শীতে মেয়েদের ত্বকের যত্ন
প্রতিদিনের চিত্র
প্রকাশিত : ১০:৫২ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ বুধবার

মডেল- স্পর্শিয়া
সুস্থ, সুন্দর ত্বক সবাই চায়। কিন্তু বলা যতটা না সহজ, ত্বকে সুস্থতা বজায় রাখা তার চেয়ে অনেক কঠিন। সঠিকভাবে যত্ন না নেওয়ার কারণে ত্বকে নানা সমস্যা হতে পারে। তাই উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর ত্বক পেতে খেয়াল রাখতে হবে নিজের। করণীয় জানালেন আরফাতুন নাবিলা
ময়েশ্চারাইজার : ত্বকে ব্রণ হলে চিন্তার শেষ থাকে না। তবে অনেকেই ভাবেন ত্বক তৈলাক্ত হলে আলাদা করে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু সাবান বা ফেসওয়াশের মাধ্যমে যদি ত্বক থেকে তেল সরিয়ে ফেলা হয়, তাহলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে অনেক বেশি। আর্দ্রতা বজায় রাখতে তৈলাক্ত ত্বক হলেও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে নিয়মিত। মেকআপ করার সময় তৈলাক্ত ভাব কমিয়ে নেওয়া হয়। তাই রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মেকআপ মুছে ত্বক ময়েশ্চারাইজ করে নিতে হবে।
নখ চালাতে মানা : না বুঝে ত্বকে কখনোই নখ দিয়ে আঁচড় দেওয়া যাবে না। যদি ত্বকে লুকিয়ে থাকা ব্রণ স্পষ্ট করতে চান, তবে পানি দিয়ে ভালো করে মুখ ধুয়ে নিন। মুখ ধোয়ার পর স্পষ্টভাবে ব্রণ দেখা যাবে। নখের আঁচড় কখনোই ত্বকের জন্য ভালো কিছু নয়।
মিষ্টি খাবার থেকে দূরে : মিষ্টি খেলে বাড়তি ইনসুলিন তৈরি হয়। মুখের ত্বকেও এর প্রভাব পড়ে। ত্বকে তখন বাড়তি তেল উৎপন্ন হয়। তাই ত্বক ভালো রাখতে মিষ্টি খাবার কম খেতে হবে।
সানস্ক্রিনের ব্যবহার : বেশি সময় রোদের মধ্যে থাকলে ত্বকে ভাঁজ, ব্রণ, দাগ_ এমনকি ত্বকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যেতে পারে। তাই বাইরে বের হওয়ার সময় ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। সারা দিন যদি রোদে থাকতে হয়, তবে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে নিন।
স্বাস্থ্যকর খাবার : ত্বক সুরক্ষিত রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার নিয়মিত খাওয়া জরুরি। প্রচুর ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। বাদাম ও মাছ শরীর থেকে ক্ষতিকারক তেল বের করে ফেলতে সহায়ক। সোডা, মিষ্টিজাতীয় খাবার যতটা সম্ভব কম খেতে হবে।
নিয়মিত ঘুম : নিয়মিত পরিপূর্ণ ঘুম হলে পুরো শরীর বিশ্রাম পায়। ঘুম না হলে বাড়তি চিন্তা যুক্ত হয়, যা ত্বকের সুস্থতাও ব্যাহত করে অনেকাংশে। রাতে অবশ্যই ছয়-আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ঘুমানোর সময় বিছানার চাদর এবং বালিশ যেন অবশ্যই পরিষ্কার থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
ব্যায়াম : ব্যায়াম যে শুধু আপনার স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে তাই নয়, ত্বককে ভালো রাখতেও নিয়মিত ব্যায়াম করা জরুরি। ব্যায়াম করলে শরীরে রক্তসঞ্চালন ভালোভাবে হয়। এ ছাড়া ত্বকের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি সঠিকভাবে পৌঁছে যায়। একই সময়, হৃদযন্ত্র, ফুসফুস এবং ত্বক সবকিছুর একই সঙ্গে উন্নতি হয়। ব্যায়াম শেষে অবশ্যই শরীরের ঘাম ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে।
গাজরে ছোঁয়া
ত্বকের যত্ন : ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে ত্বকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি এবং পটাশিয়াম না থাকলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। প্রতিদিন গাজরের জুস খেলে ত্বকে পটাশিয়ামের অভাব দূর হবে। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে। একটু বয়স হলেই ত্বকে বলিরেখা দেখা দেয়। এ ছাড়া ত্বক অনুজ্জ্বল ও দাগ হয়ে যায়। সূর্যের আলোতেও ত্বকে সানবার্ন হয়। নিয়মিত গাজর খেলে বাহ্যিক ক্ষতি থেকে ত্বক রক্ষা পায় এবং ত্বকে সহজে বয়সের ছাপ পড়ে না। গাজর মুখের বলিরেখা, দাগ ছোপ ও পিগমেন্টেশন প্রতিরোধ করে। ত্বকের স্বাস্থ্য ভেতর থেকে ভালো থাকে। গাজরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যেগুলো ত্বককে ব্রণ থেকে রক্ষা করে। গাজরের ভিটামিন-এ ও বিটা ক্যারোটিন ত্বককে উজ্জ্বল করে। গাজর বেটে এর সঙ্গে মধু মিশিয়ে নিয়মিত লাগালে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
চুলের যত্ন : চুল পড়া রোধে গাজরের ভিটামিন ও মিনারেল কার্যকর। নিয়মিত গাজরের জুস খেলে চুলের গোড়া মজবুত হয়। গাজরের ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-ই মাথার ত্বক ও চুলের গোড়ায় পুষ্টি প্রদান করে। নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
গাজরের ফেসপ্যাক : ত্বক
উপকরণ : দুই টেবিল চামচ কুচি করা গাজর, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ দুধের ক্রিম, কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল।
কীভাবে ব্যবহার করবেন : কুচি করা গাজরের পেস্ট তৈরি করুন। একটি বাটিতে গাজর পেস্ট ও বাকি সব উপাদান নিয়ে একটি ঘন মসৃণ মিশ্রণ তৈরি করুন। এবার পুরো মুখে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
গাজরের হেয়ারপ্যাক : চুল
উপকরণ : ৩ টেবিল চামচ সেদ্ধ করা গাজর বাটা, একটি পাকা কলা, ১ টেবিল চামচ মধু, ১ টেবিল চামচ টকদই, সামান্য অলিভ অয়েল।
কীভাবে ব্যবহার করবেন : একটি পাত্রে সেদ্ধ করা গাজর বাটা নিন। একটি পাকা কলা টুকরো করে নিন। তাতে দই, অলিভ অয়েল ও মধু নিয়ে ব্লেন্ডার দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পুরো চুল প্রথমে ভালোভাবে আঁচড়ে নিন। মাথার চুল দুই ভাগে ভাগ করে ধীরে ধীরে পুরো চুলে মিশ্রণটি লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে পুরো মাথা ঢেকে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা আপেক্ষা করুন, যেন মিশ্রণটি মাথার ত্বক ও চুলে সঠিকভাবে কাজ করতে পারে। এবার ঠাণ্ডা পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। নিষ্প্রাণ, মলিন ও দুর্বল চুলের জন্য এটি অত্যন্ত কার্যকর ।