ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ মে ২০২৩,   জ্যৈষ্ঠ ১৬ ১৪৩০

কচুশাকের উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

এম,এ মামুন, সাতক্ষীরা

প্রতিদিনের চিত্র

প্রকাশিত : ০২:৫৯ পিএম, ২০ জুলাই ২০২০ সোমবার

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

 

আমাদের দেশে কচুশাক খুবই পরিচিত একটি শাক, এই শাক বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের জনপ্রিয়। খুব সহজে এই খাবাপর উদ্ভিদটি বাড়ির সন্নিকাট- যেমন ধানের ক্ষেতের আইলে, খাল-বিলের ধারে যত্রতত্র বিনা যত্নে পাওয়া যায়। গ্রামের মানুষ কখনো এই কিনে খায় না। এই কচুশাক বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয়। বিশেষ করে ভর্তা ও তরকারি বেশ জনপ্রিয়। ইলিশ মাছ, ছোট মাছ, চিংড়ি বা মাছের শুটকি  দিয়ে কচু শাকের তরকারি অসাধারণ হয়। শাকটি সহজলভ্য বলে অনেকেই গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এই কচু শাকই একমাত্র দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদার পূরণ অগ্রণী ভুমিকা রাখতে পারে। ভিটামিন এ এর খুব ভালো উত্‍স এই কচুশাক। ভিটামিন এ-এর অভাবে হওয়া সকল ধরনের রোগ প্রতিরোধে কচুশাক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে যেমন- রাতাকানা রোগ। এবং এই কচুশাক আয়রনসমৃদ্ধ বলে অনেকেই এর সমাদর বেশি করে। অনেকের শরীরে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ স্বল্পতা দেখা দিলে সব ডাক্তাররাই কচু শাক খাওয়ার পরামর্শ দেন। কচুশাক এ শুধু ভিটামিন এ রয়েছে তা নয়, এর পাশাপাশি এতে রয়েছে ভিটামিন বি এবং সিও। এমনকি মুখ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধেও কচুশাক সর্বাধিক ভূমিকা রাখে। এ শাকের মধ্যে উপাদান রয়েছে উচ্চমাত্রায় পটাশিয়াম, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মত মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে বাঁচায়। তাহলে আসুন আমরা সচেতনভাবে জেনে নেওয়া কচু শাক এর কার্যকারীতা, উপকারিতা এবং পুষ্টিগুণের কথা।

★ কচুশাকের কেমন পুষ্টিগুণঃ
সাধারণ এই কচু শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান। বিজ্ঞানের পরিভাষায় প্রতি ১০০ গ্রাম কচুশাকে খাদ্যশক্তি রয়েছে ৬.৮ গ্রাম শর্করা, ৩.৯ গ্রাম প্রোটিন, লৌহ- ১০ মিলিগ্রাম , ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)- ০.২২মিলিগ্রাম , ভিটামিন বি-২ (রাইবোফ্লেবিন)- ০.২৬ মিলিগ্রাম , ভিটামিন ‘সি’- ১২ মিলিগ্রাম , স্নেহ বা চর্বি- ১.৫ গ্রাম , ক্যালসিয়া- ২২৭ মিলিগ্রাম এবং ৫৬ কিলোক্যালরি।

★কাচু শাকের উপকারিতাঃ

জেনে নেওয়া যাক কচুশাকের  পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা-

কচু শাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকায় রক্তশূন্যতায় ভোগা মানুষদের কচুশাক খাওয়া একরকম আবশ্যক। কচুশাক রাতকানা ও চোখের ছানি পড়াসহ চোখের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টিশক্তি বুদ্ধি করে। এই কচু শাকে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার, যা যেকোন খাবারকে দ্রুত হজম করতে সহযোগীতা করে। ডাক্তাররা বহু রোগীকে বলে থাকেন যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা আছে, তাঁরা যেন বেলায় বেলায় খাবারে কচুশাক আইটেম রাখন।

 

কি নাই কচু শাক আর কচুতে? কচুশাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ যা মানব শরীরে লৌহ উপাদান সহজে আত্তীকরণ হয়ে যায়। এছাড়া ভিটামিন সি শরীরের ক্ষত শুকাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিটি শিশুকে ছোট বেলা থেকেই কচু শাক খাওয়ানো অভ্যাস করা।

 

মানবশরীরে কচু শাক অক্সিজেনের সরবরাহ সচল রাখতে অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। এই কচুশাকের আয়রন ও ফোলেট মানবদেহে রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। যার ফলে অক্সিজেন সংবহন অবস্থা পর্যাপ্ত থাকে। এতে উপস্থিত ভিটামিনকে কাটাছেঁড়া রক্তপাতের সমস্যা প্রতিরোধ করে।

 

কচু শাকের মূল উপকারিতা হল প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাংগানিজ ও ফসফরাস থাকা। স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বলছে দাঁত ও হাড়ের গঠনে এবং ক্ষয়রোগ প্রতিরোধে কচু শাকের গুরুত্বঅপরিসীম।


কচু শাকে বিদ্যমান নানা রকমের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান গর্ভবর্তী মা ও শিশুর জন্য অনেক উপকারী। কচু শাক সহজ লভ্য তাই দরিদ্র পরিবারের গর্ভবতী মহিলারা ভিটামিন ও আয়রনের চাহিদা পূরণের জন্য এই কচুশাক খেতে পারেন।
কচুশাক খেলে রক্তের কোলেস্টরেল মাত্রা কমে যায়, এবং উচ্চরক্ত চাপে ভোগা রোগীদের জন্য কচুশাক এবং কচু বেশ উপকারী। নিয়মিত কচুশাক খেলে কোলন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।

★সতর্কতাঃ
অনেকের কচু শাক বা কচু খেলে গলা চুলকায় কারন অক্সলেট নামক একটি উপাদান থাকার কারণে। তাই কচু রান্না করার সময় লেবুর রস বা সিরকা ব্যবহার বাঞ্চনীয়। তবে যাদের শরীরে অ্যালার্জির সমস্যা আছে তাদের কচু বা কচুশাক না খাওয়াই ভালো।