজার টাকা। আর এখন পর্যন্ত বিক্রি করেছেন ২ লাখ টাকার মতো। মধু মেলা জাতের তরমুজ তিনি পাইকারিই বিক্রি করেছেন ৭০ টাকা কেজি দরে। এবছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও লক্ষাধিক টাকা লাভ হতো বলেও জানান ঐ কৃষক।

 


উপজেলায় অসময়ে তরমুজ চাষে সবচেয়ে সফল কালিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রদীপ কুমার বর্মণ জানান, বর্ষাকালে সঠিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ বছর কিছুটা দেরিতে ১৫০বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ে তিনি ১২ হাজার চারা রোপণ করেছেন। জমি প্রস্তুত, চারা লাগানো, মাচা তৈরি করা ও পরিচর্যাসহ খরচ হচ্ছে আনুমানিক ৫-৭ লাখ টাকা। ৩৫ দিনের মাথায় ফল আসে ৬০ দিনে সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি তরমুজের ওজন গড়ে প্রায় ৪ কেজির মতো হওয়ায় প্রায় ২ লাখ কেজি তরমুজের ফলন হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে স্থানীয় বাজারে ৪০-৫০ টাকা পাইকারি কেজি দরে তরমুজ বিক্রি তিনি প্রায় কোটি টাকা লাভ করতে পারবেন বলে আশো করছেন।

 

আরেক সফল তরমুজ চাষি ইলিয়াছাবাদ ইউনিয়নের হেদায়েতপুর গ্রামের বাসিন্দা কালু শিকদার, তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শে এবছর প্রথমবারের মতো ভক্তডাঙ্গা বিলের ১৬বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ের জমিতে অসময়ের তরমুজ চাষ করেছেন। তিনি ২০০টি চারা রোপণ করেছেন। প্রতিটি চারায় দু’টি করে তরমুজ রয়েছে। সে হিসাবে বাগানে ৪০০টি তরমুজ রয়েছে। প্রতিটি তরমুজের ওজন প্রায় ৪ কেজি হওয়ায় প্রায় ১ হাজার ৬০০ কেজি তরমুজ এখন তার জমির মাচায় ঝুলছে। মোট খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। স্থানীয় বাজারে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে তরমুজ বিক্রি করছেন। বাজারমূল্য ঠিক থাকলে প্রায় লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি করতে পারবেন।

 


তরমুজ চাষ নিয়ে কালিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবির কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘তরমুজ এখন আর মৌসুমি ফল নয়, সারা বছরই তা চাষ করা যায়। বীজ বপনের ৪০-৫০ দিনের মাথায় ফুল আসে, আর ফুল থেকে পরিপুষ্ট তরমুজ হতে সময় লাগে ৭০-৮০ দিন। মোট ৮০-৯০ দিনের জীবনকাল। বাইরে অংশ কালো রং ও ভেতরের অংশ টকটকে লাল ব্লাক বেরি জাতের এ তরমুজ ওজনে প্রায় ৩-৪ কেজি হয়ে থাকে। এ উপজেলায় প্রথম উচ্চফলনশীল ফসল হিসেবে এই তরমুজের চাষে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। ফলে এলাকার অনেকে চাষিই আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এই তরমুজ উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে বেশি লাভবান হচ্ছে কৃষক।

 

এই বিভাগের আরো খবর