অপরাধ ছাড়াই আমাকে গ্রেফতার করা হয়: ট্রাম্প

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

২৬ আগস্ট ২০২৩, ১১:০৮ এএম


অপরাধ ছাড়াই আমাকে গ্রেফতার করা হয়: ট্রাম্প

 

 

বয়স ৭৭ বছর। উচ্চতা ছয় দশমিক তিন ইঞ্চি। ওজন ২১৫ পাউন্ড অর্থাত্, ৯৭ কেজি। তার কয়েদি নম্বর- পি০১১৩৫৮০৯। এই বর্ণনা বিশ্বের সাধারণ কোনো নাগরিকের নয়। বিশ্বের পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি ইতিহাস গড়েছেন। তবে রেকর্ডটি ভালো নয়। তিনি এখন বিখ্যাত মানুষের খারাপ রেকর্ডের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প আটলান্টার ফুলটন কাউন্টি জেলে আত্মসমর্পণ করেন। তাকে গ্রেফতার করা হয়। ২০ মিনিট পর মুচলেকা দিয়ে মুক্ত হন সাবেক প্রেসিডেন্ট। এই প্রথম কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফৌজদারি অভিযোগে গ্রেফতার হয়ে জেল খাটলেন। যদিও ট্রাম্পকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেছেন, কোনো অপরাধ না করেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
 

 

২০ মিনিট জেলে ছিলেন ট্রাম্প

জেলে পৌঁছানোর পর গ্রেফতারের সব নিয়ম পালন করা হয়। ট্রাম্পের মাগশট অর্থাত্, মুখের ছবি তোলা হয়। যে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেফতার করলেই এই ছবি নেওয়া হয়। তার আঙুলের ছাপও নেওয়া হয়েছে। রেকর্ডে লেখা হয়েছে, ৭৭ বছরের সাবেক প্রেসিডেন্টের উচ্চতা ছয় দশমিক তিন ইঞ্চি। ওজন ২১৫ পাউন্ড অর্থাত্, ৯৭ কেজি। তার চুলের রঙেরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ লেখা হয়েছে জেলের রেকর্ডে। সব মিলিয়ে ২০ মিনিট আটলান্টা জেলে ছিলেন ট্রাম্প। দুই লাখ ডলারের বন্ডে সই করে পরে জামিন নেন তিনি। এর আগেও তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু এই প্রথম জেলে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন তিনি। তার বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিটি অভিযোগই ফৌজদারি অপরাধের। ফলে গ্রেফতারের সময় এক জন সাধারণ অপরাধীর মতোই দেখা হয়েছে তাকে।

 

জেলে ট্রাম্পের তোলা ছবি নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। ফুলটন কাউন্টির শেরিফের অফিস থেকে প্রকাশিত ছবিতে তাকে গাঢ় নীল সুট, সাদা শার্ট এবং লাল টাই পরে ক্যামেরার দিকে তাকাতে দেখা গেছে। চোখেমুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এই ছবিটিকে অনেকেই ‘ঐতিহাসিক’ ছবি বলে মন্তব্য করেছেন। কারণ, আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্টের মধ্যে ট্রাম্পই প্রথম যিনি ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হয়ে গ্রেফতার হলেন এবং যার মাগশট নেওয়া হলো।

 

‘ক্ষুব্ধ’ ট্রাম্প যা বললেন

সবকিছু হয়ে যাওয়ার পর নিজের প্রাইভেট জেটে ফের নিউ জার্সির দিকে রওনা হন ট্রাম্প। এর আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, তার সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। তার বক্তব্য, ‘কোনো ব্যক্তির একটি নির্বাচন প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ মনে হতেই পারে। এটি কোনো ক্রিমিনাল অপরাধ নয়।’ এরপর নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ তিনি জেলে তোলা তার মাগশটের ছবি প্রকাশ করেন। সেখানে জানিয়ে দেন, ‘কোনো অপরাধ ছাড়াই আমায় গ্রেফতার করা হলো।’

 

ট্রাম্প বলেন, ‘আমেরিকার কাছে আজ অত্যন্ত দুঃখজনক দিন। আমি কোনো ভুল করিনি। বিচারব্যবস্থার সঙ্গে প্রতারণা করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।’ সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনি প্রচারের পেজে এই মন্তব্য করেছেন তিনি। বস্তুত, এদিন আটলান্টা জেলের বাইরেও বেশকিছু ট্রাম্প সমর্থক জড়ো হয়েছিল। তাদের অভিযোগ, মাগশট তোলা বাধ্যতামূলক নয়। ট্রাম্পের মাগশট তোলার প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্টকে অপমান করার জন্যই এ কাজ করা হয়েছে।

 

যে অভিযোগে ট্রাম্প গ্রেফতার

২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জিয়া প্রদেশে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী তথা তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। ফলপ্রকাশ হলে দেখা যায়, ১২ হাজার ভোটে জিতে গেছেন বাইডেন। ট্রাম্প দাবি করছিলেন, গণনায় কারচুপি করা হয়েছিল। এরপর তার বিরুদ্ধেই পালটা কারচুপির অভিযোগ আনা হয়। জর্জিয়া প্রদেশের ফলাফল পালটে দেওয়ার চেষ্টায় অভিযুক্ত করা হয় তাকে। জর্জিয়ার আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মোট ১৩টি অভিযোগ আনা হয়েছিল। তার মধ্যে রয়েছে জর্জিয়ার গুন্ডামিবিরোধী র্যাকেটিয়ারিং আইন লঙ্ঘন করা, সরকারি কর্মকর্তার শপথ লঙ্ঘন এবং জালিয়াতির ষড়যন্ত্র।

 

ট্রাম্পের সঙ্গেই অভিযুক্ত হন তার দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী হোয়াইট হাউজের তত্কালীন চিফ অব স্টাফ মার্ক মেডোস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের আইনজীবী রুডি জুলিয়ানি। তাছাড়া, আমেরিকান বিচারবিভাগের তত্কালীন কর্তা জেফরি ক্লার্কসহ আরো ১৬ জনের বিরুদ্ধে একই রকম অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের সবাইকে আত্মসমর্পণের জন্য ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনেই বৃহস্পতিবার জর্জিয়ার ঐ কারাগারে গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ট্রাম্প। ট্রাম্প ছাড়া এই মামলার অন্য অভিযুক্তরাও আত্মসমর্পণ করেছেন। এর আগে ট্রাম্প তিনটি ফৌজদারি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। চারটি মামলায় তার বিরুদ্ধে ৯১টি অভিযোগ রয়েছে।

 

ট্রাম্প নিষিদ্ধ হবেন!

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট পদে কে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন তার নিয়ম সংবিধানে রয়েছে এবং এগুলো বেশ সহজ। এক জন প্রার্থীর বয়স কমপক্ষে ৩৫ বছর হতে হবে, তাকে জন্মগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে এবং কমপক্ষে ১৪ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি অভিযোগের মুখোমুখি হওয়ার পরও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন। এর সর্বশেষ উদাহরণ হলো জর্জ ডব্লিউ বুশ। মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর জন্য যিনি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন।

 

সম্প্রতি দ্য আটলান্টিক ম্যাগাজিনে এক নিবন্ধে উদার আইনের অধ্যাপক লরেন্স ট্রাইব এবং জে. মাইকেল লুটিগ জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের গৃহযুদ্ধ-পরবর্তী ১৪তম সংশোধনীর একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের কেউ যদি সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে শপথ নিয়ে বিদ্রোহ করেন বা বিদ্রোহে জড়িত থাকেন বা সরকারের শত্রুকে সহায়তা করেন তাহলে তিনি পরবর্তী সময়ে সরকারি অফিসে বসার যোগ্য হবেন না। সাবেক প্রেসিডেন্টের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে উলটে দেওয়ার প্রচেষ্টা এবং এর ফলে মার্কিন কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ তাকে অযোগ্যতার ধারার আওতায় নিয়ে গেছে। তাই তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালনের অযোগ্য।’