বেড়েছে চালের দাম
প্রতিদিনের চিত্র ডেস্ক
প্রতিদিনের চিত্র
প্রকাশিত : ০৯:১৬ এএম, ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার

ছবি - সংগৃহীত
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজারে সরু চালের মধ্যে মানভেদে নাজিরশাইল/মিনিকেট ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা মানভেদে ৪৪ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। যা গত সপ্তাহে কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল।
বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে চালের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে ৪ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের দৈনন্দিন খুচরা বাজারদরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার তথ্য তুলে ধরেছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে—কেন বাড়ছে চালের দাম? খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেছেন, মিলাররা চালের দাম বাড়িয়েছে। ফলে খুচরা ও পাইকারিতে দাম না বাড়িয়ে তাদের উপায় নেই। তবে চালকল মালিকদের দাবি, আমন মৌসুম শেষ হওয়ায় এখন ধানের দাম চড়া। তাই চালের দাম বেড়েছে। এছাড়া ভোক্তারা এখন সরু চালের দিকে ঝুঁকছে। তাই সরু চালের চাহিদা বাড়ছে। কিন্তু আমাদের কৃষকরা এখনো মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা চাষাবাদে বেশি আগ্রহী। এ কারণে সরু চালের সরবরাহ কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। মিলাররা বলছে, এখন সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আমন ধান-চাল সংগ্রহ করছে। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, চালের দাম বাড়াতে মিলারদের অজুহাতের অভাব হয় না। আমন মৌসুমের শুরুতে প্রান্তিক কৃষকরা অনেক কম দামে ধান বিক্রি করলেও তখন তারা চালের দাম কমায়নি। অর্থাৎ তাদের কাছে দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তি থাকলেও কমানোর ক্ষেত্রে নেই। বর্তমানে দেশের হাটবাজারগুলোতে ধান-চালের ব্যাপক সরবরাহ। তার পরেও দাম বাড়ায় বিস্মিত মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে মাত্র ১০ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহ করছে। যা মোট উৎপাদনের তুলনায় খুবই কম। তাই চালের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে সরকারের ধান-চাল সংগ্রহের যে কথা বলা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই ঠিক নয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ২ কোটি ৮৪ লাখ ১৬ হাজার ৭১০ টন চালের বার্ষিক চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন প্রায় ৩ কোটি ৪৪ লাখ টন।
সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে গত মাসে সাতটি মনিটরিং টিম গঠন করলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে এই টিম কী কাজ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ মজুমদার বারবার বলছেন, কেউ কারসাজি করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কারসাজির সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করতে পারেনি মনিটরিং টিম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের সবচেয়ে বড়ো চালের মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। এই মোকামে মিনিকেট চালের ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৪শ’ টাকা দরে। অথচ এক সপ্তাহ আগে ৫০ কেজি বস্তার দর ছিল ২ হাজার ২৫০ টাকা। ৫০ কেজি বাসমতী চালের বস্তা ২ হাজার ৫০০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাজল লতা চালের বস্তা ১ হাজার ৮০০ থেকে বেড়ে ২ হাজার ৫০ টাকা হয়েছে।
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, রায়গঞ্জের মোকামেও ধান-চালের দাম বেড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই মোকামের এক অটো রাইস মিল মালিক জানান, সরকার আমন মৌসুমের শুরুতে অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান-চাল কেনায় জোর না দিয়ে এখন মৌসুমের শেষের দিকে কিনছে। ফলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, যদি মৌসুমের শুরুতে কিনত তাহলে একদিকে যেমন কৃষক ধানের বেশি দাম পেত অন্যদিকে তা বাজারেও তেমন প্রভাব ফেলত না।
বর্তমানে এই মোকামে ৫০ কেজির স্বর্ণা চালের বস্তা ১ হাজার ৪৬০ থেকে ১ হাজার ৪৮০, ব্রি ধান-‘৪৯’ ১ হাজার ৬৫০, কাটারিভোগ ২ হাজার ৫৫০, নাজিরশাইল ২ হাজার ২০০ ও ২৮-চাল ১ হাজার ৮৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই মূল্য ১০০ টাকা বেড়েছে। একইভাবে ধানের দামও মণপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।
এদিকে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত সপ্তাহের মাঝামাঝিতে দেশের বড় মোকামের চালকল মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক। বৈঠকে কোনো অজুহাতে চালের বাজারে যেন অস্থিরতা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য চালকল মালিকদের সতর্ক করা হয়। কিন্তু বৈঠকের পরও চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।
এ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়ার বেপারী এগ্রো প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী তোফাজ্জল হোসেন ব্যাপারী দৈনিক প্রতিদিনের চিত্রকে বলেন, সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ করছে। এজন্য চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। এর সঙ্গে মিলারদের কারসাজির কিছু নেই।