মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ৪ লাখ টাকা ছিনতাই, ৭ দিন পার হলেও সোনারগাঁ প্রশাসন নীরব
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৬ পিএম

আলামিন।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে দিনে-দুপুরে মোঃ কাউসার (২১) নামে এক রকেটকর্মীকে পিটিয়ে নগদ ৪ লাখ টাকা ও ব্যবহৃত মোবাইল ছিনিতাই করে নিয়ে গেছে ছিনতাইকারী আলামিন (২৫) ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। গত রোববার ১৭সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার মোগরাপাড়া ইউনিয়নের সাদিপুর এলাকায় গাজীর বালুরমাঠে এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারী আলামিন ফুলবাড়িয়া গ্রামের মনা প্রধান ওরফে মনা কসাই এর ছেলে।
নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁসহ সারা দেশে একের পর এক ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। মানুষের কষ্টে উপার্জিত নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, স্বর্ণালঙ্কারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। এসব ঘটনায় সর্বস্ব খোয়ানোর পাশাপাশি ছিনতাইকারীর আঘাতে আহত হচ্ছেন অনেকে। এমনকি ছিনতাইকারীর হাতে কাউকে কাউকে নির্মমভাবে জীবন দিতেও হচ্ছে। অথচ এসব অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে সোনারগাঁয়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট তৎপর নয়। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।
অবশ্য অনেক চিহ্নিত ছিনতাইকারীর হালনাগাদ তালিকা প্রস্তুত করেছে পুলিশ, যা থানা পুলিশের খাতায় সন্নিবেশিত। তবে তা ওই পর্যন্তই। ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে নেই কোনো কার্যকর অভিযান। তাদের কাউকে গ্রেফতার করা হলেও স্বল্প সময়ে জামিনে বেরিয়ে আসে। তখন তারা হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া। প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করলেও থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
প্রশ্ন হলো, ছিনতাইকারীদের গ্রেফতারে পুলিশের কেন এত অনীহা? অভিযোগ আছে, ছিনতাইয়ের ঘটনা কম দেখাতে চায় পুলিশ। কারণ মামলা বেশি হলে বিপদে পড়েন ওসিসহ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। তাই ছিনতাইয়ের মামলা নিতে চায় না পুলিশ।
ছিনতাইয়ের মামলা করতে গেলে চুরির ধারা দেওয়া হয়। তদবির বা চাপের মুখে মামলা নেওয়া হলেও এক্ষেত্রে আইনের ফাঁক রাখা হয়, মামলা রেকর্ড করা হয় দণ্ডবিধির ৩৯৩ ধারায়।
এ ধারায় আইনের ফাঁক থাকায় ছিনতাইকারী সহজেই পার পেয়ে যায়। অথচ ছিনতাই সংঘটিত হলে সুনির্দিষ্টভাবে দণ্ডবিধির ৩৯২ ও ৯৪ ধারায় মামলা দায়েরের বিধান রয়েছে। পুলিশের উচিত এ দুটি ধারায় ছিনতাইয়ের মামলা নেওয়া। বাস্তবে পুলিশ সুনির্দিষ্টভাবে ধারা না দেওয়ায় অপরাধ হিসাবে ছিনতাইকে কার্যত খাটো করে দেখা হয়।
আরও অভিযোগ আছে, পুলিশের সোর্স হিসাবে কাজ করে অনেক ছিনতাইকারী। তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা। পুলিশ তাদের গ্রেফতার না করে উলটো সোর্স হিসাবে ব্যবহার করায় তারা পরিণত হয় আরও বেপরোয়া ছিনতাইকারীতে।
জনগণের জানমাল রক্ষা করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অথচো এর পরিবর্তে তারা যদি অপরাধীদের দমনে নীরবতা পালন করে অথবা তাদের সঙ্গে নমনীয় আচরণ করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হবে, এটাই স্বাভাবিক। এর কারণে সোনারগাঁয়ে ছিনতাই বেড়ে যাচ্ছে দিন দিন।
ছিনতাইকারীরা কারও পরোয়া করছে না। নানা ধরনের ছিনতাইকারী চক্র গড়ে উঠে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। এমনকি তাদের দ্বারা ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন অনেক পুলিশ সদস্যও।
সোনারগাঁ থানা পুলিশ কক্সবাজার থেকে আসা মাদক মহাসড়কে ধরে একের পর এক সংবর্ধনা নিয়ে আসছে জেলা পুলিশ থেকে অথচো যে সোনারগাঁ বাসিকে নিরাপদ আর চুরি ছিনতাই ভয়মুক্ত এবং অপরাধমুক্ত রাখাটা থানা হিসাবে অন্যতম দায়িত্ব সেখানে সোনারগাঁ থানা পুলিশ পুরো ব্যার্থ। সোনারগাঁ দিনে রাতে চুরি ডাকাতির স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে অপরাধীদের কাছে।
এ ধরনের সব ছিনতাই চক্রকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। কেউ ছিনতাইয়ের কবলে পড়লে থানায় যথাযথ ধারায় তার মামলা নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে ছিনতাইকারীর শাস্তি। তাই সোনারগাঁয়ের মানুষ সোনারগাঁ থানা ও প্রশাসনের কাছে নিরাপদে পথচলা ও জীবনযাপনের গ্যারান্টি চায়।