বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ জেলা ভোলার পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

প্রতিদিনেরচিত্র ডেস্ক

২৭ আগস্ট ২০২৩, ১২:৩০ পিএম


বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ জেলা ভোলার পর্যটন সম্ভাবনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভাবনা


'কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ' নামে পরিচিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দ্বীপ জেলা ভোলা। গ্যাস,বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ এই জেলা। পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনার স্বর্গরাজ্যে বলা হয় এই জেলাকে। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন জলরাশি দ্বারা বেষ্টিত। এই জেলায় মুক্তার দানার মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে জলরাশির বুকে জেগে আছে বেশকিছু চর অঞ্চল সহ বেশকিছু দর্শনীয় স্থান। যা ভ্রমণ পিপাসুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। দ্বীপ জেলা ভোলার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা নিয়ে খুঁটিনাটি জানাচ্ছেন দ্বীপ জেলা ভোলার একদল মেধাবী শিক্ষার্থী।

 

তাদের মতামত তুলে ধরেছেন, ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ও ফিচার লেখক হাসান মাহমুদ শুভ।
যোগাযোগঃ ০১৭৭৫৬২৯০০৫

 

সম্ভাবনায় সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের হাতছানি ভোলায়।


দ্বীপ জেলা ভোলা যেন দিন দিন পর্যটনের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হচ্ছে। প্রকৃতি তার অপার সৌন্দর্য মেলে ধরছে ক্রমশ। পাহাড় আর ঝর্ণা ছাড়া পর্যটনের আর কোন উপাদান যেন এখানে বাকি নেই। প্রাকৃতিকভাবে সমুদ্র সৈকত, জীববৈচিত্র্য, সাগরের জলরাশি পর্যটকের প্রতি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে। সুবিস্তৃত তারুয়া সমুদ্র সৈকত, খেজুর গাছিয়া সমুদ্র সৈকত, চর কুকরিমুকরিতে হরিণসহ নানা জীবপ্রাণী, আর সাগর নদীর উপকূলীয় মোহনীয়তা। এই সবকিছুই হাতছানি দিয়ে ডাকে পর্যটকদের। এছাড়াও ভোলায় রয়েছে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। রয়েছে শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ড। আরো আছে পার্ক, খামারবাড়িসহ নানান দর্শনীয় স্থান। এসব স্থানগুলোতে প্রতিনিয়ত আসছেন বিভিন্ন দর্শনার্থী। এদেরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠেছে মানুষের ব্যবসা বাণিজ্য, পরিবহনসহ নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। সবমিলিয়ে পর্যটন সম্ভাবনায় আগামীর টার্নিং পয়েন্টে পরিণত হচ্ছে কুইন আইল্যান্ড অব বাংলাদেশ খ্যাত জেলা ভোলা।

 

-অনিল মো. মোমিন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

 

মনপুরা সৌন্দর্যের লীলাভূমি।


এক দিকে মেঘনা আর এক দিকে বঙ্গপোসাগর দ্বারা বেস্টিত অপরুপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি মনপুরা।পুরো দ্বীপ জুড়ে রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দযের মনোরম পরিবেশ।দ্বীপের দক্ষিণ দিকে বঙ্গপোসাগরের তীরে "দক্ষিণা হাওয়া সী বীচের" অবস্থান। এখানে থেকে সূর্যোদয়  ও সূর্যাস্তের অনাবিল আনন্দ উপভোগ করা যায়।রাতে সমুদ্রের তীরে ক্যাম্পিং করে সমুদ্রের গর্জন উপভোগ করতে পারবেন যা এক রোমাঞ্চকর অনুভূতির  জন্ম দিবে।জোয়ারের সময় হরিণের অভায়াশ্রম গুলো প্রধান সড়কের কাছে চলে আসে। এছাড়া ও রয়েছে মনপুরা ল্যান্ডিং স্টেশন,যা নদীর ৫০০ মিটার ভেতরে তৈরি করা। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু পর্যটকরা না, স্থানীরাও সময় কাটাতে আসে এখানে। রাতে এখানে বসলে, মনে হবে আপনি মেঘনা নদীর গভীরে ভাসছেন।শীতকাল এই দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হলে ও এখানে সারাবছর
পর্যটক রা ঘুরতে আসেন।চঞ্চল চৌধুরী অভিনীত মনপুরা ছবি এই দ্বীপের জনপ্রিয়তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

 

আতিকুর রহমান শাকিল
শেরে-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ, বরিশাল।

 

যে টাওয়ার থেকে বঙ্গোপসাগর দেখা যায়!

 

জ্যাকব টাওয়ার দক্ষিণ বাংলাদেশের ভোলা দ্বীপের চর ফ্যাশন সিটিতে অবস্থিত একটি পর্যটন ওয়াচটাওয়ার। এই টাওয়ার থেকে ১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা অবধি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। এটি উপমহাদেশের দীর্ঘতম ওয়াচ টাওয়ার। এটি আইফেল টাওয়ারের স্টাইলে নির্মিত হয়েছে। এই ১৭ তলা বিশিষ্ট ওয়াচ টাওয়ারটি প্রতিটি মেঝেতে ৫০ জন এবং পুরো টাওয়ার জুড়ে ৫০০ দর্শনার্থীদের একসঙ্গে উপভোগের সুযোগ রয়েছে।
এখান থেকে আপনি চর কুকরী-মুকরি, তারুয়া সমুদ্র সৈকত, স্বপ্নের দ্বীপ মনপুরার চর পাইয়াল, হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ এবং বঙ্গোপসাগর দেখতে পাবেন। টাওয়ারের ভিতরে বিশ্রাম নেওয়ার, খাবারের ব্যবস্থা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।৭৫ ফুট মাটির নিচে কাস্ট-পাইলিং ম্যাথোডের ভিত্তিতে নির্মিত, টাওয়ারটি 8 মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করতে পারে।টাওয়ারটির নকশা করেছেন স্থপতি কামরুজ্জামান লিটন।
এই ওয়াচ টাওয়ার ভোলার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

 


মাহমুদা খানম প্রাপ্তি
সিটি মেডিকেল কলেজ,গাজীপুর।

 

যে দ্বীপ সুন্দরবনের প্রতিচ্ছবি।


বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ জেলা ভোলায় রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন, নদী এবং সৈকত সহ বহুমুখী প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে: তারুয়া সমুদ্র সৈকত, চর কুকরি মুকরি,নারিকেল বাড়িয়া, চরফ্যাশনের জ্যাকব টাওয়ার,প্রশান্তি পার্ক,খামারবাড়ি, মনপুরা, মনপুরার দক্ষিণা হাওয়া সী-বীচ, ফাতিমা ডিজিটাল জাদুঘর এবং ভোলার তুলাতুলি।
তারমধ্যে দর্শনার্থীরা চর ফ্যাশন উপজেলার তারুয়া সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন।যেটা কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার সমুদ্রসৈকতের তুলনায় কোনো দিক থেকেই কম নয়।
জিগজ্যাগ সরু খালগুলি বনের মধ্য দিয়ে চলাচল করে, যা প্রকৃতি প্রেমীদের মন নিসন্দেহে আকর্ষণ করবে। আর ভোরবেলা, চর কুকরি মুকরির সৈকতের তীর ঘেষে দেখা যায় অপরুপ একদল হরিণের পাল। যেটা সুন্দরবনের-ই প্রতিচ্ছবি। যা দেখার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন দর্শনার্থীরা।

 


মোঃ মোস্তফা তাওহীদ
প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ।

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই শান্তি ছড়ায়


আমরা ভ্রমণের মাধ্যমে বিশ্বজয় করতে পারি কারণ, ভ্রমণ মানুষের দূরদর্শী,স্পষ্টবাদিতা, গভীর চিন্তা শক্তি, নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলার অভিজ্ঞতা, ঝুঁকি নেওয়ার সাহস, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য শান্তি ছড়ায় এবং সে শান্তিতে মনের প্রকৃত আনন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। যেখানে রয়েছে সারি সারি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট,এবং সেই বনে রয়েছে নানান প্রজাতির দেশীয় বন্য প্রাণী। যেখানে নিমিষেই দেখতে পাওয়া যায় বিচিত্র নকশায় অলংকৃত জেলেদের মাছ মারার ছোট-বড় অসংখ্য ট্রলার, ডিঙ্গি নৌকা ও বিনোদনের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ ও নদীতে গোসল করার সুযোগ। খাবারের জন্য রয়েছে নানা প্রকৃতির সামুদ্রিক মাছ; রুপালি ইলিশ, লাল-সাদা কাঁকড়া, বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি তাদের মধ্যে অন্যতম।
সেখানকার মানুষের সরলতা ও অতিথি পরায়ণতা আপনাকে মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে।
তাছাড়া গভীর দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায়, সেখানকার শ্রমজীবী মানুষের প্রকৃতিক নানা দুর্যোগের সাথে লড়াই করে বেঁচে থাকার চেষ্টা; আমিও তাদের একজন।
বিরক্ত হয়ে হয়তো জানতে চাচ্ছেন কোন নদী বন্দরের কথা বলা হচ্ছে,
হ্যাঁ বলছি, সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা, স্বর্গীয় আভাসপূর্ণ অপরূপ সুন্দর, মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত- “খেজুরগাছিয়া পর্যটন কেন্দ্রের” কথা; যা ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণে মেঘনা নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত।
আসুন মাতৃভূমি ও পৃথিবীর সৌন্দর্য উপলব্ধি করে জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে জীবনকে বিকশিত করি।

 


ইউসুফ শরীফ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

ভোলা পর্যটন নগরী হিসেবে স্বীকৃতি পাক


প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি দ্বীপ জেলা ভোলা। রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চল। জমিদার বাড়ি, মোস্তফা কামাল জাদুঘর, চর কুকরি মুকরি, মনপুরা,তারুয়া সমুদ্র সৈকত, খেজুর গাছিয়া সমুদ্র সৈকত সহ অনেক পর্যটন স্থান।আরো রয়েছে ম্যানগ্রোভ বন,বিভিন্ন বন্য প্রাণী ও বাহারি প্রজাতির বৃক্ষ। বিভিন্ন চর নিয়ে তৈরি এই অঞ্চলে রয়েছে চোখ ধাঁধানো সব দৃশ্য। যা নিসন্দেহে যেকোনো দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নিবে। সম্ভাবনা ও আনন্দের বিষয় হচ্ছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে  পর্যটকদের ভীড় নজরে পড়ার মতো। সময়ের সাথে যেন এই ভীড় জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভীনদেশী  পর্যটকদের দেখা মিলবে এই জেলায়! যা ভোলার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।
পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভর করে ভোলার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মজবুত হচ্ছে। যা আমাদের জন্য ইতিবাচক বটে। ভোলা জেলা দেশের অন্যতম পর্যটন নগরী হিসেবে স্বীকৃতি পাক এমনটাই প্রত্যাশা।

 

নাজনীন নাহার অশ্রু
সিটি মেডিক্যাল কলেজ, গাজীপুর।