Berger Paint

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ জুন ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩০

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
রাজধানীতে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা কানাডা প্রবাসী নারীর মরদেহ উদ্ধার পে-স্কেল না হলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এরদোয়ানের ফোন বিএনপি নেতা খায়রুল কবিরের বাড়িতে আগুন নাইজেরিয়ার কাছে হেরে বিদায় স্বাগতিক আর্জেন্টিনার বিদ্যুতের ঘাটতি ৩০০০ মেগাওয়াট, সারা দেশে লোডশেডিং

গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ছয়টি উপজেলা

এইচ.এম. সিরাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩  

ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি।

ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চতুর্থ পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেলেন ছয় শতাধিক পরিবার। এরই মধ্য দিয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হলো জেলার ছয়টি উপজেলা। সবচে' আনন্দের বিষয় হচ্ছে, ডেরা থেকে পাকা ঘরে ঠাই পেলো যাযাবর হিসেবে খ্যাত বেদে সম্প্রদায়ের ৩৫ টি পরিবার। ঘর পেয়ে বেদে পল্লীতে বইছে আনন্দে জোয়ার। ‘নৌকা থেকে ডেরা, আর এখন ডেরার বদলে বিল্ডিং' ঘরে থাকতে পারার আনন্দে তারা যারপরনাই আপ্লুত।


বুধবার (২০ মার্চ) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলার নয়টির মধ্যে সাতটি উপজেলায় ৬৬২ পরিবারের মাঝে এসব ঘর বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহরের সুর সম্রাট দি আলাউদ্দীন সঙ্গীতাঙ্গনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. আমিনুর রহমান, জেলা প্রশাসক মো. শাহগীর আলম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আল মামুন সরকার, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ফিরোজুর রহমান ওলিও, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম শেখ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম মোল্লা প্রমূখ। পরে অতিথিবৃন্দ বেদে সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার উপকারভোগীদের মাঝে আশ্রয়ণের ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন। তৃতীয় চতুর্থ পর্যায়ে জেলার সদর উপজেলায় ১০৫টি, নাসিরনগরে ২৫৪ টি, বাঞ্ছারামপুরে ১২৬টি, নবীনগরে ১০০টি, সরাইলে ৪৯টি, আশুগঞ্জে ২০টি এবং আখাউড়া উপজেলায় ৮টি ঘর বিতরণ করা হয়। এরই মধ্যদিয়ে গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হলো জেলার নয়টির মাঝে ছয়টি উপজেলা। এগুলো হচ্ছে জেলার আশুগঞ্জ, সরাইল, নাসিরনগর, বিজয়নগর আখাউড়া ও বাঞ্ছরামপুর উপজেলা।


প্রসঙ্গত, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় এখন পর্যন্ত মোট ছয় হাজার দুইটি ঘরের বরাদ্দ আসে। এরমধ্যে পাঁচ হাজার ৭০০ ঘর করা হয়েছে। এদিকে,  আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন যাযাবর অবস্থায় দিন কাটানো ৩৫ বেদে পরিবার। নৌকায় ঘুরে বেড়ানো সেই বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোকে সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ঘর পেয়ে বেদে পল্লীতে আনন্দে জোয়ার বইছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে গৃহহীণদের ঘর দেয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছেন তারই অংশ হিসাবে তাদের এ ঘর দেয়া হয়। বেদে পরিবারগুলো মূলত নদীরপাড় ও বিভিন্ন মহাসড়কের পাশে প্লাস্টিকের ডেরা তৈরি করে বসবাস করেন। সাপ খেলা দেখানো, তাবিজ বিক্রি, করিবাজি, বানর খেলা দেখানোসহ নানা পেশার সঙ্গে তারা জড়িত। মূলত বেদে সম্প্রদায়ের নারীরা পেশার সঙ্গে বেশি জড়িত।


বেদে পরিবারের ফারুক মিয়া বলেন, 'নিজের ঘর নেই, কখনো স্বজনদের ঘরেও ঘুমাইনি।' বিল্ডিং ঘর পাবার কথা বলে আপ্লুত হয়ে পড়েন তিনি ও তার স্ত্রী পিংকি বেগম। পিংকী বেগম বলেন, ‘নৌকা থেকে ডেরা। আর ডেরার বদলে অহন বিল্ডিং।' সত্তরোর্ধ্ব বয়োবৃদ্ধ বেদে আব্দু মিয়া ছিলেন ভারতের বাসিন্দা। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে আছেন বাংলাদেশে। তার পিতা কদম আলীও ছিলেন বেদে। তবে তার জানামতে বংশানুক্রমে পরিবারের কেউ আজ অবধি নিজের ঘরে ঘুমাতে পারেননি। এখন তার সাত ছেলের মধ্যে ছয় ছেলে এবং তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে জায়গাসহ ঘর পেয়েছেন। তার সব সন্তানই নৌকায় জন্ম নিয়েছেন উল্লেখ করে এখন বেজায় খুশি বলে। তিনি বলেন, 'নিজের ঘর দেখে মরতে পারবো, এটাই শান্তি।' বেদে পল্লীর অন্যান্য উপকারভোগীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, যেহেতু এখন ঘর হয়েছে। তাই নিজেদের ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনার দিকে অগ্রসর করাবেন। সেই সাথে সরকার সুযোগ করে দিলে পেশাটাও বদলাতে চান তারা।


সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সেলিম শেখ বলেন, 'ভাসমান বেদেদের দুর্দশার কথা জেনে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোকতাদির চৌধুরী তাদের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করতে বলেন। স্যারের প্রচেষ্টায় আশ্রয়ণ-২ প্রল্পের আওতায় সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের ৪২টি ঘরের মধ্যে ৩৫টি ঘর বেদে সম্প্রদায়ের পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধনের পর তাদের হাতে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদেরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করবো।'


জেলা প্রশাসক মো.শাহগীর আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর উপজেলা টাস্কফোর্সের মাধ্যমে ৩৫ টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের নিকটেই বিদ্যালয় রয়েছে। নিবাসীদের সন্তানেরা যেনো পড়াশুনা করতে পারে সে ব্যবস্থাও করা হবে। এরই মধ্য দিয়ে জেলার ছয়টি উপজেলা গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত হয়েছে। তবে ভবিষ্যতে নতুন করে কেউ থাকলেও তাদেরকেও তালিকা করে ঘরের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আশ্রয়ণের উপকারভোগীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতেও আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।'

এই বিভাগের আরো খবর