কাঁচা মরিচের ঝাঁজ

প্রতিদিনেরচিত্র ডেস্ক

০৪ জুলাই ২০২৩, ১১:৪০ এএম


কাঁচা মরিচের ঝাঁজ


দেশ এখন চারদিকে কাঁচা  মরিচের ঝাঁজে সয়লাব। রান্নাঘরের সীমানা ছাড়িয়ে, সবকিছু মাড়িয়ে কাচা মরিচের অসহনীয়  ঝাঁজ এখন সবখানে।

 

এতদিন রান্নার সময় মরিচের ঝাঁজ মা বোনেরা উপলব্ধি করতে পেরেছিল। এবার পুরুষের বেসামাল অবস্থা মরিচের ঝাঁজে। মরিচের দামের গরমে বাজার অস্থির।

 

বর্তমান বহুল আলোচিত কাচা মরিচের সাথে একটু পরিচয় হয়ে নেওয়া যাক।
মরিচ বা কাঁচা মরিচ বা লঙ্কা এর বৈজ্ঞানিক নাম Capsicum annuum. মরিচের বিভিন্ন জাত রয়েছে যেমন - কামরাঙ্গা, বোম্বাই, কৃষ্ণকলি, ঘৃতকুমারী, সূর্যমুখী, সিটিন, বালিজুরী, জারলা, উবধা, পুষা জাওলা, বাইন, সাইটা, শিকারপুরী, ক্যালিফোর্নিয়া ওয়ান্ডার, ম্লিমপিম, ওয়ান্ডার বেল প্রভৃতি। বাংলাদেশে সব অঞ্চলেই কাঁচা মরিচ হয়। বহুল আলোচিত এই মসলা পণ্যটি এখন সারা দেশের যেন প্রধান সংবাদ।

 

মরিচের দাম বাড়া নিয়ে গোপাল ভাড়ের একটা গল্প মনে পরে যায় - সে সময় রাজ্যে মানুষ অনেক বেশী কথা বলতো। যেই পারতো উপদেশ দিতে চাইতো অন্যজনকে। রাজ্যের এমন বিশৃংখলা দেখে রাজামশায়ের টালমাটাল অবস্থা। তাই দিনক্ষণ ঠিক করে সবাইকে নিয়ে পরামর্শ সভার আয়োজন করলো রাজামহাশয়। একে একে সবাই পরামর্শ দিতে লাগলো, রাজ্যের শান্তি ফিরিয়ে আনতে, বেশী কথা বন্ধ করতে বিভিন্ন উপায় পেশ করলো। নানান যুক্তি, পরামর্শ দিল সবাই।

 

এবার গোপাল ভাড়কে শেষমেশ রাজামশায় জিজ্ঞেস করলো- গোপাল তুমি চুপ কেন ?  কিভাবে আমার রাজ্যে এই অপ্রয়োজনীয় কথা বলা বন্ধ করা যায় তার উপায় কি তোমার কাছে আছে ? থাকলে পেশ করো,,,,,,,,,

 

গোপাল ভাড় এবার মাথা নাড়িয়ে বললো-  রাজামশায়, পরামর্শ সভায় যে পরিমাণ বেশী কথা বলে পরামর্শ দেওয়া হলো তাতে আমার মনে হলো -আমাদের এই অবস্থা হলে রাজ্যের সাধারণ মানুষের বেশী কথা বলা বন্ধ করবো কিভাবে সেটাই ভেবে চুপ আছি ! রাজামশায় গোপালের কথায় লজ্জিত হয়ে নিজেই চুপ থাকলো। এবার সবাই যেন চুপ !!!

 

রাজ্যের পরামর্শ সভায় আপাততঃ বেশী কথা বলা বন্ধ হলো। এভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই প্রচলন হলো। একসময় রাজ্যে অপ্রয়োজনীয় কথা বলা বন্ধ হয়ে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে এলো। 'কথা কম কাজ বেশি'- এই নীতি চালু হলো।

 

মুলতঃ গোপাল ভাড় চুপ থেকে পরামর্শ দিল, নিজ থেকেই প্রথমে  যেকোনো  বিষয় পালন করে সমস্যার সমাধান করতে হয়। সবার আগে নিজেকে গড়ে পৃথিবীকে গড়তে হয়।

 

আমাদের দেশেও সম্প্রতি অধিক মাত্রায় সমাজের উচ্চবর্গের মানুষের অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা এখন সমাজের সবখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরেছে। সমস্যার সমাধান না হয়ে বরং মনগড়া কথায় নতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এই ভাইরাস এখন মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। কথার  ঝাঁজ মরিচের ঝাঁজকেও হার মানিয়ে দিচ্ছে দিনকে দিন।

 

কি আর করা, অবশেষে মরিচ অতিমাত্রায় রাগান্বিত হয়ে নিজের  ঝাঁজ বুঝিয়ে দিল, যার ফলে টাকা দিয়ে গুণে মরিচ কেনার অবস্থা। তবুও সমস্যার সমাধান না করে বেশী কথা বলার মানুষ গুলো কথা বলেই যাচ্ছে, আর বাজার ও সাথে সাথে গরম হচ্ছে,,,,,, ফলে সাধারণ মানুষ ভুক্তভোগী হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

 

অপ্রয়োজনীয় কথার সিন্ডিকেট দূর করে মরিচের ঝাঁজ কমানো সম্ভব। গোপাল ভাড়ের মতো আমজনতার মরিচের দাম শুনে পকেটে হাত বুলিয়ে নিরবে চুপ থেকে  চোখের জল টলমল।

 

হঠাৎ করেই দাম বাড়ার এই অশুভ প্রতিযোগিতা কেবল আমাদের বাজারেই সম্ভব। তাই কখনও পেয়াজ, কখনও কাচা মরিচ কিংবা কোন সময় সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে অমুল্য রত্নে পরিণত হয়ে যায় এসব পণ্য।

 

মরিচের ঝাঁজ কমার পাশাপাশি মানুষের অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তার  ঝাঁজ কমুক এই প্রত্যাশা। কথা দিয়ে নয় বরং কাজ দিয়ে যেকোনো সমস্যার সমাধানের রাস্তা খুজে বের করার সংস্কৃতি চালু হউক।

 

বিশৃঙ্খলার শীকল ভেঙে নিয়মতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকুক সবখানে।

 

লেখক: ব্যাংকার ও কলাম লেখক।

Ads