ভোগের নয় ত্যাগের বিশ্বাসে আনন্দময় হয়ে উঠুক ঈদুল আযহা
০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ০২:০৪ পিএম

মানুষ সৃস্টির শ্রেষ্ঠ প্রাণ; আর সৃষ্টির এই বৈচিত্র শ্রেষ্ঠতর পাওয়ার জন্য মানুষ সৃস্টিকর্তার কাছে মাথানত করে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে ত্যাগের মহিমায় সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য লাভের জন্য অবতীর্ণ হয় নানা ভাবে। এই মানুষ আবার বিভিন্ন জাতি বা গোষ্ঠীতে বিভক্ত বলে নিজস্ব কিছু রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান, উৎসব-সংস্কৃতি পালনের মাধ্যমে সৃষ্ট প্রথা অনুযায়ী সৃষ্টি কর্তাকে খুশি করতে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান করে। এ সকল ধর্মীয় উৎসবকে অবলম্বন করে কাল পরিক্রমায় তা প্রচলন হয়ে অনন্তকাল চলবে মানুষের জীবনে। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে দু’টি পবিত্র ঈদ। সারা বিশ্বে অত্যন্ত আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয় এই দুটি উৎসব। একটি হচ্ছে ত্যাগের মহিমায় আরেকটি হচ্ছে মানুষের মধ্যে বিভাজন থেকে মুক্তি দিতে অর্থাৎ মানব কল্যাণে যুগে যুগে এই ধর্মীয় উৎসব পালন হয়ে আসছে।
বস্তুতঃ আমারা ধর্মীয় অনুশাসন পালনের পাশাপাশি সে বিষয়গুলোও প্রতিপালন করা উচিত। অর্থাৎ মনুষত্ব বিকাশ সাধনে নিজের বিবেককে পরিশুদ্ধ করা আর আমরা সেটা যথার্থ ভাবে করতে পারছি কিনা সেটা বুঝার জন্য সে ভাল কাজটা বার বার করে যাওয়া। দ্বিতীয়টি- সততার সাথে দেশ ও মানুষের কল্যাণকর কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। এই সকল ভাল কাজ করতে পারাটাও কম আনন্দের নয়। তাই সুযোগ পেলে সে ধরণের কাজে যুক্ত হওয়াও হবে ধর্মীয় অনুশাসনের নিখু্ত প্রতিপালন।
সাধ্য অনুযায়ী প্রতিবারের মতই এবারও দেশে লক্ষ লক্ষ গরু কোরবানী করা হয়েছে, আর সে কোরবানী কবুল করার একমাত্র মালিক সেই মহান আল্লাহ তায়ালা। কিন্তু কোরবানীর তাৎপর্য মেনে না চলে পশু কোরবানী দিলে সেটা নেহাতই পশু জবাই বলে বিবেচিত হবে। যদিই না আমাদের মাঝে লালিত হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ, পাপাচার এবং লোভের কোরবানী দিতে না পারি তথাপি একেকজন লক্ষাধিক পশু জবাই দিলেও তার পশুর কোরবানী হয়েছে বলা মুশকিল হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘কোরবানির মাংস, রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না বরং এর মাধ্যমে তাকওয়া তথা যে দাসত্ব আল্লাহর জন্য পেশ করা হয় তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে। আল্লাহ তায়ালার কাছে নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করাই ঈদুল আজহার প্রকৃত শিক্ষা। কোরবানি করা পশুর গোস্ত যত বেশি সম্ভব আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেও কল্যাণ রয়েছে। এভাবে সার্বিকভাবেই কোরবানি তথা আত্মত্যাগ করার শিক্ষা দেয় পবিত্র ঈদুল আযহা।
শিশু ও নারী ধর্ষণ, দলাদলীর জন্য মানুষ হত্যা. আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক সদস্যের ধৃষ্টতা, সরকারী অফিসের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নীতি বহির্ভূত স্পিড মানি বানিজ্য, ঘাপটি মেরে থাকা দালালদের দৌরাত্ম্য, বহু আমলা-মন্ত্রীদের উদাসীনতা আর কতই আছে এ দেশের সোনার বাংলায়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে তাদের মাঝেও কোরবানির পশু কেনা নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতার রয়েছে যা সাধারণ মানুষকে ভোগায়। সুতরাং সে সকল শয়তানদের প্রতিরোধ করতে হবে।
আবার কিছু লোকের মাঝেও একই অবস্থা দেখা যায় পশু অনেক বড় কিংবা অনেক দামে কেনার মধ্যে নিজেকে জাহির করার প্রচেষ্টা যা কাম্য নয়। দেখা যায় অনেক সুবিধাবাদীরা কোরবানির মাংস গরিবদের বিলিয়ে দেয়ার মধ্যেও বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য রাখে। তাদের এধরণের মনোভাব কোরবানির মূল উদ্দেশ্য শুধুই ব্যর্থ হবে না, আল্লাহর সন্তুষ্টির পরিবর্তে অসন্তুষ্টি লাভের পথ আরো সুগম হবে।
আমরা লক্ষ্য করছি প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহার প্রাক্কালে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও দুর্ভোগের অবস্থা। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষকে প্রতি বছর নানান ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়। ঝুঁকি ও বিড়ম্বনা যেন তাদের ভাগ্য হয়ে উঠেছে। কর্তৃপক্ষ এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করলে তারা এই দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পাবে। প্রত্যাশা করবো সবার ঈদ যেন অত্যন্ত নিরাপদ ও আনন্দময় হয়। ঈদুল আযহা সবার জন্য বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ। সবার জন্য এই শুভকামনা ও ঈদের শুভেচ্ছা।