Berger Paint

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ জুন ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩০

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
রাজধানীতে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা কানাডা প্রবাসী নারীর মরদেহ উদ্ধার পে-স্কেল না হলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এরদোয়ানের ফোন বিএনপি নেতা খায়রুল কবিরের বাড়িতে আগুন নাইজেরিয়ার কাছে হেরে বিদায় স্বাগতিক আর্জেন্টিনার বিদ্যুতের ঘাটতি ৩০০০ মেগাওয়াট, সারা দেশে লোডশেডিং

ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ও সমকালীন ভাবনা

ত্রিপন জয় ত্রিপুরা

প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২০  

ত্রিপন জয় ত্রিপুরা। ছবি- প্রতিদিনের চিত্র

ত্রিপন জয় ত্রিপুরা। ছবি- প্রতিদিনের চিত্র

 

বিশ্বের ইতিহাসে ঐতিহ্যবাহী সমৃদ্ধ একটি প্রাচীন জাতির নাম হল ত্রিপুরা জাতি। এ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর রয়েছে হাজার বছরের দেশ রাজ্যশাসন করার ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এ জাতির রয়েছে নিজস্ব রাজ্য রাজা রাজপ্রাসাদ সংবিধান মুদ্রা পতাকা ভাষা বর্ষপঞ্জি রাজমালামত দলিল সমাজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আজ এ জাতির ঐতিহ্যে আভিজাত্যে ইতিহাস কোথায়? দুঃখের সাথে বলতে হয় সেই সমৃদ্ধ জাতি আজ পথহারা পথিক রাজ্যহারা মুসাফির দেশ হারা দেশান্তর হয়ে নানা প্রান্তে অন্যের করুণায় অবহেলার পাত্র হয়ে না মরে বেঁচে আছে। এ জাতি এ দষার শেষ কোথায় তারও কোনো সুস্পষ্ট ঠিকানা নেই, নেই আগামী দিনের টিকে থাকার মত সুস্থ পরিকল্পনা ও পরিবেশ, নেই তাদের একতা, নেই তাদের নেতৃত্ব। ইতোমধ্যে এ জাতি হারিয়ে ফেলেছে তাদের রাজ্য রাজা সিংহাসন মণিমুক্তা মুদ্রা রাজপ্রাসাদ সংবিধান পতাকা ভাষা সমাজ সংস্কৃতি ঐতিহ্য বর্ষপঞ্জির মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিল। বাংলাদেশের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর বর্তমান প্রেক্ষাপট কে ধরে হিসাব করলে পানির মতো পরিষ্কার এজাতির আগামী দিনের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। প্রকৃতি পূজারী এবং প্রাকৃতিক সম্পদের নির্ভরশীল এ জাতি দিনদিন বিপন্ন হচ্ছে নানা প্রভাবে। যেমন করে বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন- গাছ বাঁশ প্রাকৃতিক পাথর ছোট-বড় বন-জঙ্গল পাহাড়-পর্বত গিড়ি-ঝিরি ঝর্না নদী ছড়া ইত্যাদি। বিশেষ করে এই জনগোষ্ঠীরা দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বংশ পরমপরা অধিকাংশ বসবাস করায় সেভাবে এখনো এ সহজ সরল জাতি এভাবে জীবন জীবিকা তাদিগে বসবাস করে আসছে যুগ যুগ ধরে। এখানকার মানুষের একমাত্র খাওয়ার পানি উৎসব প্রাকৃতিক সৃষ্ট ঝর্ণা ঝিরি গিরি ছড়া নদী এখন বিলুপ্তির পথে হওয়ায় তাদের জন্য নিরাপদ পানিসহ খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে চরম পর্যায়ে। সমৃদ্ধ এজাতি চরম দুঃখ দুর্দিনের সময় অপেক্ষা করছে আগামী দিনগুলোর তে। তাই এই জাতির অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য আমাদের এখনি পূর্ববর্তী কালীন কিছু যুগপৎ পদক্ষেপ গ্রহণ করার সময় এসেছে বলে মনে করছি। তাই ঐতিহ্যবাহী জাতির আগামী দিনের ঠিকানা কোথায় এবং সেই ঠিকানা খোজার সবার প্রতি আহবান। বর্তমানে কিছু প্রবণতা দেখা যায় যদিও এটি খুব ভাল উদ্যোগ তা হল কোন শিক্ষার্থী বা কোন ব্যক্তির বই ভর্তি পরীক্ষা ফি ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্যা হলে চাঁদা তুলে সহায়তা করার, কোন এলাকায় অসুখ-বিসুখ অভাব অনটন দেখা দিলে সে সমস্যা সমাধানের জন্য নানা প্রক্রিয়ায় গ্রহন করা। যে প্রক্রিয়াটি মোটেই স্হায়ী সমাধান নয়। এ সমৃদ্ধ ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী নিয়ে আমরা একটু দূরে গিয়ে চিন্তা করলে দেখি আমাদের বর্তমান সমাজের কোন পর্যায়ে আমাদের অবস্থান আসন কতটুকু। বিশেষ করে বর্তমানে প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে একটু হিসাব করলে দেখতে পাওয়া যায় আমাদের নেতৃত্বের চাদর কতটুকু বিস্তৃত। বিশেষ করে এদেশের কোন পাড়ায় কোন ওয়ার্ডে কোন ইউনিয়নে কোন থানায় কোন জেলায়  আমাদের ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর লোকজন কত তাদের মধ্যে সুশিক্ষিত কজন কার্বারী হেডম্যান মেম্বার চেয়ারম্যান কজন আছে তা হিসেব করলে পরিষ্কার অংক পাওয়া যায়। দাপ্তরিক ও ব্যক্তিগত কাজের আমি নানা জায়গায় যাওয়ার সুবাদে ঐতিহ্য নামে একটি বার্ষিক প্রকাশনা- 2020 সালের সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক কর্তৃক প্রকাশনা একটি বই আমি উপহারস্বরূপ পেয়েছি। তাতে উল্লেখযোগ্য তিন পার্বত্য জেলার হেডম্যান কার্বারী নাম মোবাইল নম্বর ঠিকানা ওয়ার্ড ইউনিয়ন থানা জেলারসহ সকল তথ্য বিবরনী দিয়ে সংস্করণ করে বইটি ছাপা হয়েছে। এ বইটি পড়ে দেখে অনেকটা আন্দাজ বা অনুমান করতে পেরেছি এজাতির বর্তমান দৃশ্যমান- অদৃশ্যমান অবস্থান কতটুকু। আমরা তিন পার্বত্য জেলার স্থানীয় নেতৃবৃন্দ জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে যদি হিসাব করি ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর মেম্বার কয়জন ইউপি চেয়ারম্যান কয়জন উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান কয়জন উপজেলা চেয়ারম্যান কয়জন এমপি কয়জন এগুলো থেকেও  কিছু ধারনা করতে পারি এিপুরা জাতির বর্তমান চিত্র। আমরা সমাজে পেশাজীবি ক্ষেত্রেও যদি হিসাব করি ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিক উকিল ব্যাংকার এনজিও কর্মী বা অন্যান্য দপ্তর অধিদপ্তরের কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী কজন বা আছে চোখ মেলে তাকালে হাতেগোনা কতিপয় কয়েকজন নাম চোখে পড়ে। রাজ শক্তির দিক থেকে প্রশাসনিকভাবে তাকালে বিশেষ করে পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড পার্বত্য আঞ্চলিক সার্কেল চীফ জাতীয় সংসদীয় আসনসহ সমগ্র কোন পর্যায়ে আমাদের টেকসই অবস্থান রয়েছে এবং আগামীতে হবে তা ভাবলে সবকিছু পানির মত পরিস্কার এ জাতির অদূর ভবিষ্যৎ। তাই এমতঅবস্থায় এ জাতির আগামী দিনের প্রতিযোগিতামূলক শতাব্দীতে টিকে থাকার অদৃশ্যবাহী এ শক্তিকে মোকাবেলার জন্য অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক সুরক্ষাসহ সাংস্কৃতিকভাবে একতা ঐক্যতার কোন বিকল্প নেই। আর এ জন্য সকল পেশায় এ জাতিকে অন্তভূক্ত করার কোন বিকল্প নেই। আর এসব কিছুর মূলে রয়েছে অর্থনৈতিক শক্তি ও একতা একাগ্রতার শক্তি। আর এর জন্য  দরকার শক্তিশালী একটা কমিশন বা সংঘঠন। তাই আমাদের একতাই বল একতাই শক্তি এই মন্ত্রকে পুঁজি করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষকে সমন্বয় করে ঐক্যভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজে উচ্চ পর্যায়ে বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়ে জাতীয় কমিটি বা ঐক্য কমিটি যাই বলি গঠন করে একটি জাতীয় ফান্ড সৃষ্টি করা এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছি। এ সমাজ জাতি যদি আগামী প্রজন্মের জন্য কিছু না করে তাহলে আগামী প্রজন্ম এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সম্মুখীন হবে এবং চরম সংকটে মুখোমুখি হবে। এর ফলে কোন এক সময় এ খেসারত আমাদেরকে দিতে হবে এবং আঙ্গুল তুলে দোষারোপ করবে আমাদের, যেমনটি এখন আমরা করছি আমাদের ত্রিপুরা রাজা-বাদশা ও বাপ-দাদাদেরকে। তাই সকল বির্তকের ঊর্ধ্বে ঐক্য হয়ে সকল হিংসা নিন্দা হানাহানি ভুলে সময় এখন আগামীর প্রজন্মের মানুষসহ নতুন পৃথিবীর জন্য কিছু করে যাওয়া।

লেখক: ব্যুরো চীফ দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র চট্টগ্রাম। কার্যনির্বাহী সদস্য BHRC, চট্টগ্রাম বিভাগ। প্রোগ্রাম প্লানার বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র।

এই বিভাগের আরো খবর