নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ ও প্রতিকারবিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:৩৯ পিএম

ছবি- সংগৃহীত।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ও উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর যৌথ উদ্যোগে “নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা - মানবাধিকার লংঘন, আসুন সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার জন্য সমন্বিত সেবা নিশ্চিত করি”-প্রতিপাদ্যটির আলোকে নারী ও কন্যা নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রম আরও সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয় উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-তেজগাঁও, ঢাকা এর অডিটোরিয়ামে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-এর উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের উপ-পুলিশ কমিশনার জনাব হুমায়রা পারভীন; প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এর অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) জনাব ড.খ: মহিদ উদ্দিন বি পি এম-বার; বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু; কর্মশালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম।

স্বাগত বক্তব্যে সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন উচ্চতর পদে নারীরা কর্মরত আছেন এবং সহিংসতা প্রতিরোধে তারা অনেক ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও নারীর প্রতি সহিংসতা নারী আন্দোলন ও রাষ্ট্রপরিচালনা কারীদের জন্য উদ্বেগের বিষয়। তিনি নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী আন্দোলনকে আরো ত্বরান্বিত করতে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আরো তৎপরতার সাথে পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য ও গৃহীত নতুন আইনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানতে এবং আন্দোলনের সাথে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মাসুদা রেহানা বেগম নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যার জন্য সহনশশীল ও অনুভূতিশীলতার জায়গা থেকে কাজ করার লক্ষ্যে জেন্ডার জাস্টিস সিস্টেম উন্নত করতে উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ পরস্পর সমন্বয় করে কাজ করলে তা অধিক কার্যকর ও প্রসারিত হবে বলে মন্তব্য করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জনাব ড.খ: মহিদ উদ্দিন বি পি এম-বার বাংলাদেশের সংবিধানের আলোকে নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার ও সমতা প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠুভাবে আইনের প্রয়োগও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, আইনি সহায়তা ও সেবাদানকারীদের কাজের ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব পরিহার করে, উদাসীনতা ও দূর্নীতিমুক্ত থেকে নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে সহিংসতার শিকার নারীদের অভিযোগ গ্রহণ করতে হবে, প্রয়োজন অনুসারে দায়িত্বশীলতার সাথে তাদেরকে সেবা দিতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জনাব হুমায়রা পারভীন বলেন, অর্ধেক জনগোষ্ঠীর ৫০% নারী বেশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পরিবারের বাইরে ও সাইবার প্লেসে গড়ে ৩৫০ টির বেশি মামলা হয়ে থাকে নারী নির্যাতনের। উইমেন সাপোর্ট ও ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট, যেখানে পারিবারিক ও জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার অভিযোগ গ্রহণ করা হয়। নারী নির্যাতন রোধে নারী পুলিশকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে প্রচলিত আইন, প্রসিডিংস, মামলার রায় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ১ম ও ২য় কর্ম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১ম কর্ম অধিবেশনে সেক্স ও জেন্ডার ধারনা : পরিপ্রেক্ষিত নারীর মানবাধিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা; নারীর অধিকার রক্ষায় মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা সম্বলিত কতিপয় রায় বাস্তবায়ন বিষয়ে করনীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাড. মাকছুদা আখতার; পারিবারিক নির্যাতনের শিকার নারী ও কন্যা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র আইনজীবী ও কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড উপ-পরিষদের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট দিপ্তী সিকদার। ২য় কর্ম অধিবেশনে সাইবার নিগ্রহ,নিপীড়ন, আইনী সুরক্ষা ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাম লাল রাহা। আলোচনা শেষে নারী ও কন্যা নির্যাতনের মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ ও করনীয়; গণপরিবহন ও গণপরিসরে যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় এবং পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধে পুলিশ কর্মকর্তাদের ভূমিকা ও করণীয়-এর উপর দলীয় কাজ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)-এর সদস্যবৃন্দ।
প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের আইনজীবী অ্যাড. ফাতেমা খাতুন।