Berger Paint

ঢাকা, সোমবার   ০৫ জুন ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ২২ ১৪৩০

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
গরমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস ৪ দিন বন্ধ রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে এরদোয়ানের কুশল বিনিময় ইউক্রেনের আবাসিক এলাকায় রাশিয়ার বিমান হামলা শীতলক্ষ্যায় জাহাজের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে দগ্ধ ৮

পানি আতঙ্কে রাত কাটে দ্বীপ জনপদ সাতক্ষীরার গাবুরাবাসীর

এম,এ মামুন, সাতক্ষীরা

প্রকাশিত: ২৯ আগস্ট ২০২০  

ছবি- প্রতিদিনের চিত্র

ছবি- প্রতিদিনের চিত্র


সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সর্ব দক্ষিণে সুন্দরবনের ভিতরে দ্বীপ জনপদ গাবুরা ইউনিয়ন।যার চার পাশে রয়েছে উত্তাল নদী এবং সবুজ ঘন সুন্দরবন। প্রায় ৪৫ হাজার জনসংখ্যার বসবাস এখানে। বর্তমানে তাদের রাত কাটে পানি আতঙ্কে। চারপাশে  অথৈ সাগরের জোয়ারের লোনাপানি। রয়েছে ২৭ কিলোমিটার মাটির বেড়িবাঁধ। ১৮ শতকের শুরুর দিকে সুন্দরবন আবাদ করে গড়ে ওঠে এ জনপদ। প্রথম দিকে তেমন বেড়িবাঁধের দরকার না হলে ১৯৬০ এর দশকে অন্যান্য উপকূলীয় এলাকার সাথে গাবুরায়ও বেড়িবাঁধ হয়। উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নিয়ন্ত্রণাধীন। শুরু থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর মাটি দ্বারা সংস্কার করা হয়ে আসছে সকল বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধ স্থানীয় বাসিন্দাদের অন্যতম চলাচলের পথ। গাবুরার অধিবাসীরা অধিকাংশ গরীব ও ভুমিহীন। বিত্তশালীরা অনেকে শহরে বসতবাড়ি করেছে। পর্যাপ্ত স্কুল, কলেজ ও চিকিৎসা সেবা না থাকায় অনেক পিছিয়ে আছে এখানকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজিক পরিবেশ।এতসব অপ্রাপ্তির পরও আবহমান বাংলার সাথে তাল মিলিয়ে বসবাস করে আসছে সুন্দরবন, নদী ও সাগরের উপর জিবীকা নির্ভরশীল এখানকার জনগোষ্ঠি।

তবে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে সামুদ্রিক ঘুর্ণিঝড় ও জলচ্ছ্বাস দিনের পর দিন গেড়ে বসেছে। একদিকে জলচ্ছ্বাসে নষ্ট হচ্ছে মাটির বেড়িবাঁধ। অন্যদিকে উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলায় ব্যর্থতায় পর্যবেশিত সরকারি কর্তৃপক্ষ। কয়েক দশক বেড়িবাঁধের সংস্কার না করে যেখানে ভাঙন সেখানে যত্রতত্র পটি দেওয়া হচ্ছে মাত্র। কিন্তু বারবার গুছিয়ে ওঠা পরিবেশকে তছনছ করছে সিডর, আইলা, নার্গিস, ফনী, বুলবুল ও আম্পান নামের ঘুর্নিঝড়। কর্তৃপক্ষের অবহেলার পাশাপাশি বেড়িবাঁধ ধ্বংসে কম দায়ী নয় স্থানীয় চিংড়ি চাষীরা। বেড়িবাঁধ নষ্ট করে ও সরকারী পানিসরবরাহের সুইজ গেট,খাল ও খাসজমিগুলো ব্যবহার করে প্রভাবশালী মহল ১৯৯০ সালের পর থেকে শুরু করে গোটা উপকূলে লবণ পানির চিংড়ি চাষ। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বারবার আন্দোলন করলেও সরকারি সাহায্য আসে প্রভাবশালীদের পক্ষে। লবণ পানির চিংড়ি চাষের কারণে সবচেষে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন বিত্তের পরিবার। যাদের অল্প বসতভিটা বা জায়গা আছে চিংড়িচাষীদের কারণে তাদের ভিটায় ও জায়গায় লবণাক্ততার কারণে সম্ভব হচ্ছেনা সবজী, ফসল ফলানো। এখন আর গাবুরায় ৭০% দরিদ্র জনগণ চায়না চিংড়ি চাষ। অভিশপ্ত চিংড়ি চাষের কারণে গোটা উপকূলের সবুজ প্রকৃতি আজ ধুসর। ধ্বংস হচ্ছে গ্রামীন বৈচিত্র্য। বার বার গড়ে তোলা পরিবেশ ধ্বংস হওয়ায় স্থানীয়দের ধারণা বেড়িবাঁধ ধ্বংস হওয়ার কারণে লবণপানির মৎসচাষ ভিন্ন ফসল ফলানো সম্ভব হবেনা। দেশের সচেতন মহল পরিবেশ রক্ষায় সচেতনতা দেখালেও এখানে তারা বাদ প্রতিবাদ করছেনা নিজেদের জড়িত থাকার কারণে। তবে বেড়িবাঁধের অবৈধ ব্যবহার, খাসজমি, সুইসগেট ও সরকারি খাল ব্যবহার করে মৎসচাষের বিরুদ্ধে সরকারী আইনের কার্যকারীতাই রক্ষা করতে করতে পারে এই অবহেলিত জনপদকে।

উপকূলবাসীর একান্ত দাবী ও দাবীর যৌক্তিক কারণ দর্শাইয়ে দু’দশক ধরে কথিত জলবায়ু সহনশীল টেকসই বেড়িবাঁধ তৈরী করার আবেদন করা হচ্ছে।

একদিকে দুর্যোগসহনশীল বাঁধ অন্যদিকে বেড়িবাঁধের ভিতরে লবণপানির মৎসচাষ বন্ধ করা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নে সহস্রাধিক মৎস ঘের আছে, সব মৎস ঘেরগুলি অবৈধভাবে লবণপানি উত্তোলন করে ও সরকারি খাসজমি ও খাল দখল করে তৈরী করা হয়েছে বেশিরভাগ। গাবুরায় ৯টি স্লুইস গেট এর মধ্যে ৫ টি, নতুন কালভার্ট ৪টি, সরকারি বড় খাল ৭টির মধ্যে ৪টি, ছোট বড় শতাধিক সরকারি খাল অবৈধ দখলে আছে মৎসচাষীদের। নদীর চরে নাম মাত্র সরকারি ইজারা নিয়ে প্রাকৃতিক বনায়ন কেটে তৈরী করা হয়েছে প্রায় শতাধিক একর জায়গা জুড়ে মৎসঘের ও বসতবাড়ি।

স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড, ভূমিকর্মকর্তা, বনবিভাগ শুধুমাত্র তদন্ত করেই ক্ষ্যান্ত, এসব মহলে অর্থনৈতিক দুর্নিতীর অসংখ্যা উপখ্যান জনমুখে। প্রভাবশালী মৎসচাষীদের কারণে নিরবতায় পর্যবেশিত হয় সব আন্দোলন। সরকারের উচ্চ মহল এবং পরিবেশবাদী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলকে সরেজমিনে পরিদর্শনের আহ্বান জানিয়েছেন উপকূলের মানুষ।

এই বিভাগের আরো খবর