Berger Paint

ঢাকা, শুক্রবার   ০২ জুন ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ১৯ ১৪৩০

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
রাজধানীতে বাড়ির উঠানে পুঁতে রাখা কানাডা প্রবাসী নারীর মরদেহ উদ্ধার পে-স্কেল না হলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়বে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এরদোয়ানের ফোন বিএনপি নেতা খায়রুল কবিরের বাড়িতে আগুন নাইজেরিয়ার কাছে হেরে বিদায় স্বাগতিক আর্জেন্টিনার বিদ্যুতের ঘাটতি ৩০০০ মেগাওয়াট, সারা দেশে লোডশেডিং

উতু, আমি থেকে গেলাম তোর চিরকালের প্রিয় বান্ধবী হয়ে- সুচিত্রা সেন

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,কোলকাতা

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২০  

সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার,ছবি-সংগৃহীত

সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার,ছবি-সংগৃহীত

এখন সুচিত্রা উত্তম কে তুমি থেকে তুই সম্বোধন করে ডাকেন। আরো কাছের করে নিয়েছেন সুচিত্রা উত্তমকে। উত্তমও সুচিত্রাকে কোনদিন সুচিত্রা কি মিসেস সেন বা ম্যাডাম বলে ডাকেননি। শুধুই রমা। এ অধিকার, প্রশয় তো রমাই দিয়েছেন চিরকাল, তাঁর উতুকে।
তাহলে কি ওঁদের বিয়ে হতে পারত? ছিল কি প্রেম? নাকি সবটাই স্বর্গীয় ভালোবাসা? নাকি নিখাদ বন্ধুত্ব?
আকর্ষণ না থাকলে অমন আলিঙ্গন দৃশ্য করা যায়? যা আর কোনো জুটিতেই ক্লিক করল না একই রকম অপ্রতিরোধ্য ভাবে ? সে কৌতুহলের শেষ নেই! যা শুরু হয়েছিল 'সাড়ে চুয়াত্তর' এ, শেষ 'প্রিয় বান্ধবী' তে। কিন্তু এই কৌতুহল মানুষের মনে আজও নেভেনি বরং বেড়েছে। দুই বাংলায় উত্তম-সুচিত্রার গল্পের আবেদন,কৌতুহল এতটুকু ম্লান হয়নি আজও। সুচিত্রার প্রকৃত পিতৃভিটে তো বাংলাদেশের পাবনাতেই।

 

 

প্রিয় বান্ধবী- সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার

সুচিত্রা সেন উত্তম কুমার জুটিকে শেষ দেখা গিয়েছিল 'প্রিয় বান্ধবী' ছায়াছবিতে। ছবির নাম যেন সার্থক।

যখন সুচিত্রা খুঁজে পাচ্ছেন জীবনে নতুন আলোর দিশা। আর নয় লাইট ক্যামেরা এ্যাকশন। অন্যদিকে উত্তমের শরীর আর নিচ্ছেনা এত ইন্ডাস্ট্রির ধকল, সাংসারিক টানাপোড়েন। উত্তম - সুচিত্রা জুটির ম্যাজিক কি গ্রাস করছে বোম্বের নবীন জুটি অমিতাভ-রেখা? নাকি সত্তর দশকের রাজনৈতিক অবস্থায় রোম্যান্টিক নয় রাজনৈতিক / অন্যধারার ছবির ডিম্যান্ড বাড়ছে? উত্তম এখন নায়ক সত্তা ছেড়ে অভিনেতা সত্তা খুঁজতে মরিয়া।

সুচিত্রা ক্রমশ উত্তমের থেকে সবার থেকে নিজেকে সরাচ্ছেন। টেনে দিচ্ছেন লক্ষণরেখা। আধ্যাত্মিক জীবনের টানে সাধিকা সুচিত্রা। বলে দিচ্ছেন উত্তম কে "আর আমাদের দেখা হবেনা উতু। আমায় আর ফোন করবিনা বল। কথা দে। তোদের এই ইন্ডাস্ট্রি আর আমার ভালো লাগছেনা। আমার ডাক এসে গেছে। তুই ফোন করলে আমি দুর্বল হয়ে পড়ব। কথা দে আর ফোন করবিনা"
মনে রাখিস 'প্রিয় বান্ধবী' আমার আর তোর শেষ ছবি।  উতু , আমি থেকে গেলাম তোর চিরকালের 'প্রিয় বান্ধবী' হয়ে।"


“এমন একটি গল্প বলতে পারো যাতে বিরহ নেই
ফুলসজ্জার এমন কোনো রাত দেখেছ কি
যাতে মিলন নেই।”


সন্ধ্যা মুখার্জ্জীর উত্তম সুচিত্রা জুটির শেষ ছবি ‘প্রিয় বান্ধবী’ তে সুচিত্রার লিপে শেষ এই গান।

হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ও গেয়েছিলেন এ ছবিতে উত্তম কুমারের লিপে 'আমি সাহেবও নই,গোলামও নই।'  
তবে ছবির টাইটেল সঙ্গীত দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের কন্ঠে সুচিত্রার আবহে 'হে প্রিয় বান্ধবী' সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়।

হীরেন নাগের ১৯৭৫ র ছবি ‘প্রিয় বান্ধবী’। উত্তম কুমার সুচিত্রা সেন বাদেও, সুচিত্রার লম্পট চরিত্রহীন স্বামীর ভূমিকায় দিলীপ মুখোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়,হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রবোধ কুমার সান্যালের কাহিনী অবলম্বনে এই ছবি।
একটা সময়ের দলিল তো বটেই। ইতিহাস। ছবির প্রিন্ট এখনও আছে কিন্তু HD Print হয়নি। খুবই দুরাবস্থায়।  


১৯৭৫ এ রিলিজ করে 'প্রিয় বান্ধবী'। তিন সপ্তাহ কলকাতার অরুনা ভারতী তে চলেছিল শূণ্য প্রেক্ষাগৃহে। কিছু দর্শক অবশ্যই দেখেছিল। সুচিত্রা উত্তম রূপায়ণে এই  ছবিটা দর্শক নেয়নি। ছবির গল্প কিন্তু ভালো ছিল। দুই অচেনা নারী পুরুষের মধ্য বয়সে দুর্বিপাকে দেখা ... বন্ধুত্ব,প্রেম,ভালোবাসা। ১৯৭৫ এর পুজোর দুটি ছবি ‘প্রিয় বান্ধবী’ আর ‘সন্ন্যাসী রাজা’ পাশাপাশি দক্ষিন কলকাতার বিজলী আর ভারতীতে চলেছিল অক্টোবরে। ‘সন্ন্যাসী রাজা’ হাউসফুল আর 'প্রিয় বান্ধবী' প্রায় দর্শক শূণ্য।

কিন্তু এটাই দেখার উত্তম কুমার দুটো ছবিতে দু ধরনের অভিনয়ে কি সমান তুখোড়। একটা ছবিতে রাজা থেকে সন্ন্যাসী রাজা আবার 'প্রিয় বান্ধবী'তে ভোলেভালা বাউন্ডুলে চরিত্র। ম্যাডাম খুব দাপট দেখিয়েছিলেন এই ছবিতে।  সুচিত্রার অভিনয় দাপট বেশ রোমাঞ্চকর কিছু দৃশ্যে।

‘সন্ন্যাসী রাজা’ যে ঐতিহাসিক সুপারহিট করে ঠিক তার উল্টো ‘প্রিয় বান্ধবী’, সুপার ফ্লপ করে।  তাই হয়তো এই জুটি আর ছবি করেননি। উত্তমও অবশ্যিই চলে গেলেন দু বছর পর ১৯৮০। সুচিত্রাও ১৯৭৮ এ ‘প্রণয় পাশা’ র পর অন্তরালে। অথচ ১৯৭৫ এ হিন্দিতে ‘আঁধি’ র মতো কালজয়ী ছবি সুচিত্রা করেন। ১৯৭৫ এ উত্তম করেন ওঁর বলিউডে প্রথম হিট ছবি ‘অমানুষ’।
বাংলা ছবিতে উত্তম সুচিত্রা জুটিকে উন্নত ভাবে বয়সোচিত রোলে নিয়ে ওদের সেই বয়সের ছবি কেউ বাননানি। বিজয় বসুর ‘নবরাগ’ একমাত্র ব্যতিক্রম। কিন্তু তারপর আর ওদের জুটি কে নিয়ে ভালো মেকিং এর বাংলা ছবি আসেনি।

‘প্রিয় বান্ধবী’ শেষ দলিল উত্তম সুচিত্রা হেমন্ত সন্ধ্যা জুটির। তাই ছবিটির ঐতিহাসিক গুরত্ব কম নয়, ছবি ফ্লপ হলেও। ‘প্রিয় বান্ধবী’ উত্তম সুচিত্রার বিগত যৌবনের ছবি হলেও ছবির শেষ দৃশ্যে ওদের সেই আলিঙ্গন অসাধারন। উত্তম জহর ও সুচিত্রা শ্রীমতী চরিত্রে।

সুচিত্রা সেন ও উত্তম কুমার, প্রিয় বান্ধবী ছবির শেষ দৃশ্যে

সুচিত্রা ডায়লগ বলেছিল উত্তমকে এ ছবিতে “তোমায় কেউ ধরে রাখতে পারবেনা। তুমি কাউকে ধরা দেবেনা। তাই আমি সব ছেড়ে তোমার কাছে চলে এলাম।’

হলও সেই, উত্তমকে কেউ ধরে রাখতে পারলনা। শেষ মালা দিতে এলেন রমা তাঁর উতুকে। যে রিয়েল দৃশ্যটাও রূপোলী পর্দার মতো আইকনিক হেডলাইন হয়ে থাকল চিরকাল।

‘প্রিয় বান্ধবী’ হয়েই রয়ে গেলেন সুচিত্রা আজীবন উত্তমের।

লেখক

শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় 

কোলকাতা

এই বিভাগের আরো খবর