নির্বাচনে বিএনপি এলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

নয়ন তারা

১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০১:১১ পিএম


নির্বাচনে বিএনপি এলে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি

 

দেশে বইছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া। বরিশাল বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় আসন ঝালকাঠি- ১। রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া উপজেলা নিয়ে ১ আসন এবং জেলা সদর ও নলছিটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি- ২ আসন। জেলার দুটি আসনই হেভিওয়েট প্রার্থীদের আসন বলে খ্যাত। ঝালকাঠিতে এখনই বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে এই আসনে এরই মধ্যে বড় দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে। একসময় বিএনপির দখলে থাকলেও গত কয়েকটি নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কুক্ষিগত।

 

নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ করে মাঠ চষে বেড়ালেও বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের এখনো মাঠে দেখা যায়নি। তবে ভেতরে ভেতরে তারাও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানাগেছে। গত ১৪ বছর মাঠ দখলে রেখে নিজেদের শক্তিশালী করেছে আওয়ামী লীগ। দলীয় নেতাদের দাবি, উন্নয়নের চিত্র দেখে দুইটি আসনের জনগণ টানা চতুর্থবারের মতো আবারো নৌকাকে বিজয়ী করবে। অন্যদিকে বিএনপি বলছে, রাজপথের আন্দোলন-সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

 

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া): ঝালকাঠি জেলার দুইটি সংসদীয় আসনের মধ্যে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া দুই উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি-১ আসন গঠিত। ঝালকাঠি- ১ আসনে (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- আওয়ামী লীগের আলহাজ্ব বজলুল হক হারুন (বর্তমান এমপি), বর্তমান জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনির, কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবুল কাসেম সীমান্ত, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটর ট্রাস্টি বোর্ড চেয়ারম্যান ফাতিনাজ ফিরোজ, বিএনপি থেকে সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম ও জেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল ইসলাম জামাল তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করেছিলেন। জাতীয় পার্টির ডা. সেলিনা ও নাসির উদ্দিন। জেপির (মঞ্জু) এড. এনামুল হোসেন রুবেল।

 

ঝালকাঠি- ১ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি বজলুল হক হারুন তিনি পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৭৩ সালের পর তিনিই ২০০৮ সালে আসনটি উদ্ধার করেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এ আসনের দুইটি উপজেলার আওয়ামী লীগও এর অংঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয় এমপি হারুনের। শুধু তাই নয় দুইটি উপজেলার ১২টি ইউপির মধ্যে ১১টি ইউপি চেয়ারম্যানই তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। নেতাকর্মীদের অভিযোগ নির্বাচনের পরে তিনি এলাকায় আসছেন না বললেই চলে। তবে হারুন এর থেকে দূরে থাকা নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ান কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এম. মনিরুজ্জামান মনির। তিনি এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য  প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ত্রাণ-তহবিল থেকে অনুদানের চেক এনে বিতরণ করেছেন।

 

এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশা করেন তাদের অনেক জনকেই এলাকার সাধারণ মানুষ কোন দিন দেখে নায় চিনেও না। তারা অতিথি পাখির মতো ৫ বছর পর পর নির্বাচনের আগে তাদের ফেস্টুন ব্যানার গাছের সাথে ঝুলে থাকে। এলাকার মানুষের সাথে পরিচয় না থাকলেও গাছের সাথে তাদের ছবির পরিচয় আছে বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে স্থানীয় আ. লীগের দাবি তৃনমূলে যে নেতার পদচারণা বেশি, তাকে মনোনয়ন দিলে এ আসনে আ. লীগ জিতবে।

 

এদিকে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবি ঝালকাঠি-১ আসনে বিএনপি পন্তী লোক বেশি।  বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন দিলে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং ব্যারিষ্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তমকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দিলে তাকে পরাজিত করে এই আসনটি দখল করে নেওয়ার মতো অন্য কোন দলের শক্ত প্রার্থী নেই বলে মনে করছেন দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা।

 

ঝালকাঠি-১ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এই দুইদলের নেতা কর্মী  পদচারণা ও জনসমর্থন বেশি এই দুই দল নির্বাচনে আসলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ। তবে অন্য কোন দলের এই আসনটিতে নেতাকর্মী জনসমর্থন খুবই কম। এই দুই দল ছাড়া অন্য কোন দল নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আসনটি দখল করে নেওয়ার মতো কোন সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

 

ঝালকাঠি- ২ (ঝালকাঠি-নলছিটি): ঝালকাঠি জেলার দুইটি সংসদীয় আসনের মধ্যে ঝালকাঠি সদর ও নলছিটি দুই উপজেলা নিয়ে ঝালকাঠি- ২ আসন গঠিত। ঝালকাঠি- ২ আসনে (ঝালকাঠি-নলছিটি) মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র, সাবেক শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু (বর্তমান এমপি), আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গোলাম রব্বানী চিনু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সুলতান হোসেন খান ও যুব লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মিল্লাত হোসেন। বিএনপি থেকে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো (সাবেক এমপি), বিএনপি হাই কমান্ডের ঘনিষ্ঠজন ডা. জিয়া উদ্দিন হায়দার স্বপন, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য জেবা আমিনা খান। তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করেছিলেন। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. শাহাদাৎ হোসেন।

 

জাতীয় পার্টির (এরশাদ) এম এ কুদ্দুস খান, আলহাজ্ব বজলুর রহমান, আনোয়ার হোসেন আনু ও ইঞ্জিনিয়ার তসলিম উদ্দিন মুনশী।

 

ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অন্যতম সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র, সাবেক শিল্প ও খাদ্য মন্ত্রী, শিল্প মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু এমপি আওয়ামী লীগের তিনি পরপর তিনবার এ আসন থেকে জয়লাভ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার নির্বাচনী এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত করছেন এবং উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। এ কারণে আগামী নির্বাচনে তার জয় লাভের ব্যাপারে আশাবাদী দলীয় নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আমির হোসেন আমুর বিপরীতে বিএনপিতে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টোই শক্ত প্রার্থী তারা দুজনে নির্বাচনে আসলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে পারে বলে মনে করছেন দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা। তবে এবার অনেক বয়স্ক নেতাদের বাদ দিয়ে অনেক আসনে তরুণ নেতাদের মনোনয় দেয়া হতে পারে। সে হিসেবে এখানে মনোনয়ন পেতে পারেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সজিব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠজন গোলাম রাব্বানি চিনু।

 

ঝালকাঠি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, 'দেশের উন্নয়ন দেখে মানুষ এবারও স্বত:স্ফুত ভাবে নৌকায় ভোট দিবে। জেলা সদর তথা ঝালকাঠি -২ আসনে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। তিনি দলের প্রবীণ নেতা এবং নিতীনির্ধারক। তার বিকল্প কেউ এ আসনে তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে আমির হোসেন আমু এলাকায় ব্যপক কাজ করেছেন। আমাদের দুটি সংসদীয় আসনে গত ১৫ বছরে যে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে তা স্বাধীনতার পর এই প্রথম। জননেতা আমির হোসেন আমু জাতীয় নেতা হয়েও তৃনমুলের মানুষের কাছে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। এ অঞ্চলের মানুষ এখন নৌকা প্রতীককে হৃদয়ে গেঁথে নিয়েছে।' খান সাইফুল্লাহ পনির আরও বলেন, আমিও দীর্ঘদিন দলের জন্য কাজ করছি। দলের মাননীয় সভানেত্রী আমাকে যদি ঝালকাঠি -১ আসনে মনোনয়ন তাহলে -১ আসনটি আমি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।

 

ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এড. শাহাদাৎ হোসেন আগামী নির্বাচন এবং সম্ভ্যাম্ব প্রার্থীতা নিয়ে তিনি বলেন, দল আপাতত নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। আমরা সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্দোলন করছি। এ আসনে যারা বিগত দিনে এমপি ছিল বা বর্তমানে এমপি প্রার্থীহিসেবে নাম প্রচার করছে তারা কেহ দলীয় কর্মসুচি বা আন্দলন সংগ্রামে নেই। আমি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পেয়ে প্রতিটি কর্মসুচি সফল করেছি। মামলা হামলার শিকার হয়েছি। দেশে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় এবং দল যদি অংশ নেয় তাহলে আমি প্রার্থী হবো। নমিননেশ বিষয়ে দলের যে কোন সিদ্ধান্ত মেনে নেব।