কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র

প্রতিদিনেরচিত্র ডেস্ক

২৪ জুলাই ২০২৩, ০৩:৫৮ পিএম


কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে ধান দিচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র

 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকের পরিবর্তে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে ধান বেচাকেনার প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করা হলেও সেখানে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। লটারিতে নির্বাচিতদের তালিকায় রয়েছেন সিন্ডিকেট চক্রের স্বজনসহ জমিজমা না থাকা ব্যক্তিরাও।

 

কৃষকদের লিখিত অভিযোগ, উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির অগোচরে খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমান পরোক্ষ যোগসাজশে সিন্ডিকেট চক্রের থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে গুদামে নিন্মমানের (মিটারবিহীন) ধান নিচ্ছে। ফলে বঞ্চিত প্রান্তিক কৃষকরা। ধান সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক।

 

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী পৌরসভার কৃষক সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমানের লিখিত অভিযোগ ও প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগে জানা গেছে, নাগেশ্বরী সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকের পরিবর্তে নিন্মমানের (মিটারবিহীন) ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে সিন্ডিকেট চক্রের থেকে। মাঠপর্যায়ে ৫শত থেকে ১হাজার টাকায় কৃষকদের থেকে কৃষিকার্ড, এনআইডি সংগ্রহ করে ফাঁকা চেকের পাতা ব্যবসায়ীদের হাতে। প্রতি ৩মেক্ট্রিক টন ধান গুদামে দিতে ওসিলিডিকে দিতে হয় ২হাজার টাকা। লটারিতে নির্বাচিতদের তালিকায় সিন্ডিকেট চক্রের স্বজনসহ অসংখ্য অকৃষক। খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমান ধান সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী বেরুবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় শিক্ষক মিজানুর রহমান ও নাগেশ্বরী পৌরসভা ভাসানী বাজারের সাবু হাজি, বাবলু মিয়ার সাথে প্রতি ৩মেক্ট্রিক টনে ২হাজার চুক্তিভিত্তিক খাদ্যগুদামে টনে টন ধান ট্রলি, ট্রাক্টরে নিন্মমানের ধান ক্রয় করছে ব্যবসায়ীরা। ফলে বঞ্চিত মফস্বল অঞ্চলের অসহায় প্রান্তিক কৃষকরা। অপরদিকে কৃষক অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করে এবং লটারিতে নাম উঠে। নির্বাচিত লটারীতে নাম সেকেন্দার আলী, ক্রমিক নং-(৩), এনআইডি-৪৯২৬১০৬৩০৭০১১ এবং সৈফুর রহমান, ক্রমিক নং-(২৯), এনআইডি-৪৯২৬১০৬৩০০০৮৩, ওয়ার্ড নং-৬, নাগেশ্বরী পৌরসভা। তারা প্রথমবার ধান নিয়ে খাদ্যগুদামে গেলে ওসিলিডি ধান মিটার কম হয়েছে বলে ধান ফিরিয়ে দেয়। গত (১৩জুলাই) আবারো খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে গিয়ে সারাদিন দীর্ঘ অপেক্ষার পর অনেক কষ্টে তারা দুই কৃষক ১হাছার টাকার বিনিময়ে সন্ধ্যায় খাদ্য গুদামে ধান জমা করে। পরে মোবাইলে ম্যাসেজে আসে ও সে ম্যাসেজে বলা হয়েছে ধান জমা হওয়াসহ খাদ্যগুদাম থেকে আপনার ব্যাংকের চেক নিয়ে টাকা উত্তোলন করতে। গত (১৭জুলাই) গুদামে ধানের চেক নিতে গেলে খাদ্যগুদামের কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান বিভিন্ন টালবাহনা ও হয়রানি করতে থাকে। আবারো গত (১৯জুলাই) সকালে গুদামে ধানের চেক নিতে গেলে নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমানের নির্দেশে কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান বলেন চেক নিতে হলে প্রতি ৩মেক্ট্রিক টন ধানের চেক বাবদ ২হাজার টাকা খরচ দিতে হবে। উক্ত দুই কৃষক ঘুষের ৪হাজার টাকা না দিয়ে গত (১৯জুলাই) দুপুর-১২টায় সংবাদকর্মীদের ডেকে নিয়ে খাদ্যগুদামে যায় ওখনি গুদামের কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমানের সাথে ঘুষের টাকা নিয়ে কৃষকরা তর্ক করে এবং কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান দাপট খাটিয়ে বলেন কৃষক সেকেন্দার আলীর তালিকায় নাম থাকলেও গুদামে ধান জমা করে নাই ঠিক তখনই কৃষক সেকেন্দার আলী তার মোবাইলে ম্যাসেজে ধান জমা হওয়াসহ খাদ্যগুদাম থেকে ব্যাংকের চেক নিয়ে টাকা উত্তোলন করার ম্যাসেজে দেখা মাত্র মাহাবুর রহমান চুপ হয়ে যান। পরবর্তীতে সংবাদকর্মীদের কাছে আমরা দূই কৃষক সেচ্ছায় ভিডিও বক্তব্য দেই। বিষয়টি জানাজানি হলে গত (২০জুলাই) দুপুর ১২টায় খাদ্যগুদামের ওসিলিডি সাজেদুর রহমানের নির্দেশে কয়েকজন লোক আমাদের দুইজন কে ডেকে গুদামে নিয়ে যায় এবং ওসিলিডি সাজেদুর রহমান তার কক্ষে নিয়ে আমাদের বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ধানের চেক দিয়ে জোরপুর্বক বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর নেয়াসহ মোবাইলে আমাদের কে দিয়ে মিথ্যাচার ভিডিও করে নেয়। সেদিনই আমরা দুই কৃষক কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের দাবি জানান তারা। একই অবস্থা ভুরুঙ্গামারীর জয়মনিরহাট খাদ্যগুদামে। চলতি বছর নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামে ৬৮৯জন কৃষক ও ভুরুঙ্গামারীর জয়মনিরহাট খাদ্যগুদামে ৪৮৮জন কৃষকের জনপ্রতি ৩টন ধান সংগ্রহ অভিযান চলছে। কুড়িগ্রাম জেলার ৯টি উপজেলায় ১০হাজার ২১৭মেক্ট্রিক টান ধান ক্রয় চলমান রয়েছে।

 

অভিযোগকারী কৃষক সেকেন্দার আলী ও সৈফুর রহমান বলেন, নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামে ৩মেক্ট্রিক টন ধান দুইজন কৃষক জমা প্রদাণের পরে মোবাইলে ম্যাসেজে আসে। বিলের চেক নেয়ার জন্য গুদামে গেলে কর্মচারী মাহাবুর রহমান ও জোবায়ের রহমান দীর্ঘ ৫দিন হয়রানি করে আবশেষে চেক নিতে প্রতি ৩মেক্ট্রিক টনে ২হাজার টাকা দাবি করেন। পরে সংবাদকর্মীদের খাদ্যগুদামে নিয়ে যাওয়ায় তারা ক্ষিপ্ত হয়। বৃহস্পতিবার ধানের চেক নিতে গেলে ওসিলিডি আমাদের কে তার রুমে নিয়ে ধান চেক দিয়ে জোরপুর্বক বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর ও ভিডিও করে নেয়। আমরা জেলা প্রশাসক ও বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি।

 

নাগেশ্বরী খাদ্যগুদামের কর্মচারী জোবায়ের রহমান ও মাহাবুর রহমান খাদ্যগুদামে সংবাদকর্মীদের দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ঘুষের টাকার কথা এড়িয়ে বলেন, সেকেন্দার আলী গুদামে এখনো ধান দেয়নি। মোবাইলে ধান জমার ম্যানেজ দেখা মাত্র কথা বলেনি। মাহাবুর রহমান আরও বলেন, এই টাকা কি আমরা নিচ্ছি না ওসিলিডি নিচ্ছে।

 

নাগেশ্বরী উপজেলার মফস্বল অঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক শাহা আলম, মাইদুল ইসলামসহ অনেকে বলেন, আমরা কৃষক ধান চাষ করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। খাদ্যগুদামে ধান দিতে পারি না। খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করছে ব্যবসায়ীরা। কৃষকের তালিকায় নাম ব্যবসায়ী চক্রের আত্মীয় স্বজন আর অকৃষকের।

Ads