সকালে খালি পেটে কি কি খাবেন
প্রতিদিনের চিত্র ডেস্ক
প্রতিদিনের চিত্র
প্রকাশিত : ০৬:২৬ পিএম, ২৪ আগস্ট ২০২১ মঙ্গলবার

আমাদের অনেকের ধারণা নেই সকালে উঠে কি কি খাওয়া যাবে, আর কি কি খাওয়া যাবেনা। তবে, সকালে উঠে হাটাহাটির পর হালকা নাশতা করে দিন শুরু করা স্বাস্থ্যকর। বেশী পেট ভরে খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর বা দীর্ঘ বিশ্রামের পর পুরো শরীর স্বাভাবিক হতে বেশ কিছু সময়ের প্রয়োজন হয়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নির্দেশনা হচ্ছে, দিনের শুরুতে হালকা গরম পানি ও হালকা খাবার দিয়ে শুরু করা। তাতে শরীরের বিপাক-প্রক্রিয়া ঠিক থাকে। এছাড়া দিনের প্রথম খাবার বা নাশতার আগে স্বাস্থ্যকে সুস্থ ও সবল রাখার জন্য বেশ কিছু খাবার দিয়ে সকালটা শুরু করতে পারলে অত্যন্ত ভাল হয়।
ভারতের মুম্বাইভিত্তিক পুষ্টিবিদ রুপালি দত্ত বলেন, সকাল শুরুর জন্য সঠিক খাবার পছন্দ করা গুরুত্বপূর্ণ। সকালে ঘুম থেকে জাগার দুই ঘণ্টা পরে নাশতা খাওয়া উচিত। এর আগে কিছু খাবার বা পানীয় খেতে পারেন। বিশ্বের নামীদামী স্বাস্থ্য বিজ্ঞানী এবং পুষ্টিবিদদের একি মতামত। দেখে নিন সে তালিকা:
► পানি পান করা
পানির অপর নাম জীবন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথমে ১ অথবা ২ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন সেটি কুসুম গরম পানি হলে আরও ভাল হয়। খালি পেটে পানি খাওযার অনেক উপকারীতা রয়েছে। সকালে খালি পেটে পানি পান করলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও এর প্রক্রিয়া সহজ হয়। রক্তের দূষিত পদার্থ বের হয়ে যায়, অ্যাসিডিটি থাকেনা এবং বমির ভাব, গলার সমস্যা ও মাসিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে। ডায়রিয়া, কিডনির সমস্যা, মাথা ব্যাথ্যা ইত্যাদি অসুখ কমাতে সহায়তা করে। নতুন মাংসপেশী ও কোষ তরান্বিত হয়। এতগুলো কার্যকরী উপকার শুধু বিশুদ্ধ পানির মধ্যেই পাবেন। তাই অবশ্যই সকালে ঘুম থেকে উঠে সর্বপ্রথমে আপনাকে ১ অথবা ২ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।
► মধুর সঙ্গে হালকা গরম পানি
ওজন কমাতে চাইলে সকালে প্রতিদিন সকালে মধু খেতে হবে, কারণ মধু ওজন কমাতে সাহায্য করে। যদি সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে খাওয়া যায় তাতে অবশ্যই ওজন কমবে। এ মিশ্রণ পানি যকৃৎ পরিষ্কার করবে। তাছাড়া মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মধুতে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ, ভিটামিন ও এনজাইম, যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া প্রতিদিন সকালে এক চামচ মধু খেলে ঠান্ডা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যা কমতে থাকবে। প্রতিদিন এক গ্লাস মধু-পানি পান করলে অ্যাসিডিটির সমস্যা থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। মধুর অ্যান্টিসেপ্টিক গুণ পাকস্থলীর মিউকাসের নিঃসরণ ঘটায়, যা জ্বালাপোড়া মুক্ত করে।
► ভেজানো কাঠবাদাম
ভিটামিন ও খনিজে ভরা কাঠবাদাম। এই কাঠবাদামকে পানিতে ভেজালে পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়। সারা রাত ঘুমিয়ে দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকার পর ৫ থেকে ১০টি কাঠবাদাম খাওয়া যায়। সকালে এটি পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি সারা দিন রুচি বাড়াবে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঠবাদামের বাদামি আবরণে ট্যানিন নামের একটি উপাদান রয়েছে, যা সহজে পুষ্টি শোষণ করে নিতে পারে। সেজন্য কাঠবাদাম ভিজিয়ে রেখে খোসা ছাড়িয়ে থেকে হবে। এতে শরীরের পুষ্টি বের হয়ে যাওয়ার আর চিন্তা থাকেনা।
► ভেজানো কিচমিচ এর পানি
কিশমিশে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। যা শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। প্রত্যেকদিন নিয়ম করে কিশমিশ খেলে আমাদের হজমশক্তি উন্নত হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, কপার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আছে। যা আমাদের শরীরের লোহিতরক্তকণিকা তৈরি করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কিশমিশ খেলে অ্যানিমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব। শুধু তাই নয়, প্রত্যেক দিন কিশমিশ খেলে আঘাত বা চোট লাগায় রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়াও প্রতিরোধ সম্ভব। ভাইরাল ফিভার এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন প্রতিরোধেও সাহায্য করে কিশমিশ। কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে কিশমিশ। প্রত্যেকদিনের ডায়েটে কিশমিশ রাখলে, তা ক্যান্সার কোষ তৈরি হওয়াও প্রতিরোধ করে। পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম থাকার জন্য কিশমিশ অ্যাসিডিটিও প্রতিরোধ করে। রেসপিরেটরি সিস্টেম সঠিক রাখে। চোখ ভালো রাখে। এ কারণে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কিশমিশ রাখুন। ক্যাভিটি এবং দাঁতের অন্যান্য বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করে কিশমিশ। মাড়ি সুস্থ রাখে। তার সঙ্গে দাঁত সাদাও করে।
ইনসমনিয়া বা অনিদ্রার সমস্যাও দূর করে কিশমিশ। হাড় মজবুত করে, কিডনি সুস্থ রাখে, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হাইপারটেনশন প্রতিরোধ করে কিশমিশ। অতিরিক্ত ওজন কমাতেও সাহায্য করে কিশমিশ।
► আমলকীর জুস
সকালে খালি পেটে আমলকীর জুস খেতে পারেন। তবে এই জুস খাওয়ার পর ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কফি বা চা না খাওয়া ভালো। আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে বলা হয়, নিয়মিত আমলকী খেলে জীবনের দৈর্ঘ্য বাড়ে। আমলকীর ভেষজ গুণ অনেক। আমলকীর রস যকৃৎ, পেটের পীড়া, অজীর্ণ, হজমি ও কাশিতে বিশেষ উপকারী। আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সর্দিকাশি ঠেকাতে পারে। আয়ুর্বেদশাস্ত্রেও আমলকীর জুসের গুণ বর্ণনা করে বলা হয়েছে, শরীরের সব ধরনের ক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে আমলকী। প্রতিদিন খালি পেটে এই জুস খেলে হজম ভালো হয়, চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ে।
► পাকা পেঁপে
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পেঁপে খেতে পারেন। পেঁপে খেলে পেট পরিষ্কার হয় এবং অন্ত্রের নড়াচড়া বাড়ে। পেঁপে খাওয়ার পর এক ঘণ্টা কিছু না খাওয়া ভালো। শরীরে বাজে কোলস্টেরলের প্রভাব কমায় পেঁপে। পেঁপে খেলে ওজন কমে, ত্বক পরিষ্কার হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আর নানা উপকারী উপাদানে ভরপুর পেঁপে খেলে একদিকে স্বাস্থ্য যেমন ভালো থাকে, তেমনি চুল আর ত্বকের জন্যও উপকারী। প্রচুর পরিমাণ আঁশ, ভিটামিন সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে পেঁপেতে। এই উপাদানগুলো রক্তনালিতে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল জমতে বাধা দেয়। তাই হৃৎস্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং উচ্চরক্তচাপ এড়াতে পেঁপে খেতে পারেন নিয়ম করে। শরীরের মেদ ঝরাতে যাঁরা তৎপর, তাঁদের খাদ্যতালিকায় পেঁপে রাখুন। একদিকে যেমন কম ক্যালরি আছে, অন্যদিকে থাকা আঁশ পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে সবজি হিসেবে পেঁপে অনন্য। দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা জোরদারে ভূমিকা রাখে পেঁপে। নিয়মিত পেঁপে খেলে সাধারণ রোগবালাই দূরেই থাকে। কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসার প্রতিরোধে এটি উপকারী।
► রসের রাজা তরমুজ
খালি পেটে তরমুজ খাওয়া যেতে পারে। এ জন্য সকালে তরমুজ খাওয়া ভালো। এতে ক্যালরি কম, কিন্তু ইলেকট্রোলাইটস বেশি। প্রতিদিন দুই কাপের মতো তরমুজ খেলে শরীরে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সির চাহিদা মেটে। এতে থাকা পটাশিয়াম শরীরে ফ্লুইড ও মিনারেলসের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অ্যাজমার মতো রোগ এবং ব্যথা উপশমে তরমুজ উপকারী। তরমুজের থাকা বিশেষ কয়েক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড ক্রমাগত নাইট্রিক অক্সাইড তৈরি করে রক্তের স্বাভাবিক কার্যপ্রণালি বজায় রাখে।
► বেহেস্তের ফল খেজুর
শরীরে দ্রুত শক্তি জোগাতে পারে খেজুর। দিনের শুরুতে খেজুর দিয়ে শুরু করা যায়- রুচি বাড়ায়, দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, ক্যানসার থেকে রক্ষা করে। খেজুরে প্রচুর দ্রবণীয় আঁশ থাকে, যা হজম প্রক্রিয়ার জন্য ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটের সমস্যা দূর করতে পারে খেজুর। খেজুর হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রক্তস্বল্পতা থেকে রক্ষা করে এবং রক্তপ্রবাহে গতি সঞ্চার করে। অল্প কয়েকটা খেজুর খেলে ক্ষুধার তীব্রতা কমে যায়। এই ফল পাকস্থলীকে কম খাবার গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে, শরীরের প্রয়োজনীয় শর্করার ঘাটতি পূরণ করে দেয়। ফলে মুটিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে। খেজুরে আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, যা হাড়কে মজবুত করে। শরীরে সোডিয়াম-পটাশিয়ামের সমতা রক্ষা করে।