Berger Paint

ঢাকা, শনিবার   ০৩ জুন ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩০

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
রাজধানীতে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা কানাডা প্রবাসী নারীর মরদেহ উদ্ধার পে-স্কেল না হলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এরদোয়ানের ফোন বিএনপি নেতা খায়রুল কবিরের বাড়িতে আগুন নাইজেরিয়ার কাছে হেরে বিদায় স্বাগতিক আর্জেন্টিনার বিদ্যুতের ঘাটতি ৩০০০ মেগাওয়াট, সারা দেশে লোডশেডিং

বিশ্ব মা দিবস- সব মায়েদের জন্য অফুরন্ত ভালবাসা

মো. জিল্লুর রহমান

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৩  

মো. জিল্লুর রহমান। ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি

মো. জিল্লুর রহমান। ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি


মাএকটি সুমিষ্ট শব্দ এবং পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর ডাক। মানুষ মা ডাকে খুঁজে পায় সীমাহীন শান্তি। এই শব্দের গভীরতা যে কত, তা সবাই জানেন। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে আমরা মাকে স্মরণ করি। মা সম্পর্কে বিশ্বের বিভিন্ন মনীষী বিভিন্ন উক্তি  করেছেন, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। বাস্তব জীবনে মা আমাদের প্রতি যে ত্যাগ স্বীকার করেন, তা অন্য কেউ করেন না। তাই মায়ের আসন সবার উপরে। প্রত্যেকটি ধর্মে মাকে সর্বোচ্চ আসনে উন্নীত করা হয়েছে। ইসলামে “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত” বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই মা যেমন আমাদের জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তেমনি তাদের সুখে-দুঃখে ও পাশে থাকাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

 

১৪ মে বিশ্ব মা দিবস। প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার এ দিবসটি পালন করা হয়। সে হিসেবে এ বছর (১৪ মে, রোববার) পৃথিবীর সর্বত্রই যথাযোগ্য মর্যাদা বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হচ্ছে দিবসটি। যদিও মায়ের ভালোবাসা কোনো নির্ধারিত দিনক্ষণের ওপর নির্ভর করে না। মা যেখানেই থাকুক মায়ের ভালোবাসা সন্তানের হৃদয়ে থাকবে নিরন্তর সবসময়। জানা যায়, ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ মে আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মার্কিন কংগ্রেসে মে মাসের দ্বিতীয় রোববারকে আন্তর্জাতিক মা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। পরে ১৯৬২ সালে দিবসটি আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এরপর থেকে দিবসটি বিশ্বব্যাপী মে মাসের দ্বিতীয় রোববার পালিত হয়ে আসছে।

 

মায়ের ভালোবাসা যেমন কোনো দিনক্ষণ দিয়ে হয় না; তেমনি মায়ের ভালোবাসা হয় সম্পূর্ণ শর্তহীন। পৃথিবীর শুরু থেকে আজ অবদি মাকে নিয়ে রচিত হয়েছে সুন্দর সুন্দর অসংখ্য ছন্দ, কবিতা, গান, ছড়া, উপন্যাস আরও কতকি! ‘মা’ নামের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আলাদা শক্তি, স্নেহ ও ভালবাসা। একজন মা মানেই একটি প্রতিষ্ঠান, স্নেহ ও ভালবাসার সাগর। মা একটি পৃথিবী এবং তার থেকেও অধিকতর কিছু। একজন মাকে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চালিয়ে নিতে হয় সংসার নামক জাহাজটিকে। বাবাকে বলা হয় সংসারের বটবৃক্ষ আর মাকে বলা হয় চালক শক্তি বা অক্সিজেন। আয়-উপর্জনের মূল চালিকা শক্তি বাবার হাত ধরে আসলেও চালকের দায়িত্ব মাকে-ই পালন করতে হয়। বাবা সাধারণত তার কাজের মধ্যে ডুবে থাকেন। আর অল্প উপার্জনের সংসারে জোরা-তালি দিয়ে এগিয়ে নেয় মা। এ কলসির পানি ও কলসিতে ঢেলে সংসারটাকে টেনে টুনে চালিয়ে নেয়ার মন্ত্র জানা থাকে মায়েদের। শত অভাবেও সন্তানদের টের পেতে না দেয়ার চেষ্টায় পালন করেন অভিজ্ঞ অভিনেত্রীর ভূমিকা। অসুস্থ মা-ই নিয়ম করে খবর নেন সুস্থ সবার। কর্মব্যস্ততায় ডুবে থাকা সবার পাশে ভেলার মতো ভেসে থাকেন মা।

 

শিশুকালই হচ্ছে ভবিষ্যত জীবনের ভিত্তিভূমি। এই ভিত্তিকে সুদৃঢ় করে ভবিষ্যতের আদর্শ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে মায়ের ভূমিকাই প্রধান ও মুখ্য। একজন সচেতন, বিজ্ঞ মা-ই পারেন তার সন্তানকে যথার্থ মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিতে। একজন শিশুর সবচেয়ে বড় সাথী হচ্ছে তার মা। মা শুধু একজন জন্মদাত্রী জননীই নন, সুন্দর চরিত্রবান সন্তান তৈরী করার কারিগরও বটে।

 

মায়ের গর্ভে থাকার সময় থেকেই শিশু তার মাতৃসত্তাকে অনুধাবন, অনুকরণ ও অনুসরণ করে। মায়ের সব কাজ-কর্ম, চিন্তা-চেতনা, আবেগ-অনুভূতি, আচরণ, মূল্যবোধ শিশুর ওপর প্রভাব ফেলে। কারণ শিক্ষাকালীন নব্বইভাগ সময়ই শিশু মায়ের কাছেই থাকে। শিশুর প্রথম ও প্রকৃত শিক্ষক ও মা। একজন শিশুর শিক্ষার হাতেখড়ি মায়ের কাছ থেকেই হয়। মা হচ্ছে একজন শিশুর আলোকবর্তিকা। মাই প্রথম শিশুকে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। কথা বলা শেখার সময় মা সারাক্ষণ তার সন্তানের সঙ্গে কথা বলে থাকেন। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসহ বিভিন্ন জিনিসের নাম শিখিয়ে থাকেন। যৌথ পরিবারে কাজটি অনেকটা সহজ হলেও একক পরিবারে মাকেই দায়িত্বটা পালন করতে হয়।

 

শিশুকাল মায়ের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং মায়ের মুখের ভাষাই শিশু প্রথম রপ্ত করতে থাকে। এমনকি শৈশবকাল থেকেই শিশু মায়ের প্রত্যেকটি আচরণ এবং কথাবার্তা অনুকরণ করতে শেখে। কারণ শিশুরা অত্যন্ত অনুকরণ প্রিয়। সবকিছুকে অনুকরণ করতে সে ভালোবাসে। তাই মাকে খুব সতর্কতার সঙ্গে এ সময়ে শিশুর লালনপালন করতে হবে। মায়ের মাধ্যমেই শিশু তার পরিবার ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠে। সুতরাং একজন শিশুর মানসিক গঠনে এবং চারিত্রিক বিকাশে মায়ের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

 

মা যত নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও দরদের সঙ্গে তার শিশুর পরিচর্যা ও লেখাপড়া করিয়ে থাকেন তা আর অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আসলে মায়ের বিকল্প হয় না। বই-খাতা-কলমসহ প্রয়োজনীয় সব কিছু দিয়ে ব্যাগ প্রস্তুত করে সময় মতো মাথায় সিঁথি কেটে ও পরিপাটি করে স্কুলে পৌঁছানো কেবল মায়ের পক্ষেই সম্ভব। মাত্রাতিরিক্ত স্নেহ আবার কোমলমতি শিশুকে স্বেচ্ছাচারী করে তোলে। সেদিকেও মাকে সচেতন থাকতে হবে। শিশুকে কখনো বেশী শাসন করা উচিত নয়। লঘু পাপে গুরুদণ্ড অনেক সময় শিশুকে আরো জেদি করে তোলে। মা যদি সহানুভূতির সঙ্গে শিশুকে সংশোধন করার চেষ্টা করেন তবে সে চেষ্টা শারীরিক শাস্তির চেয়ে অনেক বেশী সুফল বয়ে আনে।

 

শিশুর চরিত্র গঠনের দায়িত্বটাও মূলত মাকেই পালন করতে হয়। পরিবারে বড়দের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা এবং ছোটদের প্রতি আদর স্নেহ প্রদর্শন করে সন্তানের সামনে মাকেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হয়। অতিরিক্ত আদর-স্নেহ বশে তাদের অন্যায় আবদার মেনে নেয়া উচিত নয়। চাওয়া মাত্র চাহিদা পূরণের অভ্যাস শিশুকে জেদি করে তোলে। তাই নিজ নিজ সামর্থ্যের অনুকুলে শিশুর আবদার পূরণ করা উচিত। শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও শিশুর চরিত্র গঠনে প্রত্যেক মাকে কিছু সময় অবশ্যই ব্যয় করতে হবে।

 

অন্তরের সোহাগ এবং চোখের শাসন দুয়ে মিলে সন্তানকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিয়ে চালিত করার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতি জর্জ ওয়াশিংটন বলেছিলেন, ‘আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।’ আমাদের নবী করিম (সা.) নিজে মায়ের মর্যাদার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং উম্মতকে মায়ের মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে বলিষ্ট ভূমিকা পালনের জন্য আদেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বুখারী এবং মুসলিম শরীফে এভাবে বর্ণিত আছে, “এক ব্যক্তি নবীজি (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন মানুষদের মধ্যে আমার পক্ষ থেকে ভালো সাহচর্যের যোগ্য কে? নবীজি (সা.) বলেন তোমার মা, ব্যক্তিটি বলল তারপরে কে? নবী (সা.) বললেন এরপরও তোমার মা, ব্যক্তিটি আবার জিজ্ঞেস করল এরপর কে, নবী (সা.) বললেন এরপরও তোমার মা, ব্যক্তিটি বলল তারপরে কে, নবী (সা.) বললেন এরপর তোমার পিতা”। অর্থ্যাৎ পিতা মাতার মধ্যে মাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্যই বলা হয় সাগরের তীর আছে, গভীরতা আছে কিন্তু মাতৃস্নেহের কোন সীমানা নেই, এটা অফুরন্ত ও অসীম।

 

মায়ের থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষা নিয়েই তো চলতে হয় পুরো জীবন। জীবনে চলতে চলতে অনেক ঘটনা-শিক্ষা-অভিজ্ঞতা যোজন বিয়োজন হয়। কিন্তু মূল ভিত তো মায়ের থেকে পাওয়া ওই শিক্ষাটুকুই। এ ভিতের ওপর ভর করেই একেকটি সাধারণ মানুষ হয়ে ওঠেন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। দায়িত্ব নেন সমাজ বিনির্মাণের। সমাজের প্রথম শর্তই তো বন্ধন। পারস্পরিক বন্ধনেই সমাজ গড়ে ওঠে। আর এ সামাজিক বন্ধনের প্রথম শিক্ষাটা আসে মূলত পরিবার থেকে। আরো স্পষ্ট করে বললে ওই মায়ের থেকেই। শুধু যে মা দিবসে মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখাতে হবে, এমনটা নয়। মায়ের প্রতি ভালোবাসা সর্বক্ষণে, সর্ব মুহূর্তে উজাড় করে দিতে হবে। কারণ মা যেমন তার জীবনকে আমাদের জীবনের উন্নতির জন্য উজাড় করে দিয়েছেন, তেমনভাবে আমাদেরকে ও তাই করতে হবে। মা দিবসে সকল মায়েদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। আসলে মায়ের বিকল্প অন্য কিছুতে হয় না, এ জগতে মায়ের মত আপন কেহ নেই এবং সত্যিকারের খাঁটি ভালবাসা মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া যায়।

 

ব্যাংকার ও কলাম লেখক,
সতিশ সরকার রোড, গেন্ডারিয়া, ঢাকা।

এই বিভাগের আরো খবর