কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঝাড়ুদারের কাজ করবেন পাপিয়া

প্রতিদিনেরচিত্র ডেস্ক

০৫ জুলাই ২০২৩, ০১:৫১ পিএম


কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঝাড়ুদারের কাজ করবেন পাপিয়া

 

কাশিপুর মহিলা কারাগার থেকে থেকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত ২৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত শামীমা নূর পাপিয়া এখন ঝাড়ুদারের কাজ করবেন।

 

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াকে। গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগার থেকে সোমবার (৩ জুলাই) রাতে তাকে কুমিল্লায় আনা হয়। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন এই তথ্য জানান।

 

কারা সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঝাড়ুদারের কাজ করতে হবে কারাবন্দি শামীমা নুর পাপিয়াকে। এই কারাগারে দুটি কাজই রয়েছে—ঝাড়ু দেওয়া এবং নকশিকাঁথা সেলাই। জেল বিধি অনুযায়ী বন্দী নারীদের জন্য কাজ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রাথমিকভাবে নকশিকাঁথার কাজ সবাই পারে না। তাই শুরুতে ঝাড়ুদারের কাজই করতে হয়। সে অনুযায়ী পাপিয়াকে ঝাড়ুদারের কাজই করতে হবে।

 

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়াকে। পাপিয়া ২৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত হলেও সিনিয়র জেল সুপার ছুটিতে থাকায় মঙ্গলবার পর্যন্ত তাকে কোন শ্রম বন্টন করা হয়নি।

 

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ছুটিতে আছি। ছুটি শেষে রোববার কর্মস্থলএ ফিরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে পাপিয়ার শ্রম নির্ধারণ করা হবে। এখানে মহিলা কারা বন্দীর জন্য পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, হস্তশিল্প ও দর্জির কাজ দেওয়া হয়। এসব কাজের মধ্যে থেকে যেকোনো একটি পাপিয়াকে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন যেহেতু পাপিয়া হস্তশিল্প ও দর্জির কাজ প্রথম থেকে করতে পারবে না তাই তাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা (ঝাড়ুদারের) কাজ করতে হবে।

 

সোমবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রিজন ভ্যানে করে আনা পাপিয়া কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কুমিল্লা কারাগারে পৌঁছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছেন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন।তিনি বলেন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রুনা নামের এক হাজতিকে নির্যাতন করার অভিযোগে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন নির্যাতিতের ভাই। পরে দুটি তদন্ত কমিটির মাধ্যমে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে পাপিয়াকে কুমিল্লা কারাগারে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

 

জেল সুপার বলেন, “পাপিয়াকে সাধারণ কয়েদিদের সঙ্গেই সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। এখানে অন্য বন্দিরা যেভাবে থাকেন তিনিও সেভাবেই থাকবেন। তবে কুমিল্লা কারাগারে যেন কাশিমপুরের মতো ঘটনা না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক থাকব।”

 

ওই কারা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে দুটি নারী ওয়ার্ড রয়েছে। ছোটটিতে মহিলা ও তাদের শিশুসন্তানসহ বয়োজ্যেষ্ঠ নারী বন্দিদের রাখা হয়। আর বড়টিতে রাখা হয় অন্য নারী বন্দিদের। সেখানে প্রায় অর্ধশত বন্দি একসঙ্গে থাকতে পারেন। এই ওয়ার্ডেই পাপিয়া রয়েছেন। অন্য কয়েদিদের মতই সেখানে তার খাবার ও ঘুমানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

২৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে জেলবিধি অনুযায়ী পাপিয়াকে ‘রাইটার’ হিসেবে কাশিমপুর কারাগারে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। প্রায় ৪০ মাস তিনি সেই কারাগারে বন্দি ছিলেন।এর মধ্যে গতমাসে নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিস আইনজীবী রুনা লায়লাকে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে সাত হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগী কয়েদিরা গত ১৯ জুন রুনার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের।

 

এনিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিশ বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা—কর্মচারীরা। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেন রুনার পরিবার। ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটিও গঠন করা হয়। এসব কমিটির প্রাথমিক তদন্তে পাপিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরই তাকে কাশিমপুর থেকে কুমিল্লায় স্থানান্তরিত করা হয়।