উত্তরাঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা

প্রতিদিনেরচিত্র ডেস্ক

১৩ আগস্ট ২০২৩, ০১:২৮ পিএম


উত্তরাঞ্চলে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদ-নদীর পানি, বন্যার আশঙ্কা

 

ক্ষিণাঞ্চলে সাঙ্গু, মাতামহুরীসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করলেও উত্তরাঞ্চলের বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এমন তথ্য জানিয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানির সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

 

অন্যদিকে সুরমা-কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানির সমতলে হ্রাস পাচ্ছে।

 

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে ওই সময় এই অঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর (সুরমা, কুশিয়ারা, যাদুকাটা, ভুগাই, কংশ, মনু, খোয়াই) পানির সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে আগামী দুই দিন এই অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদ-নদীগুলোর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং আগামী দুই দিনে ধরলা নদী কুড়িগ্রাম ও দুধকুমার নদ পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে।

 

পাউবো জানিয়েছে, বিভিন্ন নদ-নদীতে তাদের পর্যবেক্ষণাধীন ১০৯টি স্টেশনের মধ্যে পানির সমতল বেড়েছে ৬৫টিতে, কমেছে ৩৮টিতে আর অপরিবর্তিত আছে ছয়টি স্টেশনের পানির সমতল।

 

১৯ অঞ্চলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টির আভাস : এদিকে দেশের ১৯ অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে অস্থায়ীভাবে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

 

শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে জানানো হয়, দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেওয়া আবহাওয়া পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন সংবাদমাধ্যমকে জানান, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহম ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানি : বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টের পানি। এ ছাড়া ধরলা নদী কুড়িগ্রাম ও দুধকুমার নদীর পাটেশ্বরী পয়েন্টের পানিও বিপৎসীমার কাছাকাছি অবস্থান করতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।

 

শনিবার বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্তব্যরত কর্মকর্তা সহকারী প্রকৌশলী মেহেদী হাসানের দেওয়া পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

 

বাপাউবো জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে।

 

সংস্থাটি জানায়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এর ফলে ২৪-৪৮ ঘণ্টায় এই অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।

 

বিরামপুরে পানির নিচে কয়েক হাজার বিঘা জমির ধানের চারা : ভারতীয় অংশে স্লুইচগেট বন্ধ থাকায় দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা কয়েকটি মাঠের কয়েক হাজার বিঘা জমির ধানের চারা সাত দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে। ধানের চারাগুলো ডুবে থাকায় অনেকটা ক্ষতির মুখে এলাকার কয়েকশ কৃষক।

 

এরই মধ্যে স্লুইচগেট খুলতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীকে (বিএসএফ) চিঠি দিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ভাইগড় ক্যাম্প। উপজেলা প্রশাসনের দাবি, খুব দ্রুত সমস্যাটি সমাধান হয়ে যাবে।

 

শনিবার দুপুরে উপজেলার বেশ কয়েকটি মাঠে দেখা গেছে, মাঠগুলো পানিতে তলিয়ে আছে। ধানের চারা দেখা যাচ্ছে না। বিলগুলো দেখতে অনেকটা বড় নদীর মতো মনে হচ্ছে।

 

গাইবান্ধায় তীব্র নদী ভাঙন : গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর তীরে তীব্র আকার ধারণ করেছে ভাঙন। গত এক সপ্তাহে সাঘাটা উপজেলার মুন্সিরহাট পয়েন্টে অন্তত দুই শতাধিক বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কচুয়া, ভরতখালী, সাঘাটা, মুক্তিনগর, ঘুড়িদহ, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, শত শত বিঘা আবাদি জমি, গাছপালাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

 

হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও বসতবাড়িসহ বহু স্থপনা। ভাঙন ঠেকাতে বিভিন্ন পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

 

সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে সাঘাটা ইউনিয়নের মুন্সিরহাট বাজারের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক দোকানপাট। ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো ওয়াপদা বাঁধ, মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়, খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

 

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মজিবর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, গাইবান্ধার যেসব পয়েন্টে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে, সেসব জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে।