বহুতল ভবনে উদ্ধারের সক্ষমতা নেই কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের
১৯ এপ্রিল ২০২৩, ০৪:০০ পিএম

ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি।
কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্মীদের ছোটখাটো আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকলেও বহুতল ভবনে উদ্ধার তৎপরতা চালানোর সক্ষমতা নেই। সেইসঙ্গে নৌকাডুবি কিংবা পানিতে নিখোঁজের সন্ধানে অভিযান চালানোর ডুবুরি ও হতাহতদের হাসপাতালে নেওয়ার অ্যাম্বুলেন্স নেই। জেলার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে কর্মরত দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার আট উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় এখন পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন সম্ভব হয়নি। ওই স্টেশনের জন্য বরাদ্দ গাড়ি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ কুড়িগ্রাম সদর ও রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ে পড়ে আছে। জেলা সদর কিংবা উপজেলা পর্যায়ের কোনও স্টেশনের কর্মীদের ভবনের সিঁড়ি বেয়ে ওঠা ছাড়া বহুতল ভবনে উদ্ধার অভিযান কিংবা অগ্নিনির্বাপণের সক্ষমতা নেই। অথচ জেলায় সরকারি বিভিন্ন দফতর ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক বহুতল ভবন রয়েছে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আটতলা ভবন। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে পাঁচতলা ছাত্রাবাসসহ রয়েছে একাধিক বহুতল ভবন। এ ছাড়া শহরে বাণিজ্যিক ভবন ছাড়াও অনেক বহুতল ভবন আছে। উপজেলা শহরগুলোর চিত্রও একই। এসব ভবনে অগ্নিকাণ্ড কিংবা ভবন ধসের ঘটনা ঘটলে উদ্ধার অভিযান নিয়ে শঙ্কিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এদিকে, পানিতে ডুবে নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটলেও কুড়িগ্রাম ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে ডুবুরির পদ নেই। নৌ-দুর্ঘটনা কিংবা পানিতে ডুবে নিখোঁজের ঘটনায় উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য রংপুর থেকে ডুবুরি আনতে হয়। ফলে উদ্ধার অভিযান বিলম্বিত হয়। এভাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিখোঁজ ব্যক্তিকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
জেলা ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বশীলরা বলছেন, স্বাভাবিক ল্যাডার (মই) ছাড়া বহুতল ভবনে উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য টার্ন টেবিল ল্যাডার কুড়িগ্রামে নেই। এ ছাড়া বেশিরভাগ ফায়ার স্টেশনে অ্যাম্বুলেন্স নেই। দু’একটি স্টেশনে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেগুলো বিকল হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা পর্যায়ে ফায়ার স্টেশনগুলোর নতুন ভবন থাকলেও জেলা সদরের ভবনটি জরাজীর্ণ। সদরের ফায়ার স্টেশনটি ২০১৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে উন্নীত হলেও এর অবকাঠামো এখনও দ্বিতীয় শ্রেণির রয়েছে। পুরাতন ভবনের ছাদ ও ওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। একটু বৃষ্টি কিংবা বর্ষাতে এই স্টেশন চত্বরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। ফলে নানা বিড়ম্বনায় পড়েন এই স্টেশনে কর্মরত ফায়ার ফাইটাররা। এমনকি আবাসিক ব্যারাকও জরাজীর্ণ। ড্রেনেজ ব্যবস্থাও ভালো নয়।
এই স্টেশনে পানিবাহী ও পাম্পবাহী গাড়ি থাকলেও স্টেশনের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন থেকে বিকল হয়ে পড়ে আছে। শুধু এই ফায়ার স্টেশন নয়, নাগেশ্বরী উপজেলা স্টেশনের অ্যাম্বুলেন্সও চার-পাঁচ মাস ধরে বিকল। উলিপুর, ফুলবাড়ী, চিলমারী, রৌমারী, রাজীবপুর ও রাজারহাট ফায়ার স্টেশনে কোনও অ্যাম্বুলেন্স নেই।
ছোটখাটো আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও বহুতল ভবনে উদ্ধার অভিযান চালানোর জন্য আমাদের ল্যাডার নেই বলে জানালেন নাগেশ্বরী ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ ইমন মিয়া। তিনি বলেন, ‘একটি অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও তা চার-পাঁচ মাস ধরে বিকল। তবে যেসব সরঞ্জাম আছে, তাতে অগ্নি-দুর্ঘটনা মোকাবিলায় কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না আমাদের।’
একই কথা বললেন উলিপুর ফায়ার স্টেশনের ইনচার্জ আব্বাস আলী। তিনি বলেন, ‘বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে আমাদের সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হয়। তবে এখন পর্যন্ত যেসব অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে তাতে উদ্ধার অভিযানে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি। তবে অ্যাম্বুলেন্স না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের স্টেশনের জন্য একটি অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আলী আকবর বলেন, ‘কুড়িগ্রামে অফিসার পদে জনবল সংকট রয়েছে। জেলায় ডুবুরির পদ নেই। ডুবুরির পদ সৃষ্টি এবং নিয়োগের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া জেলার তিনটি পৌরসভা এলাকার ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চাহিদা দেওয়া হয়েছে।