Berger Paint

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ জুন ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩০

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
রাজধানীতে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা কানাডা প্রবাসী নারীর মরদেহ উদ্ধার পে-স্কেল না হলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এরদোয়ানের ফোন বিএনপি নেতা খায়রুল কবিরের বাড়িতে আগুন নাইজেরিয়ার কাছে হেরে বিদায় স্বাগতিক আর্জেন্টিনার বিদ্যুতের ঘাটতি ৩০০০ মেগাওয়াট, সারা দেশে লোডশেডিং

টেকসই উন্নয়ন অর্জনে জৈবপ্রযুক্তি

ইফফাত তাইয়্যিবা

প্রকাশিত: ১৯ আগস্ট ২০২১  

ইফফাত তাইয়্যিবা, ছবি- প্রতিদিনের চিত্র।

ইফফাত তাইয়্যিবা, ছবি- প্রতিদিনের চিত্র।


প্রতি বছর বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৭৫ মিলিয়নের ও বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৮.১ বিলিয়নে উন্নীত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি প্রায় সব উন্নয়নশীল দেশ গুলিতেই ঘটবে এবং অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ সমাজ, পরিবেশ ও অর্থনীতির উপর মারাত্নক প্রভাব ফেলবে। বর্ধিত জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল ও নগরায়ন নিশ্চিত করতে প্রতি বছর কৃষিজ জমির পরিমান হ্রাস পাচ্ছে। রাস্তা-ঘাট, মিল-কারখানা, অপরিকল্পিত বাড়ি-ঘর ইত্যাদি অবকাঠামো তৈরিতে চাষযোগ্য জমি থেকে প্রতিদিন ২২০ হেক্টর হিসেবে প্রতিবছর হারিয়ে যাচ্ছে প্রায় ৮০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য পাল্লা দিয়ে খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও কীটনাশক এর ফলে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ, অপরদিকে রাসায়নিক যুক্ত খাদ্য গ্রহনের ফলে বেড়ে যাচ্ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি যা টেকসই উন্নয়নের অন্তরায়। টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে এমন একটি উন্নয়ন প্রক্রিয়া যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিজস্ব চাহিদা পূরণের সক্ষমতার সাথে আপস না করে বর্তমানের চাহিদা পূরণ করে। টেকসই উন্নয়ন অর্জনের জন্য কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয় বরং সামাজিক ও পরিবেশগত প্রবৃদ্ধিও প্রয়োজন। জৈবপ্রযুক্তি বা বায়োটেকনোলজির যথাযোগ্য ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন আনয়ন সম্ভব।

 

জৈবপ্রযুক্তি হলো বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত নীতি অনুসরন ও প্রয়োগ করে জীবদের ব্যবহার করার মাধ্যমে জনকল্যাণকর ও ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালামাল তৈরীর বিশেষ প্রযুক্তি। এটি প্রধানত জীববিদ্যা ভিত্তিক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি বিশেষত কৃষি, খাদ্যবিজ্ঞান, ঔষধশিল্প,  পরিবেশ, নবায়নযোগ্যশক্তির (বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদন) পাশাপাশি বর্তমানে পোশাক শিল্প, প্রসাধন, অবকাঠামো ও বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে। জৈবপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখা রয়েছে; স্বর্ণ,নীল, সবুজ, লাল, সাদা, হলুদ, ধুসর, বাদামি, বেগুনি ও অন্ধকার জৈবপ্রযুক্তি। স্বর্ণ জৈবপ্রযুক্তি মূলত বায়োইনফরমেটিকসের উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে। নীল জৈবপ্রযুক্তি প্রধানত সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সবুজ জৈবপ্রযুক্তি হলো সেই শাখা, যেখানে জৈবপ্রযুক্তি কৃষি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়; মাইক্রোপ্রোপাগেশনের মাধ্যমে একসাথে অনেক উদ্ভিদ উৎপন্ন করা যায়, নির্দিষ্ট পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ (জিনের সমন্বয় ঘটানোর মাধ্যমে) ও বিভিন্ন রোগ এবং পোকামাকড় প্রতিরোধকারী অধিক ফলনশীল উদ্ভিদ উৎপাদন করা হয়। লাল শাখায় চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। সাদা জৈবপ্রযুক্তি শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি হচ্ছে হলুদ জৈবপ্রযুক্তি। পরিবেশ দূষন ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় প্রয়োগ করা হয় ধূসর জৈবপ্রযুক্তি।

 

ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরনে জৈবপ্রযুক্তির বিকল্প নেই। জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জিএমও (জেনেটিক্যালি মডিফাইড অর্গানিজম) ফসল উৎপন্ন করা হয়। এসব ফসল পোকামাকড় ও রোগবালাই প্রতিরোধী, অধিক ফলনশীল, লবনাক্ততা সহ্য করার ক্ষমতা সম্পন্ন, বন্যা-খরা-শৈত্য প্রবাহ সহ্য ক্ষম। এছাড়া স্বল্প সময়ে লাখ লাখ চারা উৎপাদন, বড় আকৃতির ফলমূল, চাহিদামত কাঙ্খিত জাতের ফসল, সবজি-মাছ-পশু-পাখি উৎপাদন জৈবপ্রযুক্তি দ্বারাই সম্ভব। এসব ফসল টেকসই উন্নয়ন আনয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে। জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে অধিক ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে ক্ষুধামুক্ত দেশ গড়ে তোলা সম্ভব। দারিদ্র দূরীকরণে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ হচ্ছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে তোলা। এক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষুদ্র শিল্প/ খামার (যেমন: হাঁস-মুরগী ও মাছের সমন্বিত চাষ, মাছ ও সবজির সমন্বিত চাষ, মাশরুম খামার প্রভৃতি) গড়ে তোলা। এসব খামারের মাধ্যমে স্বল্প বিনিয়োগে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পারে দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থায়, কৃষি উৎপাদন থেকে নির্গমন (মিথেন, কার্বন-ডাই-অক্সাইড) বর্তমানে বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ১১ শতাংশ।জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহারে কার্বন নির্গমন, জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যাবহার হ্রাস পায়। এর ব্যাবহারের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী কীটনাশকের ব্যাবহার ৭৯০ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত হ্রাস করা হয়েছে। ২০০৭ সালে, সম্মিলিত বায়োটেক ফসল সম্পর্কিত কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গমন সঞ্চয় হ্রাস জ্বালানী ব্যবহার এবং অতিরিক্ত মাটি কার্বন সিকোয়েস্ট্রেশন বায়ুমন্ডল থেকে ৩১.২ বিলিয়ন পাউন্ড কার্বন ডাই অক্সাইড অপসারন করে যা এক বছরের জন্য রাস্তা থেকে প্রায় ৬.৩ মিলিয়ন গাড়ি অপসারনের সমান ছিল। ২০১৫ সালে যদি বায়োটেক ফসল না জন্মাতো তাহলে অতিরিক্ত ২৬.৭ বিলিয়ন কিলোগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড বায়ুমন্ডলে নির্গত হত, যা রাস্তায় ১১.৯ মিলিয়ন গাড়ি যোগ করার সমতুল্য। ফসলের রাসায়নিক সার বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষনের জন্য দায়ী। এর টেকসই বিকল্প হলো তাদের জীবন্ত অনুজীব দিয়ে প্রতিস্থাপন করা যা ফসলের সাথে তাদের বিকাশ এবং স্বাস্থ্যকে উজ্জীবিত করতে সহায়তা করে, যা শুধুমাত্র জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেই সম্ভব। বিভিন্ন ধরনের বায়োফার্টিলাইজার (গোবর সার,কম্পোষ্ট সার, খইল, হাড়গুড়ো, পোন্টলিটার, কাঠের ছাই, ধৈঞ্চা সবুজ সার প্রভৃতি) ব্যবহার করে পরিবশে দূষন এড়ানো সম্ভব।

 

প্লাস্টিক দূষন বর্তমানে আমাদের মুখোমুখি হওয়া অন্যতম প্রধান পরিবেশগত সমস্যা। প্রতিদিন ফেলে দেওয়া হয় পেট্রোকেমিক্যাল প্লাস্টিক উৎপাদন কারখানার বর্জ্যসহ কয়েক টন অপচনশীল প্লাস্টিক, যা পরিবেশের জন্য বিশাল সমস্যা। নতুন প্রযুক্তি যা প্লাস্টিক  উৎপাদনে জীববিজ্ঞানকে যুক্ত করে এর আরও টেকসই বিকল্প সরবরাহ করতে পারে। ফ্রান্সে, কার্বায়োস কোম্পানি মাইক্রোবিয়াল এনজাইম ব্যবহার করছে সাধারনভাবে প্লাস্টিকগুলি ভেঙে ফেলার এবং পুনর্ব্যবহারের জন্য। আমস্টারডামে, অ্যাভান্টিয়াম কৃষি এবং বনবর্জ্য থেকে ১০০% পুনর্ব্যবহারযোগ্য বায়োপ্লাস্টিক উৎপাদনের পদ্ধতি বিকাশ করছে- টেকসই বোতল এবং দইয়ের কাপ উৎপাদনের জন্য সং¯থাটি কোকাকোলা এবং ড্যানোনের মতো বড় ব্রান্ডগুলির সাথে কাজ করছে। বায়োপ্লাস্টিকগুলি মূলত টেকসই উৎস থেকে উদ্ভূত প্লাস্টিক। এগুলি প্রাকৃতিকভাবে ভেঙে যায়, এভাবে প্লাস্টিকের নিষ্পত্তি করার চিরস্থায়ী ক্ষতিকর প্রভাব এড়ায়।
জীবাশ্ম জ্বালানি বায়ু দূষণের পিছনে সবচেয়ে বড় অপরাধী, যা প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করবে বলে অনুমান করা হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, ফসল থেকে উৎপাদিত জৈব জ্বালানি একটি ক্রমবর্ধমান সাধারন বিকল্প হয়ে উঠেছে। যাইহোক, এই ফসল কৃষি জমির জন্য প্রতিযোগিতা শুরু করছে, যা বনধ্বংস এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে। বেশ কয়েকটি সংস্থা কিছু অনুজীবের প্রাকৃতিক ক্ষমতাকে কাজে লাগাচ্ছে জ্বালানি উৎপাদনের জন্য কৃষি বা বনবর্জ্য ভেঙে ফেলার জন্য। এটি ফরাসি সংস্থা    বায়োএনার্জিসের অন্যতম লক্ষ্য , যা অডির সাথে গমের খড় এবং কাঠের চিপসের মতো টেকসই উৎস থেকে গ্যাসোলিন উৎপাদনের জন্য কাজ করছে। সুইস সংস্থা ক্লারিয়েন্ট এক্সনমোবিলের সহযোগিতায় কৃষি বর্জ্যকে বায়োডিজেলে পরিনত করার পদ্ধতিও তৈরি করছে।জার্মানির সোলাগা এবং স্পেনের অ্যালগাএনার্জির মতো অন্যান্য সংস্থাগুলি শৈবাল ব্যবহার করে সূর্যের আলো এবং কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে কিভাবে জ্বালানি উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে গবেষণা করছে।

 

মাংস শিল্প একটি বিশাল পরিবেশ দূষণের উৎস। জৈবপ্রযুক্তি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রাণী ছাড়া সরাসরি পেশী এবং চর্বি কোষের একটি ছোট নমুনা থেকে মাংস চাষ করে জমি, জল এবং শক্তির ব্যবহার হ্রাস করতে পারে। এই পদ্ধতিটি মাংস উৎপাদনে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারও হ্রাস করবে কেননা এটি জীবানুমুক্ত ল্যাব পরিস্থিতিতে তৈরি করা যেতে পারে। ২০২০ সালে,সিঙ্গাপুর প্রথম দেশ যারা একটি চাষ করা মাংস পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ অনুমোদন করে। সেই বছর মাংসের বিকল্প বিকাশকারী সংস্থাগুলি তাদের তহবিল তিনগুনবৃদ্ধি করে।

 

নৃতাত্বিক কার্যকলাপ বৃদ্ধির কারণে গত কয়েক দশকে পরিবেশ দূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । বায়োরিমেডিয়েশন হলো দূষিত পরিবেশ থেকে বিষাক্ত বর্জ্য অপসারণের জন্য একটি আকর্ষনীয় এবং সফল কৌশল । এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যা পানি, মাটি এবং উপরিভাগের উপাদানসহ দূষিত মিডিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে অনুজীব অথবা গাছ ব্যবহার করে কাঙ্খিত পরিবর্তন সাধন করা হয়। পরিবেশগত অবস্থার পরিবর্তন করে অনুজীবের বৃদ্ধি উদ্দীপিত করে  এবং লক্ষ্য দূষনকারীকে হ্রাস করে। বায়োরিমেডিয়েশন নৃতাত্বিক ক্রিয়াকলাপ , যেমন শিল্পায়ন ও কৃষি প্রক্রিয়া থেকে তৈরি উপজাতগুলির প্রভাব হ্রাস করতে ব্যবহৃত হয়। ছড়িয়ে পড়া তেল এবং বর্জ্য হাইড্রোকার্বন দিয়ে উদ্বেগজনক হারে পরিবেশ দূষণ হয়। সেই যৌগগুলি জল, স্থলজ ও বায়ুমন্ডলীয় বাস্তুতন্ত্রকে দূষিত করে। এই দূষণকে হ্রাস করার জন্যে বায়োরিমিেডয়েশন হর সর্বাধিক সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি।

 

চিকিৎসাক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির ভূমিকা অনস্বীকার্য। আধুনিক জৈবপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যমান ওষুধগুলি আরও সস্তায় এবং সহজে উৎপাদন করা সম্ভব। ইনসুলিনের বিকাশ (রিকম্বিন্যান্ট ইনসুলিন), বৃদ্ধি সংক্রান্ত হরমোন, আনবিক পরিচয়, ডায়াগনস্টিক্স, জিন থেরাপি এবং ভ্যাকসিন (যেমন হেপাটাইটিস বি) জৈবপ্রযুক্তির কিছু মাইলফলক।

 

অনেক নির্মান উপকরণ, যেমন কংক্রিট উৎপাদন একটি মরাত্মক পরিবেশ দূষণকারী প্রক্রিয়া। এতে বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়, এক্ষেত্রে শক্তি ও জলের বড় ভলিউম প্রয়োজন হতে পারে। প্রক্রিয়াটি উচ্চ মাত্রার কার্বন নির্গমনও করে যা বিশ্ব উষ্ণায়নে অবদান রাখে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী। বেশ কয়েকটি সংস্থা দেখছে কীভাবে জীবিত প্রাণীরা আমাদের বিল্ডিং শিল্পকে আরও টেকসই করতে সহায়তা করতে পারে। লন্ডনে, বায়োহম নামে একটি স্টার্টআপ জৈব বর্জ্য থেকে নির্মাণ উপকরণ উৎপাদনের জন্য মাশরুম ব্যাবহারের দিকে নজর দিচ্ছে। নেদারল্যান্ডসে, গ্রীন বাসিলিস্ক কোম্পানি কংক্রিটের আয়ু বাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যাকটেরিয়া দিয়ে এটি এমবডে করে যা উপাদানটি মেরামত করে যখন এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মার্কিন ভিত্তিক বায়োম্যাসন কম কার্বন ফুটপ্রিন্ট সহ সিমেন্ট টাইলস তৈরি করতে অনুরূপ অনুজীব ব্যবহার করে।

 

টেকসই উন্নয়নের একটি বড় বাধা হচ্ছে দ্রুত ফ্যাশনের পরিবর্তন। জৈবপ্রযুক্তি দূষিত রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলি প্রতিস্থাপন করে ও টেক্সটাইল বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং জৈবপচনযোগ্য করে তার পরিবেশগত প্রভাব বন্ধ করতে পারে। কিছু এনজাইম পোশাক ধোয়া, বিøচ করা এবং উল সংকুচিত হওয়া থেকে প্রতিরোধ করতে ব্যবহৃত হয়। আধুনিক জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার বস্ত্র উৎপাদনে আমাদেরকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

 

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য জৈবপ্রযুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং সুযোগ। পাশাপাশি এটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করে। জৈব প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে এবং অনবায়নযোগ্য শক্তি যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। দেশের জনশক্তিকে দক্ষ করে তুলতে হবে এবং আধুনিক বিশ্বে টিকে থাকতে হলে প্রত্যেকটি জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। জৈবপ্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব যা সামাজিক উন্নয়ন আনয়নের মাধ্যমে দেশকে টেকসই উন্নয়নের দিকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। জৈবপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার আমাদের পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে।এই মহামারীর সময়ে অর্থনীতির চাকাকে পুনরায় সচল করে তুলতে নিঃসন্দেহে জৈবপ্রযুক্তি এক অনবদ্য ভূমিকা রাখবে। সুতরাং, জৈবপ্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে হবে; এর মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত উন্নয়ন ঘটিয়ে সহজেই টেকসই উন্নয়ন অর্জন সম্ভব।


শিক্ষার্থী
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ

 

এই বিভাগের আরো খবর