Berger Paint

ঢাকা, বুধবার   ২৯ মার্চ ২০২৩,   চৈত্র ১৪ ১৪২৯

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
সৌদিতে বাস দুর্ঘটনায় ২০ ওমরাহযাত্রী নিহত ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যার হুমকি হিরো আলমের পোশাক কারখানায় ঈদের ছুটি ২১ এপ্রিল বিক্ষোভের জেরে পিছু হটলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আজ সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি জেসমিনের মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন

বিশ্বে প্রতি ১০ জনে একজন কিডনি রোগে আক্রান্ত

প্রতিদিনের চিত্র বিডি ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২২  

ছবি- সংগৃহীত।

ছবি- সংগৃহীত।

 

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ একটি স্থায়ী রোগ। কিডনির ড্যামেজ প্রক্রিয়া একবার শুরু হলে তা ধীরে ধীরে আমৃত্যু চলতেই থাকবে। এই ড্যামেজ প্রক্রিয়া একেবারে বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। তবে চিকিৎসায় ধীর করা যায়।

 

যেকোনো কারণে ক্রমাগত তিন মাস গ্লোমারুলার ফিল্ট্রেশন রেট প্রতিমিনিটে ৬০ মিলিলিটার ১.৭৩ স্কয়ার মিটার সারফেস এরিয়ার চেয়ে কম হলে তাকেই ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বলে। ক্রনিক কিডনি ডিজিজকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে।

 

ক্রনিক কিডনি ডিজিজের প্রাথমিক পর্যায় কিভাবে বুঝবেন : যখন দেখবেন আপনার গ্লোমারুলার ফিল্ট্রেশন রেট বা জিএফআর বা সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল নরমাল কিন্তু বায়োপসি টেস্টে হিস্টোলজিক অ্যাবনরমালিটি তথা কিডনির ড্যামেজ প্রক্রিয়া ধরা পড়েছে। যখন দেখবেন জিএফআর লেভেল ৬০ মিলিলিটার /মিনিটের নিচে অব্যাহতভাবে তিন মাস থাকবে অথচ বায়োপসি টেস্টে কোনো হিস্টোলজিক অ্যাবনরমালিটি নেই।

 

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ এক নীরব ঘাতক। কারণ, ৮৫ শতাংশ কিডনি রোগী কিডনি নষ্ট হওয়ার আগে বুঝতেই পারে না যে, তারা কিডনিজনিত রোগে আক্রান্ত। নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ-মূলত এই তিন রোগের কারণে আমাদের দেশে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ লোকের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (সিকেডি) হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই তিনটি রোগ যাদের কারণে মূলত কিডনি বিকল হচ্ছে- প্রত্যেকেই আলাদা আলাদাভাবে একেকটি নীরব ঘাতক কিন্তু এগুলো পরস্পরের সহযোগী। নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ- এই তিনটি রোগ হওয়ার কারণগুলোও অনেকটা গুপ্তচরের ভূমিকার মতো। গুপ্তচর কাউকে সরাসরি হত্যা করে না কিন্তু দীর্ঘদিন সাথে সাথে অবস্থান করে ঘাতককে চিনিয়ে দেয়। অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, টেনশন, বিষণ্ণতা, ধূমপান, মদ্যপান, স্থূলতা ইত্যাদি কারণসমূহই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, নেফ্রাইটিস এবং ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করে থাকে।

 

উপসর্গ না থাকাই মানুষের অসতর্ক থাকার প্রধান কারণ : লাইফস্টাইলজনিত সমস্যাগুলোকে অনেক দিন পর্যন্ত লালন-পালন করে চললেও তেমন কোনো উপসর্গ হয় না। ফলে আক্রান্তরা চিকিৎসকের কাছে যান না। গবেষণায় দেখা গেছে, ৪০ শতাংশ মানুষ জানেনই না তার ডায়াবেটিস আছে; আর ৬০ শতাংশ মানুষ জানেন না তারা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। ৯০ শতাংশ মানুষ জানেন না তাদের প্রস্রাব দিয়ে আমিষ নির্গত হয়। এর ফলে নিজের অজান্তেই তারা দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। ওই সময়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা যায়, তাদের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশের দু’টি কিডনিই অকেজো হয়ে পড়েছে। এই সময়ে চিকিৎসা করে সেই রোগের অগ্রগতি কমানো সম্ভব হয় না। ফলে পাঁচ-ছয় বছরের ভেতর তাদের দু’টি কিডনি ৯০ শতাংশের ওপর বিনষ্ট হয়ে যায়। উপসর্গ না হওয়ায় তারা বিশ্বাসই করেন না যে, তাদের দু’টি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। মানুষের কিডনির রিজার্ভ পাওয়ার অনেক বেশি। কাজেই কিডনি ড্যামেজ হতে থাকলেও ৫০-৬০ শতাংশ কিডনি নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত রক্ত পরীক্ষায় কিডনি রোগ ধরা পড়ে না অর্থাৎ রক্তে সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল বাড়ে না। এমনকি সিরাম ক্রিয়েটিনিন লেভেল ২ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার না হওয়া পর্যন্ত আলট্রাসনোগ্রাফিতেও কিডনি রোগ ধরা পড়ে না।

 

আরো দুঃখজনক ব্যাপার হলো, গ্লোমারুলা নেফ্রাইটিস বা অন্য কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হলে আলট্র্রাসনোগ্রাফিতে কিডনির সাইজ ছোট দেখায় বিধায় সনোলজিস্টরা বলে দিতে পারেন যে, রোগীর ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়েছে। কিন্তু ডায়াবেটিসের কারণে ক্রনিক ডিজিজ হলে কিডনি সাইজ স্বাভাবিক থাকে ফলে সনোলজিস্টরা ক্রনিক কিডনি ডিজিজ ডায়াগনোসিস করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন।

 

যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ শনাক্ত করতেই বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের পক্ষে সুপ্তাবস্থায় থাকা উপসর্গ বোঝা কি করে সম্ভব! এ জন্যই এই রোগটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। তবে কিডনিতে ক্ষতি যখন অপরিবর্তনীয় হয়ে যায় তখন সতর্ক রোগীরাও বেশ কয়েকটি লক্ষণ অনুভব করতে পারেন, যেমন- গোড়ালি এবং পা ফোলা, ওজন হ্রাস, ক্ষুধা মন্দা, রক্তশূন্যতা হয়ে ফ্যাকাসে দেখানো, শারীরিক দুর্বলতা, প্রস্রাবে সমস্যা ইত্যাদি।

 

সুতরাং সিকেডি এমন এক নীরব ঘাতক যা ক্যান্সারের চেয়েও ভয়াবহ। কারণ অনেক ক্যান্সারই সময়মতো চিকিৎসায় ভালো হয় কিন্তু সিকেডি রোগটি শুরু হয় অনেকটাই নীরবে এবং যার শেষ রক্ষা হিসেবে করতে হয় ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি ট্রান্সপ্লান্টেশন এবং শেষ পরিণতি মৃত্যু।

 

চারটি স্তরে কিডনি রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে-

 

প্রথম স্তর : কিডনি রোগ সম্পর্কে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে সরকারের ব্যয় বাড়াতে হবে।

 

দ্বিতীয় স্তর : কিডনি রোগের রিস্ক ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণ। ক্রনিক কিডনি ডিজিজের রিস্ক ফ্যাক্টর অর্থাৎ যে সমস্ত ফ্যাক্টরের উপস্থিতির কারণে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা সিকেডির প্রগ্রেসিভ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়, এসব ফ্যাক্টর সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে-

 

মডিফায়েবল : এক ধরনের ফ্যাক্টর যাদের মানুষ ইচ্ছা করলে কমবেশি মডিফাই করতে পারে। যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, এলোমেলো ব্লাড লিপিড লেভেল, স্থূলতা, ধূমপান, মদ্যপান, প্রয়োজন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক ওষুধ না খাওয়া ইত্যাদি। মডিফায়েবল সমস্ত ফ্যাক্টর থেকে বেঁচে থাকতে আমাদেরকে যথেষ্ট সাবধানী হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ; পরিমিত ন্যাচারাল ফলমূল, শাকসবজি ও ভিটামিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর এবং বিশেষ করে বাসায় তৈরি খাবারে অভ্যস্ত হওয়া; মানবসৃষ্ট অতিরিক্ত প্রসেজড খাবার যেমন- পিজা, বার্গার, হটডগ, ডোনাটস, ফ্রাইড চিকেন ইত্যাদি পরিহার করা; সব ধরনের অতিরিক্ত লবণ ও সুগার এবং সেচুরেটেড ফ্যাট আহরিত ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার অথচ যথেষ্ট ভিটামিন ও মিনারেলসমৃদ্ধ নয় এবং চিনিযুক্ত সফট ড্রিংকস, কুকিজ, আইসক্রিম, চকোলেট, মিষ্টি আচার, ফুটপাথে যেখানে-সেখানে তৈরি করা খাবার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা; সব ধরনের ভাজাপোড়া খাবার, ব্রেড, ডেজার্ট, ক্যান্ডি, পাইস, চিপস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, গ্রিল করা খাবার তালিকা থেকে বাদ দেয়া; অতিরিক্ত প্রসেজড করা প্যাকেটজাত খাবারো বাদ দিতে হবে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের নিয়মিত ব্যায়াম যেমন, যখন যতটা পারা যায় হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালনা ইত্যাদিতে অভ্যস্ত হওয়া; ধূমপান-মাদক-নেশাদ্রব্য পুরোপুরি পরিহার করা, পর্যাপ্ত ঘুম, পরিমিত বিশ্রাম ও চিন্তামুক্ত জীবনযাপনের অভ্যাস করা, সর্বোপরি ভালো চিন্তা করা, সৎ ও ধর্মীয় জীবন পরিচালনা, হিংসা-বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা, লোভ-লালসা পরিহার করা এবং ক্রোধ দমন করা, কারণ এ সমস্ত জিনিসেই স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

 

তৃতীয় স্তর : সেকেন্ডারি প্রতিরোধ অর্থাৎ রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণ ও রোগের প্রথম অবস্থায় চিকিৎসা করা। বর্তমানে ডায়াবেটিসের জন্য ব্যবহৃত একটি ওষুধ সোডিয়াম-গ্লুকোজ কো-ট্রান্সপোর্টার-২ ইনহিবিটর কিডনি রোগের ক্রমবর্ধমান ক্ষতি কমিয়ে থাকে।

 

কিডনি রোগ নির্ণয়ের জন্য দু’টি পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর মধ্যে একটি প্রস্রাবের মধ্যে প্রোটিন বা অ্যালবুমিন আছে কি না দেখা। দ্বিতীয়টি রক্তের সেরাম ক্রিয়েটিনিন ও একই সাথে এস্টিমেটেড গ্লোমারুলার ফিলট্রেশন রেট (ইজিএফআর) পরীক্ষা করা। যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বংশগত কিডনি রোগ, কিডনির ক্ষতিকারক ওষুধ, হারবাল ওষুধ, নেশার জন্য ওষুধ, স্থানীয় কবিরাজি ওষুধ গ্রহণ করে এবং যাদের স্বাস্থ্য ইতিহাসে কিডনি অকেজো হয়েছিল এবং যাদের বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে- তাদের কিডনি রোগ পরীক্ষা করা।

 

চতুর্থ স্তর : কিডনি রোগের জটিলতা থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য চিকিৎসা প্রদান। ডায়ালাইসিস এবং ট্রান্সপ্লান্টেশন চিকিৎসা অব্যাহত রেখে আমরা জটিল কিডনি রোগের বিপর্যয়কর পরিস্থিতির হাত থেকে বাঁচতে পারি।

 

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব হিস্টোপ্যাথলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলানগর, ঢাকা।