মানবাধিকর কমিশন ও সুশীল সমাজের পাচার প্রতিবেদন তৈরীর উদ্যোগ

প্রতিদিনেরচিত্র ডেস্ক

২৫ ডিসেম্বর ২০১৮, ০২:৫১ পিএম


মানবাধিকর কমিশন ও সুশীল সমাজের পাচার প্রতিবেদন তৈরীর উদ্যোগ

মানব পাচার বিশেষ করে শিশু পাচার অব্যাহত থাাকায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। বিষয়টি সরকার ও সুশীল সমাজের কাছে একটি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি সুরাহা ও দেশের ভাবমূর্তি আরো উজ্জ্বল করার লক্ষ্যে জাতীয় মানবাধিকর কমিশন বাংলাদেশ ও সুশীল সমাজের সদস্যবৃন্দ একটি উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি রাজধানীর কারওয়ান বাজাওে অবস্থিত মানবাধিকর কমিশন অফিসে আযোজিত এক প্রস্তুতিমূলক সভায় আলোচনাকালে বক্তারা বলেন যে, আগামী ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারী মাস থেকে জাতীয় মানবাধিকর কমিশন বাংলাদেশ ও সুশীল সমাজের সদস্যবৃন্দদের পার্টনারশিপে মানব পাচার (শিশু পাচারসহ) এর ওপর পিরিওডিক প্রতিবেদন সরকারের কাছে পেশ করা হবে।

পিসিটিএসসিএন কন্সোর্টিয়াম এর লিড এজেন্সি ইনসিডিন বাংলাদেশ কর্তৃক আয়োজিত উক্ত সভায় জানানো হয় যে, তারা পার্টনারশিপে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারী থেকে প্রতি বছর একই সময়ে উক্ত বার্ষিক প্রতিবেদনটি পেশ করবে।  এতে দেশের মানব পাচার পরিস্থিতির ওপর আলোকপাত করা হবে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিগত কয়েক বছর বাংলাদেশের মানব পাচার বিষয়ক প্রতিবেদনে নেতিবাচক মন্তব্য করেছে। বাংলাদেশের মানব পাচার এর বর্তমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর বাণিজ্যিক বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে বলে দেশের অধিকার কর্মীরা মনে করেন।

উক্ত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে আলোচনাকালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্ট প্রকাশের আগে আমাদের রিপোর্ট উপস্থাপন করা হবে যাতে তারা বাংলাদেশের রিপোর্ট থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পায়।

তিনি মনে করেন, প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বাংলাদেশ এর মানব পাচার বিষয়ে সঠিক মন্তব্য করতে পারেনা। মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ ও সুশীল সমাজের পার্টনারশিপে প্রণয়ন করা মানব পাচার বিষয়ক রিপোর্টে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ধারণা পাল্টে যাবে বলে তিনি মনে করেন।

শিশুদেরকে দেশের মোট জনসংখ্যাার শতকরা ৪৫ ভাগ হিসাবে উল্লেখ করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, দেশে শিশু-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য শিশু সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। এলক্ষ্যে তিনি দেশের অন্তত ৮টি বিভাগে শিশুদের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরামর্শ প্রদান করেন।

বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আদালতে শিশু সংক্রান্ত মামলার বিচারিক কাজ চলছে। এই আদালত ইতিমধ্যেই মামলা জটে ভারাক্রান্ত। তাছাড়া, এই আদালতে শিশু-বান্ধব পরিবেশ অনুপস্থিত, যার কারণে শিশু অধিকার রক্ষার পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনাতা তৈরী করতে হবে এবং সুশীল সমাজকে এই বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এই বিষয়ে মানবাধিকর কমিশন তার সার্বিক সহযোগিতা দেবে বলে কমিশনের প্রধান আশ^াস প্রদান করেন।

শিশুদেরকে জাতির ভবিষ্যত হিসাবে উল্লেখ করে কাজী রিয়াজুল হক বলেন, তাদের সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চিত করা দরকার, কারণ তারাই দেশকে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেবে। সকলের সহযোগিতাই শিশুদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে মানবাধিকার কমিশনের সচিব হিরন্ময় বাড়ই বলেন,  শিশুদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেতে হলে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সাথে অভ্যন্তরীণ পাচার ও শিশুশ্রম নিরসনের জন্যও পদক্ষেপ নিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

ইনসিডিন বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক একেএম মাসুদ আলী বলেন, পাচার বিরোধী  যেকোনো ইতিবাচক উ্েদ্যাগ আমাদেরকে আলোর পথ দেখাবে। পার্টনারশিপের কাজের দ্বারা আমারা কাংক্ষিত লক্ষ্যে সহজেই পৌঁছাতে পারবো।

পাচার প্রতিরোধ কার্যক্রমের পাশাপাশি এই প্রতিবেদন তৈরীরও গুরুত্ব আছে বলে মাসুদ আলী মনে করেন। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে পাচার বিষয়ক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরা যাবে।

তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও পিসিটিএসসিএন কন্সোর্টিয়াম এর ব্যানারে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ পাচার বিষয়ক উক্ত বার্ষিক প্রতিবেদনটি ফেব্রুয়ারীর মধ্যেই সরকারের কাছে পেশ করবেন বলে কথা রয়েছে। এটা পরবর্তীতে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
   

 

 

 

Ads