সুন্দরগঞ্জে তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই
২৮ আগস্ট ২০২৩, ১১:৫৬ এএম

তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত তিন দিনের চেয়ে পানি আরও ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে গিয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এবং টানা ভারী বর্ষনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উপর দিয়ে তিস্তার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। সুন্দরগঞ্জে পয়েন্টে এখনও পানি বিপদ সীমা ছুঁই ছুঁই করছে।
উপজেলা কৃষি ও মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে ১০০ হেক্টর জমির রোপা আমনসহ খরিফ-২ মৌসুমের বিভিন্ন প্রজাতের ফসল ডুবে গেছে। পাশাপাশি শতাধিক পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর, তারাপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। চরাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্ধি পরিবার সমুহ অনেকে উচু স্থানে এবং আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
শুক্রবার বিকাল হতে উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে চরের নিচু এলাকা সমুহ প্লাবিত হয়ে পড়ে। উপজেলার হরিপুর পয়েন্টে বেসরকারিভাবে পানি মাপক যন্ত্রের মিটার স্কেলে দেখা গেছে বর্তমানে পানি বিপদ সীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৬টি ইউনিয়নের পাঁচ হাজার পরিবারের ঘরের ভিতরে ১০ সেন্টিমিটার হতে ১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে। পানিবন্ধি পরিবারগুলো পরিজন নিয়ে টং, মাচা এবং চকির উপরে বসবাস করছে। অনেকে গৃহপালিত পশুপাখি স্বজনের বাড়িতে সরিয়ে নিয়েছে। বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের তথ্যমতে কমপক্ষে পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। তবে সরকারিভাবে এর পরিমান অনেক কম।
হরিপুর ইউনিয়নের চরচরিতাবাড়ি গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, তার ঘরের মধ্যে ২০ সেন্টিমিটার পানি ঢুকে পড়েছে। রোপা আমনসহ ২ বিঘা জমির ফসল ডুবে গেছে। যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে করে আগামি ২৪ ঘন্টার মধ্যে চরের সবগুলো বাড়িতে পানি ঢুকে পড়বে।
কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের আকবর আলী জানান, পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক পরিবার চরের উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে, অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। তিনি জানান, গৃহপালিত পশুপাখি নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। সরকারি ভাবে এখন পযন্ত কোন প্রকার বরাদ্দ দেয়া হয়নি।
তারাপুর ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার বিকাল হতে তিস্তায় ব্যাপক হারে পানি বাড়ছে। তারাপুরে কমপক্ষে ৫০০ পরিবার ইতিমধ্যে পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। এছাড়া ২০ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে ও ২৫টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। চরে এখন নৌকা ছাড়া চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। চরের মানুষ বিশেষ করে গরু, ছাগল, হাস-মুরগি নিয়ে বিপাকে রয়েছে।
কাপাসিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মন্জু মিয়া জানান, তার ইউনিয়নে ২ হাজার পরিবার পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। তবে সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সহায়তা প্রদান করা হয়নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে পানিবন্ধি পরিবারগুলোর তালিকা সংগ্রহ করে তা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে তা বিতরণ করা হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার রাশিদুল করিম জানান, বিভিন্ন ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিত্বে জানা গেছে, প্রায় ১'শ ৮৯ হেক্টর জমির ফসল ডুবে গেছে। আগামি ১০-১৫ দিনের মধ্যে পানি সরে গেলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম হবে।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার মোহাম্মদ নূর-এ আলম জানান, তিস্তায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানিবন্ধি পরিবারের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বরাদ্দ পেলে তা বিতরণ করা হবে।