অদৃশ্য ক্ষমতাবলে আট বছর ধরে একই উপজেলায় কর্মরত সহঃ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার
অলিউর রহমান মেরাজ, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর)
প্রতিদিনের চিত্র
প্রকাশিত : ০১:২০ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ শনিবার

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা অফিসার শরিফ হোসেন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে প্রায় আট বছর ধরে একই উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন।
তিনি ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট নবাবগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগদান করেন।
নিয়মানুসারে তিন বছর পর বদলি বা কর্মস্থল পরিবর্তনের কথা থাকলেও অজ্ঞাত কারণে এই উপজেলায় তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। জানা যায়, অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার জন্যই মূলত তারা একই কর্মস্থলে বছরের পর বছর অবস্থান করছেন।
জানা যায়, উপজেলার প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো: শরিফ হোসেন অদৃশ্য ক্ষমতাবলে প্রায় আট বছর একই কর্মস্থলে রয়েছেন। তার শিক্ষা কর্মকর্তারা বদলি হলেও তিনি বদলি হচ্ছেন না অদৃশ্য ইশারায়।
অভিযোগ রয়েছে সহকারী শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে অনেক শিক্ষকের সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে তারা অনুপস্থিত কিংবা দেরি করে বিদ্যালয়ে এলেও তাদের কিছুই হয় না।
প্রাথমিকের এক শিক্ষক নেতা জানান, মূলত বদলি বাণিজ্য করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার জন্যই তারা একই কর্মস্থলে দীর্ঘদিন অবস্থান করেন। এই দুর্নীতির সঙ্গে মধ্যস্বত্বভোগী হিসাবে কাজ করছেন কতিপয় শিক্ষক নেতা।
বেশ কয়েকজন প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবছর প্রাথমিকে জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষক বদলি হয়। এর একটি হলো সমন্বয় বদলি। আরেকটি হয় প্রার্থীর চাহিদার বিপরীতে শূন্য পদে। এই সময়ে শিক্ষক নেতাদের ঢাল বানিয়ে শিক্ষা অফিসাররা বদলি বাণিজ্যে নামেন।
সমন্বয় বদলিতে সিনিয়র শিক্ষকদের নব্য জাতীয়করণকৃত রেজিস্টার্ড বিদ্যালয়ের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না উপজেলার কোথাওই। সিনিয়র শিক্ষকদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে জুনিয়র শিক্ষকদের বদলি করে কাগজে-কলমে সমন্বয় দেখানোরও অভিযোগ রয়েছে শিক্ষা অফিসগুলোর বিরুদ্ধে। এতে সিনিয়র শিক্ষকরা একই কর্মস্থলে থেকে যুগের পর যুগ শিক্ষকতা করে আসছেন। এছাড়া প্রাথমিকে নারী শিক্ষক বেশি হওয়ায় বাণিজ্যের সুযোগ বেশি নেন শিক্ষা অফিস ও শিক্ষক নেতারা।
শুধু শিক্ষক বদলি বাণিজ্য নয়, স্কুল মেরামত, স্লিপ বরাদ্দ, ভবন নির্মাণসহ সব খাতেই পার্সেন্টিজ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের বিরুদ্ধে। এমনকি কোনো প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা প্রয়োজন না হলেও প্রধান শিক্ষককে পার্সেন্টিজের শর্তে টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করে কোনো কোনো শিক্ষা অফিস।
অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্টরা জানান ভিন্ন কথা। উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারের শূন্য পদের বিপরীতে অফিসার নিয়োগ না দেওয়ায় একই কর্মস্থলে কেউ কেউ দীর্ঘদিন অবস্থান করছেন। তবে অন্য যে অনিয়ম-দুর্নীতির কথা বলছেন তা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অভিযোগ আকারে আসে না।
জানতে চাইলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম বলেন, ইতোমধ্যে এই উপজেলায় অনেক শিক্ষা ও সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেছেন। হয়তো পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা অধিদপ্তর তাদের বদলি করছেন না। আবার এটাও ঠিক যে, কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট উপজেলায় থাকতেও চাচ্ছেন। তবে বর্তমানে বদলি শুরু হয়েছে।