Berger Paint

ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৩ মার্চ ২০২৩,   চৈত্র ৮ ১৪২৯

ব্রেকিং:
চট্টগ্রাম, গাজীপুর, কক্সবাজার, নারায়ানগঞ্জ, পাবনা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ ব্যুরো / জেলা প্রতিনিধি`র জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের আবেদন পাঠানোর আহ্বান করা হচ্ছে। শিক্ষাগত যোগ্যতা- স্নাতক, অভিজ্ঞদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল যোগ্য। দৈনিক প্রতিদিনের চিত্র পত্রিকার `প্রিন্ট এবং অনলাইন পোর্টাল`-এ প্রতিনিধি নিয়োগ পেতে অথবা `যেকোন বিষয়ে` আর্থিক লেনদেন না করার জন্য আগ্রহী প্রার্থীদের এবং প্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হল।
সর্বশেষ:
শি-পুতিনের আনুষ্ঠানিক বৈঠক আজ মুগদায় গ্যাস নেওয়ার সময় ট্রাকের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে যুবকের মৃত্যু ঢাকাসহ ১৯ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস ট্রাম্পকে গ্রেফতার করা হতে পারে আজ আরাভকে খুঁজছে দুবাই পুলিশ

‘‌ছপক’‌

মৌমিতা ভট্টাচার্য

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২০  

ছবি - সংগৃহীত

ছবি - সংগৃহীত

স্টার কাস্টঃ দীপিকা পাড়ুকোন, বিক্রান্ত মসি

ডিরেক্টর : মেঘনা গুলজার

খুলে যাক ওড়না ঢাকা মুখ, সুন্দর ভাবে নিজেকে সাজাও । নতুন বছরের শুরুতেই নতুন লড়াই নিয়ে হাজির হয়েছেন মালতী ওরফে দীপিকা পাড়ুকোন। তিনি যে অভিনেত্রী হিসাবে সত্যিই সফল, তা আরও একবার এই '‌ছপাক’‌ ছবির মধ্য দিয়ে প্রমাণিত করলেন দীপিকা।

বিয়ের পর তাঁর এই প্রথম ছবি সিনেমা সমালোকদের কাছেও যথেষ্ট প্রশংসনীয়। এই ছবির শুটিং করতে গিয়ে দীপিকা অবসাদে চলে গিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের জীবনকে সামনে রেখেই পরিচালক মেঘনা গুলজারের এই প্রয়াস।

‘‌ছপাক’‌–এর কাহিনী দৃশ্য ১

২০০৫ সাল। রেডিওতে চার্টবাস্টার গান হিসাবে তখন জনপ্রিয় হর ঘড়ি বদল রহি হ্যয় রূপ জিন্দেগি। অভিজিৎ সাওয়ান্ত, অমিত সানা ও রাহুল বৈদ্য প্রথম ইন্ডিয়ান আইডলের ট্রফি জেতার জন্য লড়াই করছেন। দিল্লির অভিজাত এলাকার গলফ লনসের এক বাংলোর পরিচারকদের দুই কামরা বিশিষ্ট ঘরে এক ১৭ বছরের কিশোরী সোনু নিগমের ‘‌হর পল ইয়াহা জি ভর জিও, জো হ্যয় শমা, কাল হো না হো'-গানে‌ নাচছে। এর পরের দিনই ‘‌শমা'‌ বদলে যায়। ১৭ বছরের মালতীর জীবন সারাজীবনের মত বদলে যায়। মাটিতে পড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে, এক পথচারী তার মাথায় জল ঢালছে। এরপর ওই পথচারী ১০০ ডায়ালে ফোন করে। পুলিশ এসে মালতীকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কেউ তার ওপর অ্যাসিড ছুঁড়েছে। পুলিশ অভিযুক্তকে খোঁজা শুরু করে।

‘‌ছপাক’‌–এর কাহিনী দৃশ্য ২

‘‌আপকি বেটি তো গালর্স স্কুল মে পড়তা হ্যয়। সারে ফোন নম্বর লড়কে কে কিউ হ্যয় উসকে ফোন মে‌?‌ (‌আপনার মেয়ে তো মেয়েদের স্কুলে পড়ে। ওর ফোনে সব ফোন নম্বর ছেলেদের কেন তাহলে?‌)‌'‌। মালতীর বাবার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয় এক পুলিশ কর্মী। দর্সকরা এই প্রশ্ন শোনার পর সিনেমা হলের চেয়ারে নিশ্চয়ই অস্বচ্ছন্দ্য বোধ করবেন। এটাই আসলে শুরু। মালতী এরপর সব যন্ত্রণা পেরিয়ে অবশেষে নিজেকে গ্রহণ করবে এবং আমাদের তার ওপর আশা রাখতে বাধ্য করবে। পরিচালক মেঘনা গুলজার মালতীর সংগ্রামের ছোট ছোট বিষয় তুলে ধরেছেন।

‘‌ছপাক’‌–এর কাহিনী দৃশ্য ৩

মালতীকে পরিপূর্ণ করার জন্য মেঘনা নিয়ে এসেছেন অমোলকে। কেউ কেউ তাঁকে ‘‌নিরাশাবাদী'‌ বলে মজা করেন। ২০১২ সালে যখন দিল্লি গণধর্ষিতার জন্য কাঁদছে, ঠিক তখনই সূচনা হয় ছপাকের। দর্শকরা হয়ত এ ধরনের দৃশ্য বহুবারই দেখে থাকবেন। ভিড়ের মধ্যে এক ব্যক্তি অ্যাসিড আক্রান্তের ছবি নিয়ে টিভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তাঁকে ক্যামেরার ফ্রেম থেকে সরে যেতে বলা হচ্ছে। এরপরই অমল ভিড়ের উদ্দেশ্যে বলে ওঠেন, ‘রেপ কে আগে অ্যাসিড কি ক্যায়া কিমাত। আঙ্কল কো সমঝ হি নেহি আতা (‌ধর্ষণের আগে অ্যাসিডের কি মূল্য। কাকা তো বুঝতেই পারছে না)‌।


‘‌ছপাক’‌–এর কাহিনী দৃশ্য  ৪


মেঘনা গুলজার এরপর মালতীর কাহিনীকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গিয়ে দর্শকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে কেন এ ধরনের ঘটনা কারোর সঙ্গে ঘটে। পরিচালক দর্শকদের আদালতের ঘরে নিয়ে গিয়ে এমন এক পরিস্থিতির মুখোমুখি করিয়েছেন যেখানে আশা হাবুডুবু খাচ্ছে নিরাশার মধ্যে তারপরই তা ফের পরিণত হয়েছে প্রত্যাশাতে। জীবন দোল খাচ্ছে কি হতে পারে আর কি ছিল এর মধ্যে। অসাধারণ অভিনয় অসাধারণ অভিনয় মুচমুচে গল্পের মোড়কে যেভাবে ছপাককে পরিবেশন করা হয়েছে, তাতে এই ছবি জয়ী হয়েছে।

তার ওপর অভিনেতা-অভিনেত্রীদের অসাধারণ অভিনয় প্রত্যেকটি চরিত্রকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। ছবির মুখ্য চরিত্রে দীপিকা পাড়ুকোন, এই ছবিতে অভিনয়ের জন্য নিজের সুন্দর মুখের বিসর্জন দিয়েছেন। ছপাকে দীপিকা গ্ল্যামারস নন, বরং নিতান্তই আপনার পাশের বাড়ির মেয়ে। যার সঙ্গে ঘটে গিয়েছে এক নির্মম দুর্ঘটনা।

মালতীতে নিজেকে পরিণত করার জন্য দীপিকা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। আপনি যাতে সিনেমার আসন ছেড়ে এক মুহূর্তের জন্য নড়তে না পারেন, তার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করে গিয়েছেন অভিনেত্রী। অ্যাসিড ছোঁড়ার পর দীপিকা যখন আয়নায় তাঁর নতুন মুখ দেখেন সেই সময় সে চিৎকার করে ওঠেন, কানে ঝুমকো পরে যখন দীপিকা নিজেকে আয়নায় দেখেন এবং বুঝতে পারেন তার কানও নেই, উপলব্ধি করতে পারেন যে অ্যাসিড তাঁর সৌন্দর্য্যকে চিরতরে ঘুচিয়ে দিয়েছে।

পরিচালকের ‘‌হর ঘড়ি বদল রহি হ্যয় রূপ জিন্দেগী'‌ ব্যাকগ্রাউন্ডে এই গানের ব্যবহারও আপনার মনকে নাড়া দিতে বাধ্য করবে। দর্শক উপলব্ধি করবেন যে মাত্র ৩০ টাকা দামের অ্যাসিড আসলে কি করতে পারে। দীপিকার পাশাপাশি মধুরজীত সংঘি, যিনি এই সিনেমায় আইনজীবী অর্চনা বাজাজের ভূমিকায় রয়েছেন। তাঁর অভিনয় অসাধারণ । তবে দীপিকার পরই যাঁর অভিনয় দক্ষতা মন কেড়েছে তিনি হলেন বিক্রান্ত মসী। এর আগে তাঁকে কখনও এ ধরনের অভিনয় করতে দেখা যায়নি।


বিক্রান্ত ওরফে অমোল যিনি অ্যাসিড আক্রান্তের যন্ত্রণাকে বুঝতে পারেন। এই ছবিতে তিনি একজন সাংবাদিক। মালতীর উদ্দেশ্যে অমোলকে বলতে শোনা যায়, ‘‌আপকা প্রবলেম পতা হ্যয় ক্যা হ্যয়?‌ আপকো লাগতা হ্যয় আপ পে অ্যাসিড ফেকা গয়া হ্যয়?‌'‌ এই একটা সংলাপের মধ্য দিয়েই পরিচালক বুঝিয়ে দিয়েছেন বিক্রান্ত, দীপিকার চরিত্রটা আসলে কি। ছবির সংলাপ ও মেকআপ Where the World's Billionaires Live Sponsored Where the World's Billionaires Live Mansion Global Mohena Kumari Singh gives it back to troll who criticised her for hiding face in ghoonghat Sponsored Mohena Kumari Singh gives it back to troll who criticised… India Today ছবির সংলাপ ও মেকআপ এই ছবির সংলাপ খুবই সাধারণ।

দর্শকদের কানকে ভারী বা কঠিন শব্দের গুঞ্জন না করিয়ে, খুব সহজ-সরল সংলাপের মধ্য দিয়ে পুরো গল্পটাকে বলা হয়েছে। দীপিকার লুকসকে মেঘনা এই ছবিতে বিশ্রামে পাঠিয়েছেন। সবসময়ই তাঁকে দারুণ মেকআপ আর ফ্যাশনেবল দেখা যায় পর্দায়। কিন্তু এবার দীপিকার এই বিকৃত রূপ দর্শকদের মনে করাবে যে ভারত এখনও লড়াই করছে। অ্যাসিড এখনও বাজারে বিক্রি হয় এবং তা নরম পানির  চেয়ে সস্তায়। দীপিকার অসাধারণ মেক আপ এই ছবিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে। পরিচালক মেঘনা গুলজার অ্যাসিড আক্রান্ত লক্ষ্মী আগরওয়ালের গল্প সকলের সামনে তুলে ধরেছেন।

ছপাক নির্মম এক সত্য যা লক্ষ্মীর কাহিনীর সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। হামলাকারীর ধর্মকেও এই ছবিতে যোগ করা হয়েছে। এই ছবিটি দেখার পর দর্শকের সবসময় মনে পড়বে এক অ্যাসিড আক্রান্তের জীবন কেমন হতে পারে।

গত বছর ৭ ডিসেম্বর শেষ অ্যাসিড হামলা হয়েছিল। তবে এই ছবির গান কিছুটা হলেও ছবির গুরুত্বকে ক্ষুণ্ন করেছে। তবে অরিজিৎ সিংয়ের গলায় ছপাকের টাইটেল ট্র‌্যাকটি যথায়ত বিচার করেছে ছবিটির সঙ্গে। ছবির এডিটিং অতটা ভালো নয়। তবে ছোট ছোট এই বিষয়গুলি ছপাকের মতো ছবিকে কোনওভাবেই প্রভাবিত করেনি। এ বছরের শুরুটা তাই বলিউডের জন্য শুভ বলেই মনে হচ্ছে।

সুত্র- বিবিসি