ব্লু-ইকোনমি হতে পারে ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ট্রামকার্ড
১৯ অক্টোবর ২০২৩, ০১:২৮ পিএম

ছবি- প্রতিদিনেরচিত্র বিডি।
একবিংশ শতাব্দীতে এসে যে কটি বিষয় বিশ্ববাসীর আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো ব্লু- ইকোনমি। যার জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপি দিন দিন ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে ব্লু-ইকোনমি বিষয়টি সবার ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ফোকাস বিন্দুতে পরিণত হয়েছে, বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নই। তাই দেশেও ব্লু-ইকোনমি নিয়ে সচেতনতা তৈরি হয়েছে ও বিভিন্ন ধরনের কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হচ্ছে। ব্লু- ইকোনমি হচ্ছে সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। যেখানে সামুদ্রিক পরিবেশ কিংবা সামুদ্রিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে আলোচনা করা হয়। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর বিভিন্ন ধরনের সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। সমুদ্র থেকে আহরণকৃত যেকোনো সম্পদ দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হলে তাই ব্লু-ইকোনমির আওতায় পড়বে।
১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ভবিষ্যতের অর্থনৈতির রূপরেখা প্রণয়নের জন্য একটি টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব মডেল হিসেবে ব্লু-ইকোনমির ধারণা দেন। পৃথিবীর তিন-চতুর্থাংশ বিস্তৃত পানির বিচিত্র সম্পদ ব্যবহার করে ভবিষ্যতের অর্থনীতির রূপরেখা তুলে ধরেন তিনি। বিশ্বের অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ব্লু- ইকোনমি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ২০১২ সালে রিও ডি জেনিরিও, ব্রাজিলে টেকসই উন্নয়ন শীর্ষক জাতিসংঘ সম্মেলনে প্রথম ব্লু-ইকোনমি বিষয়টি উত্থাপিত হয়। ভৌগোলিকভাবে আমাদের দেশের অবস্থানও অফুরন্ত সম্পদের ভান্ডার বঙ্গোপসাগরের তীরে। বঙ্গোপসাগরের সুনীল অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে সমুদ্র বিজয় অভিযাত্রার সূচনা করেন। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে স্বাধীনতার মাত্র তিন বছরের মাথায় তিনি বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন, যা পরবর্তীতে গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রæয়ারি ১৯৭৪ সালে।
সমুদ্র সম্পদকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশের বেকারত্ব দূর হবে, সেইসঙ্গে অর্থনীতির চাকার গতি আরও বৃদ্ধি পাবে। দেশের স্থলভাগে যে পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান, তার প্রায় সমপরিমাণ (৮১ শতাংশ) সম্পদ সমুদ্রের তলদেশে রয়েছে। বঙ্গোপসাগর বাংলাদেশের একমাত্র সমুদ্রসীমা এবং বিশ্বের বৃহতম উপসাগর যা সারা বিশ্বে ‘বে অব বেঙ্গল’ নামে পরিচিত। বঙ্গোপসাগরের সীমানা নিয়ে মায়ানমার ও ভারতের সাথে আমাদের দেশের দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ২০১২ সালে মায়ানমারের সঙ্গে ও ২০১৪ সালে ভারতের সাথে সমুদ্র সীমা বিরোধ নিষ্পতি হয়। ফলাফল হিসাবে যুক্ত হয় মোট ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার টেরিটোরিয়াল সমুদ্র এলাকায় বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব, অধিকার ও সার্বভৌমত্ব, আরও অবাক করার বিষয় এই যে, যার আয়তন প্রায় আরেকটি বাংলাদেশের সমান। সমুদ্র বিজয়ের ফলে ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরণের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার। এই বিশাল জলরাশির অভ্যন্তরে যেমন লুকিয়ে আছে অপার রহস্য অপরদিকে ঠিক তেমনিভাবে লুকায়িত আছে বাংলাদেশের নীল অর্থনীতির এক অপূর্ব সম্ভাবনা। আর অপার সম্ভাবনাময় এই নীল অর্থনীতি পাল্টে দিতে পারে আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতির চেহারা। সমুদ্র অর্থনীতির উপাদানগুলো হলো: খনিজ সম্পদ, জ্বালানি, পানি সম্পদ, পর্যটন শিল্প, জাহাজ শিল্প, পরিবহন শিল্প, মৎস্য সম্পদ ইত্যাদি। বঙ্গোপসাগরকে ঘিরে রয়েছে অপার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প। আমাদের রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরপুর ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত, যা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকত। আয়ের মূল অংশ আসে পর্যটন ও বিনোদন খাত থেকে, যার পরিমাণ ২৫ শতাংশ। যা দিন দিন আরও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও মৎস্য খাত হতে আয়ের পরিমাণ ২২ শতাংশ, যাতায়াত হতে আয়ের পরিমাণ ২২ শতাংশ এবং গ্যাস ও তেল উত্তোলন থেকে আয়ের পরিমাণ ১৯ শতাংশ। প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাংলাদেশি মাছ শিকারের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং ৬০ লাখ বাংলাদেশি সমুদ্রের পানি থেকে লবণ তৈরি ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে জড়িত। দেশের প্রায় ৩ কোটি মানুষ তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সমুদ্রের ওপর নির্ভরশীল। বঙ্গোপসাগর হলো প্রাণিজ সম্পদের এক অফুরন্ত রত্নভান্ডার। মৎস্য সম্পদ, সামুদ্রিক প্রাণী, সামুদ্রিক শৈবাল, সামুদ্রিক আগাছা, লতা, গুল্ম, ইত্যাদির অফুরন্ত ভান্ডার আমাদের এই নীল সমুদ্র। আমাদের সমুদ্রে ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ২০ জাতের কাঁকড়া, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৬০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ৭ প্রজাতির কচ্ছপ, ১০ প্রজাতির ডলফিন, ৩ প্রজাতির তিমি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, এবং প্রায় ২০০ প্রজাতির সি উইড।
সামুদ্রিক মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১-২২সালে আহরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৫৯৪ টন এবং সঠিক ব্যবস্থাপনায় বছরে ৮০ লাখ টন পর্যন্ত মাছ ধরার সুযোগ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে পাওয়া যায় এমন মাছের মধ্যে টুনা মাছ হলো সবচেয়ে সুস্বাদু এবং আন্তর্জাতিক বাজারে যার মূল্য ও চাহিদা দুটোই আকাশচুম্বী। উক্ত মাছ সঠিকভাবে আহরণের মাধ্যমে বিদেশি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব যা আমাদের দেশের জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে,একইসাথে আরও একধাপ সামনে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে। আমাদের দেশে সি আরসিম ও সি কুকুমবার খাদ্য হিসাবে গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও দেশের বাইরে খাদ্য হিসাবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, যা সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করার মাধ্যমে হরেক রকমের প্রসাধনী সামগ্রী তৈরি করা সম্ভব। উক্ত প্রসাধনী সামগ্রী শৈবাল থেকে অর্গানিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরী হওয়ায় যা অত্যন্ত স্বাস্থ্যসম্মত ও একইসাথে তার আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য অত্যাধিক। বঙ্গোপসাগরে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বিপুল পরিমাণ সামুদ্রিক আগাছা। এসব আগাছা যথাযথভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করার মাধ্যমে বিভিন্ন রোগের জন্য কার্যকরী ঔষধ তৈরী করা সম্ভব, যা আমাদের ঔষুধ শিল্পে বিপ্লব ঘটাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে দেশের ভিতর তৈরী হওয়া ঔষধ একদিকে যেমন দেশের সাধারণ জনগণের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে মধ্যে থাকবে, ঠিক তেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ঔষধ রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও আমাদের সমুদ্রে থাকা সামুদ্রিক আগাছা মানবদেহের জন্য খুব উপকারী ও পুষ্টিকর। সামুদ্রিক আগাছার মধ্যে ইসপিরুলিনা সবচেয়ে মূল্যবান, সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা দিন দিন ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীন, জাপান, এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মানুষ এগুলোকে সুস্বাদু খাবার হিসাবে গ্রহণ করে। আধুনিক প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটিয়ে যথাযথ ভাবে প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে বিদেশি রপ্তানি করে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। এতে আমাদের জাতীয় অর্থনীতি সমৃদ্ধির পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। যা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। দেশের সমুদ্র হলো অফুরন্ত সামুদ্রিক সম্পদের ভান্ডার। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অপ্রাণিজ সম্পদ হলো: তেল, গ্যাস, চুনাপাথর, প্রবাল ইত্যাদি। খনিজ সম্পদের মধ্যে রয়েছে প্রায় ১৭ ধরনের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট সমৃদ্ধ খনিজ বালি। যার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে জিরকন, মোনাজাইট, ম্যাগনেটাইট, কায়ানাইট, রুটাইল, সিলিমানাইট, গ্যানেট ইত্যাদি। এদের মাঝে মূল্যমানের দিক দিয়ে মোনাজাইট সবার চেয়ে এগিয়ে। এই তেজষ্ক্রিয় পদার্থ পারমাণবিক বোমা তৈরিতে এবং পারমাণবিক চুল্লিতে শক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় উক্ত খনিজ সম্পদসমূহ দেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা সম্ভব হলে একদিকে যেমন আমদানি খরচ বহুলাংশে হ্রাস পাবে, অপরদিকে তেমনিভাবে জাতীয় অর্থনীতির সমৃদ্ধির পথেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনের দেয়া তথ্যমতে, দেশের সৈকতের বালিতে মোট খনিজের মজুদ ৪৪ লাখ টন এবং সমৃদ্ধ খনিজের পরিমাণ প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার টন, যা সৈকতের ১৩টি ভিন্ন ভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। এছাড়াও সমুদ্রের তলদেশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের আকরিক। ম্যাঙ্গানিজ নডিউল, ফসফরাস ডেপোজিত এবং ক্লেসার ডেপোজিট নামক আকরিক। এসব আকরিক যথাযথ প্রক্রিয়ায় পরিশোধন করার পর পাওয়া যাবে কপার, জিঙ্ক, কোবাল্ট, লেড, মলিবডেনামসহ ইত্যাদি দুর্লব ধাতু। উপযুক্ত প্রক্রিয়া অনুসরণ করার মাধ্যমে উৎপাদিত ধাতুসমূহ জাহাজ নির্মাণ ও রাসায়নিক কারখানায় ব্যবহার করা যাবে। যা আমাদের জাহাজ শিল্প ও রাসায়নিক কারখানা তথা দেশর অর্থনীতিতে নতুন এক গতির সঞ্চার করবে। দেশের সমুদ্রের তলদেশে প্রায় ৩০ থেকে ৮০ মিটার গভীরে সিমেন্ট শিল্পে ব্যবহৃত অত্যাবশকীয় কাঁচামাল ‘ক্লে’র সন্ধান পাওয়া গেছে। যদি সঠিক পরিকল্পনা মাফিক উত্তোলন করা সম্ভব হয় তাহলে, দেশের সিমেন্ট শিল্পে বৈপ্লবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হবে। সমুদ্রের অগভীর ও তলদেশ মূল্যবান ধাতু ইউরেনিয়াম ও থোরিয়াম এর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। বর্তমানে বিশ্ববাজারে এই ধাতুগুলোর কিরূপ চাহিদা ও মূল্যমান তা সহজে অনুমেয়। ভারত ও মায়ানমার থেকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে অর্জিত সমুদ্র সীমার অভ্যন্তরে ২৬টি ব্লক রয়েছে। নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা ইজারা পরিচালনা করা হলে এসব ব্লক থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব।
বর্তমানে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে সমুদ্র সম্পদের অবদান ৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৬ শতাংশ। দেশের সৈকতের অভ্যন্তরে যে পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান রয়েছে, তা সুপরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করা গেলে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতি বছর আড়াই লাখ কোটি মার্কিন ডলার আয় করার সুবর্ণ সম্ভাবনা রয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১৪ নম্বর ধারায় সামুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি পূরণের লক্ষ্যে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের প্রতি সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়নের বিকল্প কিছু নেই। সমুদ্র সম্পদের এই অপার রত্নভান্ডার আমাদের দেশের অধিক জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে ও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সক্ষম কিন্তু সিংহভাগ সমুদ্র সম্পদ এখনও অনাবিষ্কৃত ও অব্যবহৃত। তাই এখন সময় এসেছে সমুদ্র সম্পদের পরিকল্পিত ব্যবহার করে দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ অসংখ্য বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ কাজে লাগানোর। সমুদ্র অর্থনীতি কেবলমাত্র সমুদ্রকেন্দ্রিক অর্থনীতির প্রসার ঘটায় ব্যাপারতা মোটেও তেমন নয়, একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি হ্রাসকরণের মধ্য দিয়ে পরিবেশবান্ধব নবদিগন্তের উন্মোচন করতে পারে। তবে আশার কথা এই যে, বর্তমান সরকার ব্লু ইকোনমির প্রতি সুদুর প্রসারী পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি নজর দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ বা ডেল্টা প্লান-২১০০ মহাপরিকল্পনায় সমুদ্র অর্থনীতিকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। সমুদ্র সম্পদকে ব্যবহার করতে প্রয়োজন নতুন পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা। যেমন ইকোসিস্টেম বেসড ম্যানেজমেন্ট (ইবিএম) বা মারিন স্পেটাল প্লানিংয়ের (এমএসপি) মতো কর্মসূচির বাস্তবায়ন। পরিশেষে বলা যায় যে, দেশে ব্লু ইকোনমির ধারণা সবার মাঝে ছড়িয়ে গেলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, বেকারত্ব দূরসহ সর্বোপরি লিঙ্গ সমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা রূপকল্প ২০৪১ বা বাংলাদেশ ভিশন ২০৪১ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ট্রামকার্ড হিসাবে কাজ করবে।
শিক্ষার্থী
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
ত্রিশাল, ময়মনসিংহ