দিনভর নানান আয়োজনে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান শহীদ দিবস পালিত
এস এম মোজতাহীদ প্লাবন
প্রতিদিনের চিত্র
প্রকাশিত : ১০:১৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার

ছবি- প্রতিদিনের চিত্র বিডি।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যথাযথ মর্যাদায় নানা কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'২২। বিশ্ববিদ্যালয়ের "চির উন্নত মম শির" ও "শহীদ মিনার"-এর বেদিতে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে মহান ভাষাশহীদদের স্মরণ করেছে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।
দিবসটি উপলক্ষ্যে ২০ ফেব্রুয়ারি রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘চির উন্নত মম শির’ এবং শহীদ মিনার-এ মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। একুশের প্রথম প্রহর রাত ১২ঃ০১ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন-এর নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ হতে ‘চির উন্নত মম শির’-এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন কর্মসূচীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ নজরুল ইসলাম, হল প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু নীল দল, কর্মকর্তা পরিষদ, কর্মচারী সমিতি (গ্রেড ১১-১৬), কর্মচারী ইউনিয়ন (গ্রেড ১৬-২০), কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ, সাংবাদিক সমিতি ও প্রেসক্লাবসহ অন্যান্য সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও চির উন্নত মম শির ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
এছাড়াও ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকালে দিবসটি উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন এবং জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। ৫২'র ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী প্রভাতফেরীর আয়োজন করে। প্রভাতফেরীটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এরপর বেলা সাড়ে ১১টায় অনলাইনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২ উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারীর সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন। বক্তব্য দেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মুহাম্মদ এমদাদুর রাশেদ, বঙ্গবন্ধু নীল দলের সাধারণ সম্পাদক ড. সেলিম আল মামুন, কর্মকর্তা পরিষদের সভাপতি মো. জোবায়ের হোসেন। উক্ত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. মো. হুমায়ুন কবীর, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২ উদযাপন কমিটির সদস্য-সচিব কল্যাণাংশু নাহা। অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক মো. মাসুদুর রহমান।
ভাষা অন্দোলনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন বলেন, "১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনের বীজ রোপিত হয়। ভাষা শহীদদের রক্তের বিনিময়ে এই আন্দোলন আরও বেগবান হয়। ছাত্র সমাজ, যুব সমাজ বুকের রক্তদিয়ে দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করেছে।" তিনি আরো বলেন, "২১ এর মূল চেতনাকে যদি বিশ্লেষণ করি তাহলে আমরা দেখতে পাই একুশ মানে অন্যায়ের প্রতি প্রতিবাদ, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ভাষা নিয়ে মেজরিটি মানুষের যে রায় সেটি মানতে চায় নি। তাই তার বিরুদ্ধে ছিল একুশের প্রতিবাদ, ভাষা আন্দোলনের প্রতিবাদ।" এছাড়াও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
এরপরে দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিটে কেন্দ্রীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় আয়োজন করা হয় ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলা ভাষা’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার। এতে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন, উক্ত অনুষ্ঠানের আলোচক হিসেবে আলোচন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রফেসর ড. রোচিষ সরকার, পশ্চিম বঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রফেসর ড. সুখেন বিশ্বাস, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও সম্প্রসারণ কেন্দ্রের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. সাহাবউদ্দিন বাদল। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২২ উদযাপন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আহমেদুল বারী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অবশেষে রাত নয়টায় আয়োজন করা হয় ভাষা শহীদদের স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন ইফ্ফাত আরা ইভা ও মো. রাগীব রহমান।