আক্কেলপুরে ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে মাইকিং
১৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৪:১৫ পিএম

ছবি- সংগৃহীত।
জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর আঞ্চলিক এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে সেচ ও শিল্পের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির প্রবণতা বেড়েই চলেছে। চলতি নভেম্বর মাসের গত ১৭ দিনে ২৩ টি সেচ ও শিল্পের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে একই রাতে চারটি স্থানের ১২ টি ও গতকাল রাতে ৩টি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এঘটনায় জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের পক্ষ থেকে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
ট্রান্সফরমার চুরি রোধে সেচ পাম্প ও শিল্প সংযোগের মালিকদের নিজ দায়িত্বে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা নিতে জয়পুরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে ব্যাপক মাইকিং করে জনসচেতনা মূলক বাড়ানোর জন্য প্রচার করা হয়েছে। আক্কেলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতার এই মাইকিং করা হয়।
জয়পুরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আক্কেলপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ কার্যালয়ের আওতায় ৬৬১ টি গভীর-অগভীর নলকূপ রয়েছে। প্রতিটি গভীর-অগভীর নলকূপে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার রয়েছে। প্রতি বছরই ফসলি মাঠের গভীর-অগভীর নলকূপের বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরি হচ্ছিল। চলতি বছরের গত অক্টোবর মাসে ১০ টি ও নভেম্বর মাসের গত ১৭ দিনে ২৩ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। এরমধ্যে গত ৮ নভেম্বর দিবাগত রাতে পৃথক চারটি স্থানের ১২ টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ওই রাতে রায়কালী ইউনিয়নের মুনজিয়া গ্রামের মতিয়ার রহমান ও ফরিদ উদ্দিনের গভীর নলকূপের ছয়টি ট্রান্সফরমার, তিলকপুর ইউনিয়নের কৃষ্ণকোলা গ্রামের আবু বক্করের চালকলের তিনটি ও একই ইউনিয়নের শ্যামপুরগ্রামের আজিজুর রহমানের তিনটি ও গতকাল (১৭ নভেম্বর) ক্ষেতলাল থানা মামুদপুর ইউনিয়ন রসুলপুর, আছরাঙ্গা পুকুরের নদীর পশ্চিম পাড়ের সেনাবাহিনী সদস্য মোঃ নজরুল ইসলামের গভীর নলকূপের তিনটি ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছে। ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনায় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির পক্ষে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে।
পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জানান, সেচ ও শিল্ল সংযোগে ৫ কেভি, ১০ কেভি, ১৫ কেভি ও ২৫ কেভি ক্ষমতা সম্পূর্ণ ট্রান্সফরমার লাগানো হয়। ৫ কেভির ট্রান্সফরমারের দাম ৪২ হাজার ৬০০ টাকা,১০ কেভির ট্রান্সফরমারের দাম ৬৭ হাজার টাকা, ১৫ কেভি ট্রান্সফরমারের দাম ৭৯ হাজার টাকা ও ২৫ কেভি ট্রান্সফরমারের দাম এক লাখ ৮ হাজার টাকা। প্রথম দফার চুরি হলে গ্রাহকে সমিতিতে অর্ধেক দাম দিতে হয়। দ্বিতীয় দফায় চুরি হলে গ্রাহকে সমিতিতে পুরো দাম দিয়ে ট্রান্সফরমার কিনতে হয়। চুরি যাওয়া প্রতিটি টান্সফরমারে ১২ থেকে ১৫ কেজি তামার তার থাকে। চোরেরা প্রতিকেজি তামার তার ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি করে। পুলিশ বিভিন্ন সময় ট্রান্সফরমার চোরদের গ্রেপ্তার করেছে। চোরদের কাছ থেকে ট্রান্সফরমারের তামার তারও জব্দ করেছে। তবে ট্রান্সফরমার চুরি বন্ধ হচ্ছে না। এখন মাঠের আমন ধান মাড়াই কাজ চলছে। এসময় মাঠ ফাঁকা থাকে। চোরের এই সময়টাকে কাজে লাগায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন জন গভীর ও অগভীর নলকূপের মালিক বলেন, দুই বছর আগে আমাদের গভীর-অগভীর নলকূপের ট্রান্সফরমার চুরি হয়েছিল। পরের বছর আবারও ট্রান্সফরমার চুরি হয়। দুই বারে আমাদের প্রায় এক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা নিজেরাই এখন ট্রান্সফরমার পাহারা দিচ্ছি।
গভীর নলকূপের মালিক সেনাবাহিনীর সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, গতকাল (১৭ নভেম্বর) রাত্রিতে কিছু দুষ্কৃতী তিনটি ট্রান্সফমার খুলে ভিতর থেকে তামার কয়েল চুরি করে নিয়ে যায়। ট্রান্সমিটার খুঁজে পাওয়ার জন্য আইনি সহায়তা চাচ্ছি।
জয়পুরহাট পল্লীবিদুৎ সমিতির আক্কেলপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আব্দুর রহমান আজ দুপুরে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে আক্কেলপুর উপজেলায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা বেড়েছে। শুধু নভেম্বর মাসের গত ১৭ দিনে ২৩ টি ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা ঘটেছে। সমিতির পক্ষে থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। পুলিশের একার পক্ষে ট্রান্সফরমার চুরি রোধ করা সম্ভব নয়। সেচ ও শিল্প সংযোগের মালিকদের নিজ দায়িত্বে ট্রান্সফরমার পাহারার ব্যবস্থা করতে সমিতির পক্ষ থেকে এলাকায় ব্যাপক মাইকিং করে সচেতন করা হয়েছে।
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর রহমান বলেন, ট্রান্সফরমার ও মিটার চুরির ঘটনায় থানায় মামলা রয়েছে। ইতিমধ্যে ট্রান্সফরমার ও মিটার চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার চলমান রয়েছে। এই চক্রের সদস্যদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যহত রয়েছে।