মুক্তিযুদ্ধ ও কবিতার প্রাসঙ্গিকতা
২০ মার্চ ২০২৩, ১১:৫১ এএম

বিশাল সাহা।
স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ এই মহাকাব্যিক শব্দগুলো জন্ম লগ্ন থেকে শুনে আসছি, আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি কিন্তু স্বাধীনতা, স্বাধীন দেশের আলো বাতাস উপভোগ করছি। মুক্তিযুদ্ধের রোমহর্ষক গল্প, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ইতিহাস বইপত্র, প্রামাণ্যচিত্র থেকে জানতে পারছি, জানতে পারছি মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন পেশাজীবীদের নিঃস্বার্থ অবদান। ফুটবল খেলে অর্জিত অর্থ কিংবা ভিনদেশী জর্জ হেরিসনের মিউজিক্যাল কনসার্টে উপার্জিত অর্থ মুক্তিযুদ্ধের স্বার্থে মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে দেওয়া অনন্য নজির। পাশাপাশি সিনেমা, গান, আঁকা ছবি, কবিতার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা দেওয়া একই সাথে নান্দনিক ও তৎকালীন সময়োপযোগী। অনুপ্রেরণার কথা বলতে গেলে কবিতার কথা একটু জোর দিয়েই বলতে হয়।
মনের আবেগ, অনুভূতি, রাগ, ক্ষোভের দূর্দান্ত মিশেল কবিতা। সময়ের কানে সব সময়ই সঠিক স্পন্দন দিয়েছে কবিতা। যে কোনো আন্দোলনেই কবির কবিতা হয়ে উঠেছিলো প্রতিবাদী অস্ত্র। ঠিক তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবচেয়ে বেশি স্পন্দিত করেছে কবিতা শিল্পকে।
বাঙালির আনন্দ-অধিকারের কাল ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ। বাংলা কবিতায় ১৯৭১ সালের তাপ ও মমতা ছড়িয়ে আছে প্রগাঢ় ভাবে। মুক্তিযুদ্ধপূর্ব, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধোত্তর সময়ে কবিরা সময় ও সংগ্রামকে এঁকেছেন পরম শ্রদ্ধায় ও স্নেহে। মুক্তিযুদ্ধকালীন কবিরা অতন্দ্রপ্রহরীর মত কবিতা লিখে মুক্তিবাহিনীকে উজ্জিবীত করে ভূমিকা রেখেছে। দেশভাগ তথা ১৯৪৮ পরবর্তী সময় থেকেই বাঙালী স্বাধীনতার জন্য ক্ষুধার্থ ছিলো। ১৯৪৮ এরপর ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয়দফা কিংবা ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান সব আন্দোলনের আড়ালে লুকায়ে ছিলো বাঙালীর স্বাধীনতার স্পৃহা।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে যখন দেশ উত্তাল, ক্ষোভে ফুলে ফেঁপে উঠেছে ছাত্র সমাজ। পুলিশের গুলিতে নিহত আসাদের শার্ট নিয়ে মিছিলে নেমেছে তাজা প্রাণ। পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় নবকুমার ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মতিউর। ছুরিকাঘাতে নিহত হন রুস্তম। নাখালপাড়ায় ঘরের ভেতরে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় সেনা ও ইপিআরের বেপরোয়া গুলিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে মা আনোয়ারা বেগম। হত্যার মিছিল, রক্ত, জনরোষে ফুঁসে ওঠে ঢাকা। এমনি অগ্নিগর্ভ দিনের এক সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি দেয়াল ছেয়ে গেছে একটি কবিতার পঙ্ক্তিমালায়-
'এখন যৌবন যার, মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
এখন যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়।' প্রতিবাদী এই লাইন দুটো কবি হেলাল হাফিজের কবিতা 'নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়'র। এই কবিতাকে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা প্রথম কবিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যেখানে আহ্বান জানানো হয় সশস্ত্র যুদ্ধের; এখনও এই কবিতা লাখো তরুণের রক্তে জাগায় নিপীড়নের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস ও উন্মাদনা সহজ কথায় যা সময়ের সাথে প্রাসঙ্গিক। এই কবিতার মাধ্যমে কবি সমকালের সাথে চিরকালের সাঁকো তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন ।
১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ আসাদকে নিয়ে কালজয়ী কবিতা "আসাদের শার্ট" লিখেছেন কবি শামসুর রাহমান। কবিতায় কবি লিখেছিলেন
'আমাদের দুর্বলতা, ভীরুতা কলুষ আর লজ্জা/
সমস্ত দিয়েছে ঢেকে একখণ্ড বস্ত্র মানবিক ;
আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা।’
কবি তাঁর কবিতার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ দেখতে পান। এই কালজয়ী কবিতার প্রেক্ষাপট জানান দেয় পাকিস্তান পতনের কথা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের উৎকণ্ঠাময় মূহুর্তগুলোতে পল্লী কবি জসীম উদ্দীন তাঁর কাব্যিক বুনোনে কবিতা গেঁথেছেন এদেশের মানুষ, ঐতিহ্য, মর্যাদা এবং সাংস্কৃতিক উন্মাদনা। তাঁর সুক্ষ্ম কাব্যিক বুনোনে প্রকাশ পেয়েছে বাঙালির হৃদয় আর্তি, ফুঁটে উঠেছে স্বাধীনতাকামী বাঙালির আর্তনাদ। একাত্তরের ভয়াবহতার মিশেলে সর্বমোট ১৮টি কবিতা নিয়ে সংকলিত হয়েছে তাঁর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা কবিতা। এই সংকলনটিকে জাতীয় দুর্দিনে শিল্পীর সামাজিক দলিল বললেও ভুল হবে না। এ গ্রন্থের 'কবির নিবেদন' কবিতায় কবি তৎকালীন অস্থিরতার চিত্র বিদ্রোহী সুরে তুলে ধরেছেন এই পঙক্তি গুলোর মাধ্যমে-
"বিশ্ববাসীরা শোন,
মোদের কাহিনী শুনিয়া কাঁদিবে নাই কী কোনো? সীমান্ত পার হয়ে যারা গেছে হয়তো বেঁচেছে যবে,
এখানে যাহারা রয়েছি জানিনে কিবা পরিণাম হবে। "
কবিতার লাইনগুলো পড়লে বুঝতে বাকি নেই কবি কতোটা ক্ষোভ, কষ্ট থেকে কলমে উচ্চারণ করেছেন এসব শব্দ।
" রক্তচোখের আগুন মেখে ঝলসে যাওয়া আমার বছরগুলো
আজকে যখন হাতের মুঠোয় কণ্ঠনালীর খুনপিয়াসী ছুরি
কাজ কি তবে আগলে রেখে বুকের কাছে কেউটে সাপের ঝাঁপি
আমার হাতেই নিলাম আমার নির্ভরতার চাবি
তুমি আমার আকাশ থেকে সরাও তোমার ছায়া
তুমি বাংলা ছাড়ো "
কবি সিকান্দার আবু জাফর তাঁর 'বাংলা ছাড়ো' কবিতায় যে অগ্নিবার্তা দিয়েছেন তা মুক্তিযুদ্ধের সাথে দারুণ ভাবে প্রাসঙ্গিক। কবিতার বিদ্রোহী ভাষা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশ স্বাধীন করার স্পৃহা বাড়িয়েছে বৈ কমায়নি।
ভিন্নধারার কবি শহিদ কাদেরীও লিখতে ভুলে যাননি অন্যায়, অবিচার নিয়ে। তাঁর কবিতায় দৃপ্ত উচ্চারণ যোগ হয়েছে তৎকালীন পরিস্থিতি নিয়ে। কবি আবুল হাসানের 'উচ্চারণগুলি শোকের' কবিতাটি জানান দেয় তিনি মুক্তিযুদ্ধকে কতোটা ধারণ করেন। তিনি লেখেন-
''অনেক রক্ত যুদ্ধ গেলো,
অনেক রক্ত গেলো,
শিমুল তুলোর মতো
সোনারূপো ছড়ালো বাতাস।
ছোটো ভাইটিকে আমি
কোথাও দেখিনা,
নরোম নোলক পরা বোনটিকে
আজ আর কোথাও দেখিনা!
কেবল পতাকা দেখি,
কেবল উৎসব দেখি,
স্বাধীনতা দেখি"
কবি শামসুর রাহমানকে বলা হয় জাতীয় সংকটের কবি। দেশ, রাষ্ট্রের সংকটকালীন সময়ে তিনি অস্ত্র হিসেবে বেছে নেন কলমকে, লেখেন একের পর এক সময়কে ব্যবচ্ছেদ করা কবিতা। তিনি চিরকাল মানবতাবিরোধী কর্মযজ্ঞের বিরুদ্ধে লিখে গেছেন। স্বাধীনতার ক্ষুধায় ক্ষুধার্থ কিংবা তৎকালীন অর্থনৈতিক স্থিতি-অস্থিতির কালযাপন নিয়ে তিনি লিখেছেন অজস্র কবিতা। তিনি বাঙালি জাতির মনন-চেতনকে এঁকেছেন 'তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা' কবিতার মাধ্যমে। স্বাধীনতার মূল্য বোঝাতে কবি শামসুর রাহমানের 'স্বাধীনতা তুমি' কবিতার পঙক্তিগুলো এমন-
'স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।'
বাংলাদেশের অন্যতম কবি আল মাহমুদ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। তাঁর কবিতায় কল্পনা আর বাস্তবজীবনের সংমিশ্রণ দেখা যায়, যা তিনি করেছেন সচেতন ভাবে। তাঁকে সমকালের সচেতন কবি বললেও ভুল হবে না। "বুদ্ধদেব বসুর সঙ্গে সাক্ষাতকার" কবিতায় তিনি মুক্তিযুদ্ধ ও অভিজ্ঞতা সম্পর্কে চমৎকার বিবরণ দিয়েছেন কাব্যিক ভঙ্গিতে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা অসংখ্য কবিতার মধ্যে হৃদয়গ্রাহী কবিতা 'ক্যামোফ্লেজ'। কবির আত্মকথন থেকে জানা যায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি একটিমাত্র কবিতাই লিখেছিলেন কবিতাটির নাম ক্যামোফ্লেজ।’ ক্যামোফ্লেজ শব্দটির অর্থ ছদ্মবেশ যা প্রাচীন শিল্প বলে পরিচিত। তিনি কবিতার পঙক্তিতে উচ্চারণ করেছেন-
''নিজেকে বাঁচাতে হলে পরে নাও হরিৎ পোশাক
সবুজ শাড়িটি পরো ম্যাচ করে,
প্রজাপতিরা যেমন
জন্ম-জন্মান্তর ধরে হয়ে থাকে পাতার মতোন।
প্রাণের ওপরে আজ লতাগুল্ম পত্রগুচ্ছ ধরে
তোমাকে বাঁচাতে হবে হতভম্ব সন্ততি তোমার।’'
তিনি এই কবিতার মাধ্যমে বাঙালিদের বেঁচে থাকা ও মুক্ত হওয়ার জন্য হয় জেতা নয়তো মরার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন কবিতার নন্দনে। সন্ততিকে বাঁচাতে গেরিলাযুদ্ধের কলা শিখিয়ে দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের।
মুক্তিযুদ্ধে কবিতার প্রাসঙ্গিকতার কথা উঠলে কবি রফিক আজাদের কথা উচ্চারিত হবে দীপ্ত কণ্ঠে। তাঁর কবিতার স্বাভাবিক অনুষঙ্গ হলো ঔদ্ধত্যপূর্ণ উচ্চারণ। সদ্য স্বাধীন দেশে যখন দুর্ভিক্ষের ছোবল তখন তিনি লিখেছেন, 'ভাত দে হারামজাদা' কবিতাটি যেখানে দৃশ্যমান হয়েছে দুর্ভিক্ষের শিকার অগণিত মানুষের দিশেহারা আকুতির। তিনি কবিতায় লিখেছেন-
"কোনো ক্ষতি নেই- মাটির শানকি ভর্তি ভাত চাইঃ
দু’বেলা দু’মুঠো পেলে ছেড়ে দেবো অন্য-সব দাবী;
অযৌক্তিক লোভ নেই, এমনকি নেই যৌন ক্ষুধা
চাইনিতোঃ নাভি নিম্নে পরা শাড়ি, শাড়ির মালিক;
যে চায় সে নিয়ে যাক- যাকে ইচ্ছা তাকে দিয়ে দাও
জেনে রাখোঃ আমার ওসবের কোনো প্রয়োজন নেই।
যদি না মেটাতে পারো আমার সামান্য এই দাবী
তোমার সমস্ত রাজ্যে দক্ষযজ্ঞ কাণ্ড ঘ’টে যাবে
ক্ষুধার্তের কাছে নেই ইষ্টানিষ্ট, আইন কানুন-
সম্মুখে যা কিছু পাবো খেয়ে যাবো অবলীলাক্রমেঃ"
চরম ক্ষোভে তিনি কষ্টের সাথে শেষে উচ্চারণ করেছেন কিছু কঠিন ও প্রাসঙ্গিক পঙক্তি-
"দৃশ্য থেকে দ্রষ্টা অব্দি ধারাবাহিকতা খেয়ে ফেলে
অবশেষে যথাক্রমে খাবো : গাছপালা, নদী-নালা
গ্রাম-গঞ্জ, ফুটপাত, নর্দমার জলের প্রপাত
চলাচলকারী পথচারী, নিতম্ব প্রধান নারী
উড্ডীন পতাকাসহ খাদ্যমন্ত্রী ও মন্ত্রীর গাড়ী
আমার ক্ষুধার কাছে কিছুই ফেলনা নয় আজ
ভাত দে হারামজাদা,
তা না হলে মানচিত্র খাবো।"
স্রোতের মতো সময় চলে গেলেও বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্ব গতিতে রফিক আজাদের এই অমর কবিতা আজও প্রাসঙ্গিক।
প্রেম ও দ্রোহের কবি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের ভয়বহতা নিয়ে অনেক কবিতা লিখলেও তাঁর 'বাতাসে লাশের গন্ধ' কবিতাটি যুগের পর যুগ বাঙালিকে মুক্তিযুদ্ধের মাহাত্ম বর্ণণা করছে। এই কবিতায় মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা, শোকের মাতম, ক্ষোভ, দ্রোহ সব এক হয়ে গেছে। তিনি লিখেছেন-
"বাতাসে লাশের গন্ধ ভাসে,
মাটিতে লেগে আছে রক্তের দাগ।
এই রক্তমাখা মটির ললাট ছুঁয়ে একদিন যারা বুক বেঁধেছিলো।
জীর্ণ জীবনের পুঁজে তারা খুঁজে নেয় নিষিদ্ধ আঁধার।
আজ তারা আলোহীন খাঁচা ভালোবেসে জেগে থাকে রাত্রির গুহায়।
এ যেন নষ্ট জন্মের লজ্জায় আড়ষ্ট কুমারী জননী,
স্বাধীনতা, -একি তবে নষ্ট জন্ম?
একি তবে পিতাহীন জননীর লজ্জার ফসল?
জাতির পতাকা খামচে ধরেছে আজ সেই পুরোনো শকুন।"
পাঠ্য বইয়ে জায়গা করে নেওয়া কবি নির্মলেন্দু গুণের 'স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো' কবিতায় কবি গল্পের ঢঙে নতুন প্রজন্মকে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাঁর লেখা অজস্র কবিতার মধ্যে "স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর" কবিতার মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতার মর্মার্থ বুঝিয়েছেন, যে কবিতা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাঠ করে স্বাধীনতা রক্ষায় নিজেকে বিলিয়ে দেবে। তিনি চিন্তা ও ক্ষোভে লিখেছেন-
'জননীর নাভিমূল থেকে ক্ষতচিহ্ন মুছে দিয়ে
উদ্ধত হাতের মুঠোয় নেচে ওঠা, বেঁচে থাকা
হে আমার দূঃখ, স্বাধীনতা, তুমিও পোশাক পরো;
ক্ষান্ত করো উলঙ্গ ভ্রমণ, নয়তো আমারো শরীরি থেকে
ছিঁড়ে ফেলো স্বাধীনতা নামের পতাকা।
বলো উলঙ্গতা স্বাধীনতা নয়,
বলো দূঃখ কোনো স্বাধীনতা নয়,
বলো ক্ষুধা কোন স্বাধীনতা নয়,
বলো ঘৃণা কোন স্বাধীনতা নয়। '
আহসান হাবীব, আবু হেনা মোস্তফা, হাসান হাফিজুর রহমান, মহাদেব সাহা, বামপন্থী চিন্তা ধারার কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ, প্রথাবিরোধি লেখক ও কবি হুমায়ুন আজাদ সহ নাম জানা, না জানা অসংখ্য দেশী-বিদেশী কবি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কবিতা লিখে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস, অনুপ্রেরণার পাশাপাশি সন্মান জানিয়েছেন, কবিতায় লিখেছেন স্বাধীনতার গল্প যা পড়ে বর্তমান প্রজন্ম জানছে স্বাধীনতার গভীরতা। তাঁরা কবিতায় এঁকেছেন সময়ের জলছাপ।
কালের সাক্ষী হিসেবে কবির এসকল কবিতার মাধ্যমে বর্তমান প্রজন্ম জানতে পারছে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, অনুমান করতে পারছে কবিতার শক্তি, মাহাত্ম। যুদ্ধের আগে ও পরের পরিস্থিতি, আশা আকাঙ্ক্ষার বীজ ফুটে উঠেছে কবির কবিতায়। মুক্তিযুদ্ধের মহাকাব্যিক ইতিহাস কবিতার মাধ্যমে বেঁচে থাকবে যত দিন বেঁচে থাকবে বাংলা সাহিত্য। কবিতার জয়গান বাজবে কাব্য প্রেমিকদের মুখে। মুক্তিযুদ্ধে কবিতার অবদান, ছোট ছোট মহাকাব্যিক পঙক্তির অবদান যেন একেকটা বুলেটের মতো। মুক্তিযোদ্ধাদের মননে নাড়া দেয়া কবিতা গুলো আমাদের দ্রুত স্বাধীনতা উপহার দিয়েছে বললেও ভুল বলা হবে না। বাংলা কবিতার চিরায়ত ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচিত কবিতা গুলো দলিল হিসেবে থেকে যাবে। শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে কবিতা যুগের পর যুগ অণুপ্রেরণার বাতিঘর হয়ে আলো দিক এই প্রত্যাশা চিরকালের।
লেখক: বিশাল সাহা
শিক্ষার্থী: প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, ঢাকা কলেজ, ঢাকা।